সুচরিতা সেন চৌধুরী: দাবা এখন তাঁর জীবনে দ্বিতীয় জায়গায় দাঁড়িয়ে। সেই ছোট্টবেলা থেকেই তো দাবা খেলছে, এখন আর উপভোগ করছেন না তেমনভাবে। হবি হিসেবেই দাবাকে সঙ্গে রাখতে চান বাংলার গ্র্যান্ডমাস্টার কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়। স্বপ্ন দেখেন বিদেশের মাটিতে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হওয়ার। সেই লক্ষ্যেই পড়াশোনা করতে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন গত বছরই। তার পর কেটে গিয়েছে একটা বছর। এক বছর পরই দেশে ফিরে যেন সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধে হচ্ছে। পরিবেশ, মানসিকতা, ব্যবহার— সব মিলে আমেরিকার থেকে যে অনেক আলাদা। তাও বাংলার প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছিলেন চেস ফর ইয়ুথ খেলতে। তাঁর জীবনে যে দাবা আর মুখ্য জায়গায় নেই তা প্রমান হয়ে গেল খেলার ফলে। চ্যাম্পিয়ন হতে পারলেন না। চ্যাম্পিয়ন হলেন এক কৌস্তুভ।
চেস ফর ইয়ুথের মঞ্চ শেষদিন জমে উঠল কৌস্তভ বনাম কৌস্তুভ লড়াইয়ে। না, এই দু’জন এদিন মুখোমুখি হননি কোনওভাবেই। কিন্তু গ্র্যান্ডমাস্টার কৌস্তভকে পিছনে ফেলে চেস ফৱ ইয়ুথের সিনিয়র প্রতিযোগিতা জিতে নিলেন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কৌস্তুভ। গত বছরই ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার হয়েছেন। এবার স্বাভাবিকভাবেই সামনে একটাই লক্ষ্য গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া। তার মধ্যেই চেস ফর ইয়ুথে সিনিয়র পর্বে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেন কৌস্তুভ। কৌস্তভ আর কৌস্তুভের মধ্যে শুধু যে নামের মিল তা নয় রয়েছে আরও অনেক মিল। দু’জনেরই বাবা নেই। মা-ছেলের সংসারে দাবা একটা বড় আশ্রয়। যদিও কৌস্তভের স্বপ্ন থেকে দাবা এখন বিদায় নিয়েছে। আর কৌস্তুভ আজও দাবা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ারই স্বপ্ন দেখেন।
ম্যাচ শেষে গ্র্যান্ডমাস্টার কৌস্তভের মুখে শোনা গেল ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কৌস্তুভের প্রশংসাও। বলছিলেন, ‘‘আগের মতো সেই প্রতিযোগিতা আর নেই। আমি যখন এর আগে খেলেছি তখন দীপ্তায়নদা, মিত্রাভরা খেলত। একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হত। এখন সেটা নেই। তবে কৌস্তুভ কুন্ডু ভাল খেলছে।’’ সেই কৌস্তুভ কুন্ডু বলছেন, ‘‘আমি প্রথম সিনিয়র পর্যায়ে জিতলাম। এর আগে বয়স ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় চেস ফর ইয়ুথ জিতেছি। এবার তো গ্র্যান্ডমাস্টার কৌস্তভও খেলেছে। আমার অভিজ্ঞতা বেশ ভাল।’’ বাবার হাতেই দাবায় হাতেক্ষরী। তার পর সেখান থেকে অ্যালেখাইন চেস ক্লাবে পেশাগত শিক্ষার পর এখন নিজেই অনুশীলন করেন।
বলছিলেন, ‘‘অ্যালেখাইনের পর আর কোথাও আলাদা করে অনুশীলন করি না। নিজেই করি। এর সঙ্গে শেখাই। যাতে আমারও অনুশীলন হয়ে যায়। সামনেই বিদেশে টুর্নামেন্ট রয়েছে। সেখানে যাব।’’ কিন্তু বিদেশে টুর্নামেন্টে তো অনেক খরচ সেটা কীভাবে জোগার হওয়ার প্রশ্নে আইএম কৌস্তুভ জানিয়ে দিলেন এখন আর বাড়ির সাহায্য তিনি নেন না। বরং টুর্নামেন্ট খেলে যা রোজগার হয় সেটা দিয়েই আবার পরের টুর্নামেন্ট খেলতে যান। সঙ্গে কোচিং তো রয়েছেই।
তবে গ্র্যান্ডমাস্টার কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায় তাঁর জায়গায় স্পষ্ট, টাকাটা জরুরী। ‘‘হেরে গেলে টাকা না পেয়ে হতাশা আসে। সেটা আমি হতে দিতে চাই না আর। তাই পড়াশোনা করে চাকরী করাটাই লক্ষ্য। বিদেশে যদি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিংয়ে ভাল চাকরী পেয়ে যাই তাহলে ওখানেই থেকে যাব। না পেলে এখানে এসে আইআইএম থেকে পরবর্তী পড়াশোনা করব। চাকরীর চেষ্টা করব।’’ লক্ষ্য অবশ্যই বিদেশে থেকে যাওয়া। সঙ্গে অনেক বেড়ানো। বিশেষ করে ইউরোপে। কৌস্তুভ কিন্তু স্বপ্ন দেখছেন গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার