সুচরিতা সেন চৌধুরী: বাংলা বছরের প্রথম দিন গুমড়ে থাকল প্রকৃতি। যার ফলে কিনা জানা নেই, ছুটির আবহেও ফাঁকাই থাকল ইডেনের গ্যালারি। কিন্তু মনে হয়েছিল উল্টোটাই হবে। এক তো রবিবার তার উপর পয়লা বৈশাখ। ধরেই নেওয়া হয়েছিল ভড়ে যাবে ইডেনের গ্যালারি। কিন্তু হতাশ করল ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালি। যদিও কলকাতার ক্রিকেট আবেগকে উসকে দিতে ঘরের মাঠে টানা পাঁচ ম্যাচের প্রথম ম্যাচে জয়ে ফিরল কলকাতা নাইট রাইডার্স। এদিন কথা মতই সবুজ-মেরুন জার্সিতে খেলতে নেমেছিল লখনউ সুপার জায়ান্ট। কিন্তু সেই রঙ তাদের খুব একটা সঙ্গ দিল না শুরুতে। শুরু থেকেই উইকেট পতনের ধাক্কা সামলে শেষ পর্যন্ত লখনউ থামল ১৬১-৭-এ। যে লক্ষ্যে পৌঁছতে কলকাতা সময় নিল ১৫.৪ ওভার। আট উইকেটে লখনউকে হারিয়ে জয়ে ফিরল কলকাতা।
এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলকাতা অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার। লখনউ প্রথম ধাক্কাটা খেল ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই। বৈভব অরোরার প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে শেষ পর্যন্ত উইকেটটা চলে এল কলকাতার ঝুলিতে। এই ওভারের প্রথম বলেই রিভিউ নিলেও তা কাজে লাগেনি। নষ্ট হয় রিভিউ। জোড়া রিভিউ নষ্ট করে কলকাতা। আট বলে মাত্র ১০ রান করে আউট হন ওপেনার কুইন্টন ডে কক। অরোরার বলে সুনীল নারিনকে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তিনি। তিন নম্বরে নামা দীপক হুডা ফেরেন মাত্র আট রানে। স্টার্ক বল হাতে শুরুটা ভাল না করলেও হুডাকে ফিরিয়ে কলকাতাকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন।
উল্টোদিকে তখনও একাই লড়াই করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন লখনউ অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। কিন্তু দলকে বড় রানে নিয়ে যেতে ব্যর্থ তিনিও। ২৭ বলে তিনটি বাউন্ডারি ও দু‘টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩৯ রান করে আউট হন তিনি। আন্দ্রে রাসেলের বলে রমনদীপ সিংকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রাহুল। রমনদীপের নেওয়া এই ম্যাচে দীপক হুডার ক্যাচটা আইপিএল ২০২৪-এর সেরা ক্যাচের মধ্যে থাকতেও পারে। এই ম্যাচের দ্বিতীয় সেরা ক্যাচটা অবশ্য নিয়ে নিলেন ফিল সল্ট। যখন বরুণ চক্রবর্তীর বলে উইকেটের পিছনে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে একহাতে ধরেন মার্কাস স্টইনিসের ক্যাচ। ১০ রান করেন তিনি। ২৯ রানে ফেরেন আয়ুষ বাদোনি।
৪৫ রান করে ফিরলেন নিকোলাস পুরান। সাত রানে আউট হন অর্শদীপ খান। শেষ ওভারের প্রথম ও শেষ বলে দু’জনকেই ফেরালেন মিচেল স্টার্ক। এদিন কলকাতার হয়ে হর্ষিত রানা ছাড়া সকলেই উইকেট পেলেন। মিচেল স্টার্ক তিন, বৈভব অরোরা, সুনীল নারিন, বরুণ চক্রবর্তী ও আন্দ্রে রাসেল একটি করে উইকেট নিলেন। ১৬২ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুতে সাময়িক ধাক্কা খায় কলকাতা দল। পর পর সুনীল নারিন ও অঙ্গকৃশ রঘুবংশীর উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় নাইটরা। সেখান থেকেই খেলার হাল ধরার চেষ্টা করেন ওপেনার ফিল সল্ট ও অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই কলকাতার হয়ে ওপেন করছেন সুনীল নারিন ও ফিল সল্ট। কোনও ম্যাচে সাফল্য এসেছে আবার কখনও ব্যর্থতা। তবে ফিল সল্টের পর পর ব্যর্থতা প্রশ্ন তুলছিল তাঁর দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়েও। কিন্তু মেন্টর গৌতম গম্ভীর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, খেলাটা ব্যক্তিগত নয় দলগত। দেখতে হবে সবাই মিলে কেমন পারফর্ম করছেন। তার পর দিনই ফর্মে ফিরলেন সল্ট। উইকেটের পিছনে যেমন দুরন্ত ক্যাচ ধরলেন তেমনই বল হাতে হাঁকালেন হাফসেঞ্চুরি।
দলগত ২২ রানে কলকাতার প্রথম উইকেট তুলে নেন মহসিন খান। স্তইনিসকে ক্যাচ দিয়ে ছয় রানে ফেরেন সুনীল নারিন। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মাত্র সাত রান করে আউট হন অঙ্গকৃশ রঘুবংশী। কলকাতার রান তখন ৪২। এই উইকেটও তুলে নেন মহসিন খান। ৪২-২ থেকে সল্টের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন শ্রেয়াস। যখন সল্ট একদিকে রান তোলার চেষ্টায় তখন উল্টোদিকে উইকেট ধরে রাখতে সচেষ্ট হন অধিনায়ক। যার ফল ৭৬ বলে ১২০ রানের অপরাজিত জুটি ক্রিজে থাকল ৬৬ মিনিট, শেষ রান পর্যন্ত। একবার রান নিতে গিয়েও না নেওয়ায় শ্রেয়াসের উপর রেগেও গেলেন সল্ট। তবে দলের জয়ের কাহিনীর শেষ পাতাটা লিখতে কোনও অসুবিধে হল না এই জুটির। ৪৭ বলে ১৪টি বাউন্ডারি ও তিনটি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৮৯ রানে অপরাজিত থাকলেন ফিল সল্ট। অন্যদিকে ৩৮ বলে ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকলেন শ্রেয়াস আয়ার।
লখনউকে সব থেকে বেশি বিপদে ফেলল জোড়া ক্যাচ ফেলা। কথায় আছে ক্যাচ মিস, ম্যাচ মিস। এদিন তাদের ক্ষেত্রে সেটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার