অলস্পোর্ট ডেস্ক: তিনি যখন ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেন, তখন সবাই ভেবেছিলেন, এ বার হয়তো আইসিসি ট্রফির খরা কাটবে। কারণ, তার আগের কয়েক বছরে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ও ‘এ’ দলের হয়ে তিনি যে সাফল্য দেখিয়েছিলেন, তা আশা জাগিয়েছিল সমর্থকদের মনে। কিন্তু বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের কোচ হওয়ার পরে যেন সেই ‘জাদুকাঠি’ বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতেই রেখে এসেছেন রাহুল দ্রাবিড় ।
দ্রাবিড়ের পূর্বসূরি রবি শাস্ত্রীর কোচিংয়ে ৪২ মাস ধরে টেস্টের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে দু’বার অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট সিরিজ়ে হারিয়েছিল তারা। কিন্তু আইসিসি প্রতিযোগিতায় ট্রফি জিততে না পারার কারণেই চাকরি যায় শাস্ত্রীর। দ্রাবিড়েরও পরীক্ষা ছিল সেই আইসিসি ট্রফি জয়। দায়িত্ব নেওয়ার পরে শুরুতেই নিউ জ়িল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ় জেতে ভারত। দলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় পান দ্রাবিড়। তাঁর প্রথম বড় পরীক্ষা হয় দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ়ে। প্রথম টেস্ট জেতার পরেও সিরিজ়ে হারতে হয় ভারতকে। তার পরেই টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন কোহলি। তিন ফরম্যাটেই অধিনায়ক হন রোহিত।
শাস্ত্রীর অধীনে ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ়ে ২-১ এগিয়ে ছিল ভারত। কোভিডের কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া বার্মিংহ্যাম টেস্ট পরে হয়। তখন দ্রাবিড় কোচ। সেই ম্যাচও হেরে যায় ভারত। ফলে সিরিজ় ড্র হয়। এমনকি বাংলাদেশের কাছেও ১-২ ফলে এক দিনের সিরিজ় হারতে হয় ভারতকে।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ে হারের ধাক্কা কাটতে না কাটতেই খেলতে হয় পর পর তিনটি আইসিসি প্রতিযোগিতা। প্রথমে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে লজ্জার হার। তার পরেই এশিয়া কাপ। সেখানেও সুপার ফোরে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে ছিটকে যায় দল। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যর্থতা কাটানোর সুযোগ ছিল। বিশেষ করে তার আগে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি জেতায় এগিয়ে থাকার কথা ছিল ভারতের। কিন্তু কোথায় কী? প্রথম দিনই খেলার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ২০৯ রানে হারতে হয়েছে কোহলি, রোহিতদের।
গত বছর টেস্ট দলের উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহাকে দ্রাবিড় জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁকে আর ভাবনায় রাখছে না ম্যানেজমেন্ট। অথচ তখনও ক্রিকেটীয় দক্ষতায় বিশ্বের সেরা উইকেটরক্ষক ছিলেন ঋদ্ধি। দ্রাবিড় চেষ্টা করলেন শ্রীকর ভরতকে তুলে আনার। কিন্তু তিনি না উইকেটের পিছনে ভাল, না সামনে। ভরত যে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন তাতে তাঁর ব্যাটিং ঋদ্ধির থেকেও খারাপ। আইপিএলেও ভরতের আগে ঋদ্ধিকে সুযোগ দেয় গুজরাত। অথচ দ্রাবিড় রয়েছেন ভরত নিয়েই। ঋদ্ধির পাশাপাশি ইশান্ত শর্মাকেও একই বার্তা দেন দ্রাবিড়। তিনি তুলে আনার চেষ্টা করেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে। সেই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ। কারণ, চোটে দীর্ঘ দিন মাঠের বাইরে প্রসিদ্ধ। তা ছাড়া বুমরা চোট পাওয়াতেও সমস্যায় পড়েছেন ভারতীয় কোচ।
দ্রাবিড় যখন ছোটদের দায়িত্বে ছিলেন তখন বড়দের দলের জন্য ক্রিকেটারদের একটি সাপ্লাই লাইন তৈরি করেছিলেন। অর্থাৎ, প্রধান দলের কোনও প্লেয়ার চোট পেলে তাঁর একাধিক বিকল্প তৈরি থাকত। গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় চতুর্থ টেস্টে ভারতীয় দলের অন্তত ৬ জন প্লেয়ার চোটে ছিটকে গিয়েছিলেন। প্রধান বোলারদের কেউ ছিলেন না। তার পরেও টেস্ট খেলেছিল ভারত। জিতেওছিল। কিন্তু যে দিন থেকে দ্রাবিড় ভারতীয় দলের কোচ হয়েছেন, ক্রিকেটারদের সাপ্লাই লাইন কোথাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নইলে কেন আইপিএলে চোটে থাকা উমেশ যাদবকে খেলাতে হবে টেস্ট বিশ্বকাপে। বাকি কোনও জোরে বোলারকে কি তৈরি করা যায়নি!
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার