সুচরিতা সেন চৌধুরী: একটা সেঞ্চুরির জবাব আর একটা সেঞ্চুরি। কলকাতার সুনীল নারিনের জবাব ছিলেন রাজস্থানের জোস বাটলার। মাথা ঠান্ডা রেখে যেভাবে রান তাড়া করে দলকে জেতালেন তাতে আইপিএল-এর ইতিহাসে সব থেকে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটাও করে ফেলল রাজস্থান এদিন, তবে যৌথভাবে। তবে জোস বাটলারের সেরা হিসেবে লেখা থাকবে এই ইনিংস। যেভাবে শেষ বল পর্যন্ত পরিকল্পনা আর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট করে গেলেন তাতে যোগ্য দল হিসেবেই এদিন জয় তুলে নিল রাজস্থান রয়্যালস। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৯ রান। সেখান থেকে দুই উইকেটে জিতে লিগ টেবলের শীর্ষ স্থানটাও ধরে রাখল রয়্যালসরা।
প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছিল গ্যালারি হয়তো এদিনও খালি থেকে গেল। কিন্তু পয়লা বৈশাখের ফাঁকা গ্যালারির হতাশাকে কাটিয়ে রাত বাড়তেই ভরে গেল ইডেন গার্ডেন্সের গ্যালারি। এক তো সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন, অফিস, স্কুল, কলেজ সব খোলা—তার মধ্যেই কলকাতা বনাম রাজস্থান ম্যাচ দেখতে গ্যালারি জমিয়ে দিলেন বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা। অন্যদিকে কিং খান তো ছিলেনই বাকি কাজটা করে দেওয়ার জন্য। বক্সের ব্যালকনি থেকে তিনি মাঝে মাঝে ধরা পড়লেন লাইভের ক্যামেরায় বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে। গত কয়েকদিন ধরেই কলকাতায় রয়েছেন তিনি। লখনউ ম্যাচেও তিনি হাজির ছিলেন শহরে। আর তাঁর সামনেই সেঞ্চুরি হাঁকালেন সুনীল নারিন। তবে তাঁর সেঞ্চুরির জবাব যে ড্রেসিংরুমে তৈরি হচ্ছিল তা কে জানত। চলতি আইপিএল-এ দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে ফেললেন জোস বাটলার। কলকাতার গ্যালারিকে এদিন হতাশ হয়েই ফিরতে হল বাড়ি। হতাশ হয়েই আপাতত কলকাতা ছাড়তে হবে কিং খানকে।
মঙ্গলবার ইডেনে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে গত ম্যাচেই দলকে জেতানো ইনিংস খেলা ফিল সল্ট ফিরে য্যান প্যাভেলিয়নে। ১৩ বল খেলে করেন মাত্র ১০ রান। তবে তখনও ক্রিজে ছিলেন আর এক ওপেনার সুনীল নারিন। অনেক ম্যাচেই দেখা গিয়েছে কলকাতা এক ওপেনার না পারলে আর এক ওপেনার সেই কাজটি করে দেন। এদিনও কলকাতার রানকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন সুনীলই।
তিন নম্বরে নামা অঙ্গকৃশ রঘুবংশী কিছুটা সঙ্গ দিলেন। ১৮ বলে পাঁচটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩০ রান করেন তিনি। উল্টোদিকে তততক্ষমে ব্যাট হাতে দাপট শুরু করে দিয়েছেন সুনীল নারিন। কিন্তু অঙ্গকৃশ আউট হওয়ার পর কিছুটা ধাক্কা খেল কেকেআর ব্যাটিং। কারণ অধিনায়ক আগের ম্যাচে ফিল সল্টের সঙ্গে দলকে ভরসা দিলেও এদিন সেটা পারলেন না। মাত্র ১১ রান করে আউট হয়ে গেলেন। এই মরসুমে শ্রেয়াস আইয়ারকে এখনও ব্যাট হাতে চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি। এদিনও মাত্র ১১ রান করে আউট হয়ে গেলেন। পাঁচ নম্বরে নেমে ১৩ রানে ফিরলেন আন্দ্রে রাসেল।
একদিক থেকে যখন প্যাভেলিয়নে ফেরার প্রতিযোগিতা অন্যদিকে তখন একাই ঘর সামলালেন সুনীল নারিন। আইপিএল ২০২৪-এর পঞ্চম সেঞ্চুরিটি এল তাঁরই ব্যাট থেকে। এর আগে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন জোস বাটলার, রোহিত শর্মা, ত্রাভিস হেড ও বিরাট কোহলি। ৪৯ বলে ১১টি বাউন্ডারি ও ছ‘টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি নিশ্চিত করলেন তিনি। যখন আউট হলেন তখন নামের পাশে ৫৬ বলে ১০৯ রান। বোল্টের বলে বোল্ড হলেন। বলের গতি এতটাই বেশি ছিল যে স্টাম্পের সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে গেল স্টাম্প মাইকও। সেটা ঠিক করতে বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকল খেলা।
এর পর ৮ রানে ফিরলেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার। রাজস্থানের হয়ে দুটো করে উইকেট নিলেন আভেশ খান ও কুলদীপ সেন। একটি করে উইকেট ট্রেন্ট বোল্ট ওযুজবেন্দ্র চাহালের। ২০ রানে রিঙ্কু সিং ও ১ রানে রমনদীপ সিং অপরাজিত থাকলেন। ২০ ওভারের শেষে কলকাতা ২২৩-৬। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় রাজস্থান ব্যাটিং। কিন্তু শেষ হাসিটা হাসল তারাই।
এদিন রাজস্থানের হয়ে ওপেন করতে নেমে ৯ বলে ১৯ রান করেই আউট হয়ে যান যশস্বী জয়সওয়াল। তিন নম্বরে নেমে অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনও দলকে ভরসা দিতে পারেননি। তিনি করেন মাত্র ১২ রান। এর পর ওপেনার জোস বাটলারের সঙ্গে কিছুটা সঙ্গ দেন রিয়ান পরাগ। যদিও সেই চেনা বিধ্বংসী রিয়ানকে এখানে পাওয়া যায়নি। ১৪ বলে ৩৪ রান করে ফিরে যান তিনি। এর পর ধ্রুব জুড়েল ২, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৮, শিমরন হেটমেয়ার ০ রানে ফিরে যান প্যাভেলিয়নে। একাই লড়াই চালিয়ে যান বাটলার। এর মধ্যেই ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন বাটলার। পাওয়েলকে সঙ্গে নিয়ে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন। পর পর রাসেল ও নারিনকে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি মেরে কলকাতাকে শেষবেলায় এসে চাপে ফেলে দেন দুই ব্যাটার। তখনও কলকাতার আশা জিইয়ে ছিল।
শেষ পর্যন্ত সুনীল নারিনের বলেই ১৩ বলে ২৬ রান করে আউট হন রোভমান পাওয়েল। কোনও রান না করে রান আউট হন ট্রেন্ট বোল্ট। তখনও ক্রিজে বাটলার। এই বাটলার যে ব্যতিক্রম ঘটাতে পারেন সেটা সকলেরই জানা। কিন্তু যেভাবে মেপে ব্যাট করলেন শেষ বল পর্যন্ত তা থেকে পরিষ্কার আরও অনেক খেল দেখাবেন তিনি এই মরসুমে। এক বলে এক রান যখন দরকার তখন এক রান নিয়েই ম্যাচ জেতালেন বাটলার। ৬০ বলে ১০৭ (৯টি বাউন্ডারি ও ৬টি ওভার বাউন্ডারি) রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। ২০ ওভারে রাজস্থান ২২৪-৮। কেকেআর-এর হয়ে জোড়া উইকেট তুলে নেন হর্ষিত রানা, বরুণ চক্রবর্থী ও সুনীল নারিন। একটি উইকেট নেন বৈভব অরোরা।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার