সুচরিতা সেন চৌধুরী: শহরে ইতিমধ্যেই বসে গিয়েছে জমজমাট দাবার আসর। এই মুহূর্তে কলকাতায় না আছে ফুটবল না ক্রিকেট। যেন সেই সময়টাকেই পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে এই দাবা। আর হবে নাই বা কেন? এই দাবার আসর মাতাতে কলকাতা শহরে আগামী কয়েকদিনের জন্য ঘাঁটি গেড়েছেন বিশ্ব দাবার পাশাপাশি দেশের সেরা দাবাড়ুরা। ১৩ নভেম্বর ২০২৪ থেকে শুরু হয়ে এই টুর্নামেন্ট শেষ হবে ১৭ নভেম্বর ২০২৪। পুরুষ, মহিলা, র্যাপিড ও ব্লিৎজ চলবে পাশাপাশি।
শুক্রবার দাবার হ্যাংওভার কাটাতে ব্যাডমিন্টন কোর্টে পৌঁছে গিয়েছিলেন স্বয়ং প্রজ্ঞানানন্ধা। বোনকে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘ সময় ডবলস গেমসও খেললেন। ছিলেন দিব্যা দেশমুখও। মানসিক ফিটনেসের পাশাপাশি শারীরিক ফিটনেসও যে দাবায় গুরুত্বপূর্ণ তা যেন এতেই প্রমাণ করে দিলেন ভারতের সেরা দাবা তারকারা। প্রতিবছরই প্রায় কলকাতায় এই টুর্নামেন্ট খেলতে আসেন তাঁরা। তাই কলকাতার প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে ভাললাগাও তৈরি হয়ে গিয়েছে তাঁদের। দিব্যার ভাল লাগে কলকাতার সন্দেশ তো প্রজ্ঞার রসোগোল্লা।
দিব্যা বলছিলেন, ‘‘আমার কলকাতার সন্দেশ পছন্দ। এখানে এসে হোটেলেই সেটা পেয়ে গিয়েছি।’’ অন্যদিকে প্রজ্ঞা বলছিলেন, ‘‘কাল বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলাম, সেখানে রসোগোল্লা খেয়েছি।’’ আসল লক্ষ্য যদিও চ্যাম্পিয়নশিপ। কঠিন লড়াইয়ের আগে তাই একটু হালকা মেজাজে শুক্রবারের সন্ধেটা কাটালেন তাঁরা।
বেশিদিন আগের কথা নয় দাবা অলিম্পিয়াডে ভারতের ঘরে এসেছিল জোড়া সোনা। ভারতের পুরুষ ও মহিলা, দুই দলই দাবা অলিম্পিয়াড থেকে সোনা জিতে দেশে ফিরেছিলেন। সেই মহিলা দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন দিব্যা। বলছিলেন, ‘‘দেশের জন্য সোনা জিতে ফেরাটাই বড় মোটিভেশন। তাও আবার দুই দলই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এখন স্বপ্ন গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া, নিজের সেরাটা দেওয়া।’’ তবে তিনি দাবাকে পেশাদার পর্যায়ে নিয়ে যাবেন কি না তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি সেটাও জানিয়ে দিলেন।
প্রজ্ঞা অবশ্য কোনও কিছু নিয়েই খুব বেশি চিন্তিত নন। তাঁর কাছে যেমন চলছে তেমনই চলুক। কার্লসেনের সঙ্গে যতই নিজের সেরাটা দিক না কেন, কার্লসেনকে অনেকটাই এগিয়ে রাখছেন। বলছিলেন, ‘‘একটা দুটো ক্ষেত্রে আমি ভাল করেছি। আমাদের কিছু গেম খুব উত্তেজক জায়গায় গিয়েছে ঠিকই কিন্তু কার্লসেন অনেক এগিয়ে।’’
পাশাপাশি তাঁর ভাল লাগছে, ভারতে দাবার প্রতি সমর্থন অনেক বেড়েছে দেখে। বলছিলেন, ‘‘অনেক সমর্থন বেড়েছে ভারতীয় দাবায়। মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। মানুষ দাবা খেলা দেখতে আসছে। ফ্যানরা আমাদের কাছে আসছে, আমাদের সঙ্গে কথা বলছে। দেখে খুব ভাল লাগছে। কলকাতায় অনেক দাবা ফ্যান আছে, তারা পুরো ম্যাচ দেখে, ম্যাচ শেষে অটোগ্রাফ নেয়, ছবি তোলে।’’
তিনি এও মেনে নিচ্ছেন, বিশ্বনাথন আনন্দ না থাকলে ভারতীয় দাবার ছবিটা এমনটা হত না। তিনি বলছেন, ‘‘অবশ্যই, আনন্দ স্যার না থাকলে দাবা ভারতে এই পর্যায়ে পৌঁছত না। আমরা সবাই এভাবে দাবা খেলতাম না। আমার মনে হয় তাঁর জন্যই ভারতীয় দাবা এখানে রয়েছে।’’ পাশাপাশি তিনি গুকেশকে নিয়েও আশাবাদী। এবার তিনি খেলবেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ডিং লিরেনের বিরুদ্ধে। যে কারণেই এই টুর্নামেন্টে যোগ দেননি গুকেশ। প্রজ্ঞা বলছিলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস ও এখানে সেরাটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। ডিং খুব শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। আমিও মুখিয়ে রয়েছি এই লড়াই দেখার জন্য। আমার বিশ্বাস ও ভাল করবে।’’
এর সঙ্গেই নিজের গোলের কথাও জানিয়ে দিলেন তিনি। বলেন, ‘‘আমি চাই দাবা বিশ্বের শীর্ষ জায়গাটায় পৌঁছতে। অনেক টুর্নামেন্ট খেলতে এবং নিজের সেরাটা দিতে।’’
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার