অলস্পোর্ট ডেস্ক: কেকেআর ড্রেসিংরুমে আরও একটা ট্রফির জায়গা করে নেওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ১১৩ রানে আটকে দেওয়ার পর কলকাতার সামনে ছিল মাত্র ১১৪ রানের চ্যালেঞ্জ। যা ছিল আইপিএল ফাইনালের ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোরের রেকর্ড। ক্রিকেট মাঠে যখন ঝড় তুললেন কেকেআর বোলাররা তখন দেশের আর এক প্রান্তে রীতিমতো তাণ্ডব চালাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। সৌভাগ্যবশত এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েনি চেন্নাইয়ে। যদিও আইপিএল ২০২৪ ফাইনালের আগের দিন বৃষ্টির জন্য অনুশীলন করতে পারেনি কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু রবিবার ফাইনালের উপর প্রকৃতি সদয়ই ছিল। বরং প্রবল গরম আর আর্দ্রতা কিছুটা ভোগাল সবাইকে। যদিও এই পুরো মরসুমে এর থেকে অনেকবেশি গরমে কলকাতায় দুপুরবেলা খেলে গিয়েছে কেকেআর। তাই সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শেষ হাসি হাসল কলকাতা। এই মরসুমে তৃতীয়বার কলকাতার কাছে হারল হায়দরাবাদ, এবার ফাইনালে। সঙ্গে কেকেআর-এর ঘরে এল তৃতীয় আইপিএল ট্রফি।
১১৪ রানের লক্ষ্যে এদিন কলকাতার হয়ে ওপেন করতে নেমেছিলেন সুনীল নারিন ও গুরবাজ। পুরো মরসুমে দারুণ ছন্দে থাকা সুনীল নারিন একাই এই রানে দলকে পৌঁছে দিতে পারতেন গুরবাজকে সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু মরসুমের শেষ ম্যাচটা ব্যাট হাতে ভাল গেল না তাঁর। মাত্র ছয় রান করে প্যাট কামিন্সের বলে শাহবাজ আহমেদকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে গেলেন তিনি। অন্যদিকে, গুরবাজের জন্য মরসুমের দ্বিতীয় ম্যাচই ছিল ফাইনাল। কারণ তাঁর আগে পর্যন্ত উইকেটের পিছনে ও ওপেনিংয়ে দারুণ সাফল্য পেয়েছিলেন ফিল সল্ট। তিনি দেশে ফিরতেই শিকে ছেড়ে গুরবাজের। অল্প সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি এই আফগান উইকেটকিপার-ব্যাটার। প্রথম কোয়ালিফায়ারে উইকেটের পিছনে ও ব্যাট হাতে দলকে ভরসা দেওয়ার পর বাকি ছিল ফাইনাল।
সুনীল প্যাভেলিয়নে ফিরতেই তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার। তিনিও দলের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন প্রথম থেকেই। এদিনও শুরু থেকেই বিধ্বংসী মেজাজে পাওয়া গেল তাঁকে। ভুবনেশ্বকে পর পর বলে ছক্কা হাঁকিয়ে আর একবার বার্তা দিয়ে রাখলেন ভারতীয় দলের নির্বাচকদের উদ্দেশে। বোলাররাই কাজটা করে দিয়ে গিয়েছিলেন কেকেআর-এর হয়ে। বাকিটা শেষ করলেন ব্যাটাররা। টপ অর্ডারই জয়ের রান তুলে দিল। একদিকে যখন ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার অন্যদিকে তখন যোগ্য সঙ্গত ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজের। পাওয়ার প্লে-তেই এক উইকেটে ৭২ রানে পৌঁছে গিয়েছিল নাইটরা। জিততে হলে তখন দরকার ছিল ৪১ রান। হাতে ছিল ১৪ ওভার।
এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হায়দরাবাদ অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কিন্তু বড় রানে পৌঁছতে ব্যর্থ কমলা বাহিনী। আইপিএল ফাইনালের ইতিহাসে সব থেকে কম রানের রেকর্ড লেখা হল তাদের নামে। ১৮.৩ ওভারে মাত্র ১১৩ রান করে অল-আউট হয়ে গেল সানরাইজার্সরা। অভিষেক শর্মা ২, ত্রাভিস হেড ০, রাহুল ত্রিপাঠী ৯, আইদেন মারক্রাম ২০, নীতিউশ কুমার রেড্ডি ১৩, হেনরিচ ক্লাসেন ১৬, শাহবাজ আহমেদ ৮, আব্দুল সামাদ ৪, জয়দেব উনাদকট ৪ ও প্যাট কামিন্স ২৪ রান করে আউট হন। কলকাতার হয়ে তিন উইকেট নেন আন্দ্রে রাসেল। দুটো করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক, হর্ষিত রানা, সুনীল নারিন। একটি করে উইকেট নেন বৈভব অরোরা ও বরুণ চক্রবর্থী।
কেকেআর বোলারদের তৈরি করে যাওয়া মঞ্চে বাজিমাত করে গেলেন দুই ব্যাটার ভেঙ্কটেশ আইয়ার ও গুরবাজ। কেকেআর শেষ দিন পর্যন্ত প্রমান করে দিল একজন না পারলে তাদের কাছে আরও একজন তৈরি আছে। যে কারণে সল্টের বিদায়ে দলের মধ্যে কোনও হাহাকার দেখা যায়নি। যেভাবে শুরুতেই এদিন সুনীল নারিন আউট হয়ে গেলেও তার প্রভাব পড়েনি দলের ব্যাটিংয়ে। এদিন হায়দরাবাদ ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংও রীতিমতো ধরাশায়ী হল কেকেআর ব্যাটারদের কাছে। ১০০ রানের গণ্ডি পার করেই ফিরলেন গুরবাজ। ৩২ বলে ৩৯ রান করলেন পাঁচটি বাউন্ডারি ও দু‘টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। শাহবাজ আহমেদের বলে এলবিডব্লু আউট হলেন তিনি।
চার নম্বরে নেমে খুব একটা বেশি চাপ নিতে হল না অধিনায়ক শ্রেয়াসকে। কারণ তখন জিততে হলে দরকার মাত্র ১২ রান। বাউন্ডারি হাঁকিয়েই শুরু করলেন তিনিও। উল্টোদিকে তখন হাফ সেঞ্চুরির অপেক্ষায় আর এক আইয়ার। এই আইয়ার জুটিই প্রথম কোয়ালিফায়ারে বাজিমাত করেছিল। এদিন ম্যাচ শেষ করল দলকে চ্যাম্পিয়ন করে। ২৬ বলে ৫২ রান করে অপরাজিত থাকলেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার, হাঁকালেন চারটি বাউন্ডারি ও তিনটি ওভার বাউন্ডারি। অন্যদিকে ৩ বলে ৬ রান করে অপরাজিত থাকলেন শ্রেয়াস আইয়ার। ১০.৩ ওভারে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ১১৪ রান তুলে ৮ উইকেটে হায়দরাবাদকে হারিয়ে আইপিএল ২০২৪ চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার