অলস্পোর্ট ডেস্ক: বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ২০২৪-এর বক্সিং ডে টেস্টের তৃতীয় দিন লেখা থাকবে ২১ বছর বয়সী এক ভারতীয় যুবকের নামে। তিনি নীতীশ কুমার রেড্ডি। গ্যালারিতে তখন আবেগের বিস্ফোরণ। ক্রিজে ছেলে আর গ্যালারিতে বাবা। লাইভ সম্প্রচারের ক্যামেরা কখনও মাঠের মিস্টার রেড্ডিকে ধরছেন আবার কখনও গ্যালারির। দু’দিকে টেনশনের দুই ছবি। একজন ভারতীয় টেস্ট প্লেয়ারের জার্সি পরে প্রথম সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে আর এক সেই সেঞ্চুরির পথের পথিকৃত। একজন নীতীশ রেড্ডি আর এক নীতীশ রেড্ডির বাবা, যিনি ছেলের ক্রিকেট কেরিয়ার তৈরি করতে নিজের সব কিছু বিসর্জন দিয়ে দিয়েছিলেন। এক বাবা-ছেলের লড়াইয়ের সাফল্য দেখল অ্যাডিলেড।
ব্যাটের উপর হেলমেট রেখে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলেন একহাত। তার পর একবার কপালে হাত ছোঁয়ালেন। উঠে দাঁড়িয়ে জরিয়ে ধরলেন সতীর্থ ব্যাটার মহম্মদ সিরাজকে। ততক্ষণে ডাগআউটে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন তাঁর সিনিয়র, জুনিয়র সতীর্থ থেকে ভারতীয় সিনিয়র ক্রিকেট দলের সাপোর্ট স্টাফ। আর উল্টোদিকে রেড্ডি পরিবারের গ্যালারিতে আবেগাশ্রু। ছেলে পেড়েছে। যে স্বপ্ন সেই ১১ বছর বয়স থেকে দেখতে শুরু করেছিল রেড্ডি পরিবার, এদিন যেন সেই গোলার্ধ সম্পূর্ণ হল। তবে নীতীশের জন্য, এটা সবে শুরু। এখনও অনেকটা পথ চলতে হবে, যেখানে সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থতাও আসবে। সেই সব কিছুকে সঙ্গে নিয়েই দীর্ঘদিন ভারতীয় ক্রিকেটে টিকে থাকার লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।
হাফ সেঞ্চুরি করার পর অবশ্য অন্য সেলিব্রেশন দেখা গিয়েছিল নীতীশ রেড্ডির। পুষ্পা স্টাইলে ব্যাট চালিয়েছিলেন চোয়ালের নিচ দিয়ে। বিসিসিআই-এর একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার লড়াইয়ের কাহিনী শুনিয়েছিলেন নীতীশ। শনিবার অ্যাডিলেডে তাঁর ব্যাট থেকে সেঞ্চুরি আসার পর সেই আবেগ শোনা গিয়েছিল সুনীল গাভাস্কারের গলায়ও, যে আবেগে ভাসতে দেখা গিয়েছিল নীতীশের বাবাকে।
নীতীশ বলেন, “আমার জন্য আমার বাবা চাকরী ছেড়ে দিয়েছিল। আমার গল্পে অনেক বলিদানের কাহিনী রয়েছে। একদিন আমি দেখলাম বাবাকে কাঁদতে, কারণ ছিল আমাদের আর্থিক দুরবস্থা। সেদিন আমার মনে হয়েছিল এভাবে আমাদের চলতে পারে না। তখন আমি সিরিয়াস হই। আমি যখন আমার প্রথম জার্সি তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলা সেদিন তাঁর চোখে মুখে খুশি দেখেছিলাম।“ সেই নীতীশ রেড্ডি অস্ট্রেলিয়া সফরের দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন একদম নবাগত হিসেবে। আর সেই সফরেই তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারেন।
প্রথম তিনটি টেস্টে রেড্ডির ব্যাট থেকে গুরুত্বপূর্ণ ৪০+ ও ৩০+ রান এসেছে। এদিন যখন তিনি ব্যাট করতে নামেন তখন ২৮৩ রানে পিছিয়ে ভারত। চলে গিয়েছে সাত উইকেট। যে কোনও সময় ফলোঅনের মুখে পড়তে পারে দল। সেখান থেকে সুন্দর-রেড্ডি জুটির ১২৭ রান ফলোঅন তো বাঁচালোই সঙ্গে দিয়ে গেল অনেকটা ভরসা। ভরসা ভবিষ্যতের ভারতীয় দলের জন্য। বিরাট, রোহিতদের পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি হাল ধরার জন্য। এবার একটু একটু করে জায়গা ছাড়ার সময় এসেছে।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার