Saturday, November 8, 2025
No menu items!
Google search engine
Homeক্রিকেটজন্মদিনে ‘‌কল্পতরু’‌ সৌরভ, দলে চান কুলদীপকে

জন্মদিনে ‘‌কল্পতরু’‌ সৌরভ, দলে চান কুলদীপকে

মুনাল চট্টোপাধ্যায়:‌ এত খোলামেলা ‘‌কল্পতরু’‌ মেজাজে সৌরভ গাঙ্গুলিকে খুব কমই পাওয়া যায়। মঙ্গলবার ছিল ‘‌প্রিন্স অব ক্যালকাটা’‌ সৌরভের জন্মদিন। ৫৩ বছর বয়সটা যে একটা সংখ্যা মাত্র যেটা তাঁর ঝকঝকে উপস্থিতি, ব্যক্তিগতপূর্ণ অথচ সকলের সঙ্গে আত্মীয়সুলভ মেলামেশাতেই ধরা পড়ল সিএবির উদ্যোগে তাঁর জন্মদিনের কেক কাটার সমারোহে।

ইডেন গার্ডনসের ক্লাব হাউসের একতলায় খেলোয়াড়দের মাঠে যাওয়ার প্রবেশপথের মুখটা সাজানো হয়েছিল সৌরভের জন্মদিন পালনের জন্য। টেবিলে রাখা ছিল ক্রিকেট মাঠ ও পিচের আদলে একটি সুদৃশ্য কেক। সিএবি কর্তা, ক্রিকেট অনুরাগী, বিভিন্ন ক্লাবের প্রতিনিধি ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছার মাঝে কেক কাটলেন সৌরভ। সচিব নরেশ ওঝা, কোষাধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তী সহ অন্যান্যদের তোলা ‘‌হ্যাপি ব্যর্থ ডে ‌সৌরভ’‌ তোলা ধ্বনির মাঝে। সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গাঙ্গুলি, যিনি আবার সৌরভের দাদা, তিনি একটুকরো কেক ভাইয়ের মুখে পুরে দিলেন। পাল্টা দাদাকেও কেক খাওয়ালেন সৌরভ তুমুল করতালির মাঝে। প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেটার শ্যামা দে শ’‌র জন্মদিনও পালিত হয় ওই মঞ্চে।

সৌরভ ছিলেন লন্ডনে। সেখান থেকে দুবাই হয়ে কলকাতা ফিরেছেন। স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলির সঙ্গে জন্মদিনের কেক কাটার উৎসব পালনের পর কলকাতায় মঙ্গলবার সারাদিন কোথাও না কোথাও কেক কাটার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়েছে সৌরভকে। প্রিয়জনের পাশাপাশি অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ফুলের তোড়া দিয়ে। সিএবিতেও হাজির হয়েছিলেন অনেকে। কেউ কেউ এনেছিলেন কেকও। একসময় কেক কেটে ও খেয়ে ক্লান্ত সৌরভ হাসতে হাসতে বলেই ফেললেন, ‘‌আর পারছি না। কেক খেতে খেতে মুখটা মিস্টি হয়ে গেছে।’‌

সৌরভ অভিভূত সিএবির এই আয়োজনে। বলেন, ‘‌ এই ধরনের অসাধারন আয়োজনের জন্য সিএবির সবাইকে ধন্যবাদ। জুনিয়র থেকে সিনিয়র লেভেল পর্যন্ত ক্রিকেট খেলার স্মৃতি ইডেন গার্ডনসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সিএবি, ইডেন গার্ডনসের স্টেডিয়াম, মাঠ, আমার কাছে সবসময়ই স্পেশাল।’‌ মঙ্গলবারে নিরামিষ খেয়ে কাটান সৌরভ পারিবারিক নিয়ম মেনে। তাই এদিন আর বড়রকম কোনও আয়োজন বাড়িতে হয়নি খাওয়া দাওয়ার। ওটা বুধবারের জন্য তোলা রয়েছে।

এত আনন্দযজ্ঞের মাঝে কিন্তু মেয়ে সানাকে খুব মিস করছেন সৌরভ। বলেই দিলেন, ‘‌ এই প্রথমবার আমার জন্মদিনে সানা নেই। ইংল্যান্ডে তিনদিন থাকার সময় দু’‌দিন ভারতের খেলা দেখেছি।। সানার সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। তবে জন্মদিনে সানা কাছে থাকলে আরও ভাল লাগত। কী আর করা যাবে?‌’‌ সেই মুহূর্তে কিংবদন্তী ক্রিকেটার, প্রশাসক সৌরভের থেকে অনেক বেশি করে বাবা সৌরভের আবেগটা ফুটে উঠল তাঁর কথায়।

নিজের জন্মদিনে কল্পতরুর মেজাজে ছিলেন সৌরভ। প্রচারমাধ্যম তাঁকে ঘিরে ধরতে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিলেন সাবলীলভাবে, কোনওরকম তাড়াহুড়ো বা বিরক্তি প্রকাশ না করে। প্রশ্ন ছিল, এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে ভারত সিরিজে সমতা ফিরিয়ে ১-‌১ করেছে। শোনা যাচ্ছে, লর্ডসে পরের টেস্ট ইংল্যান্ড লাইভলি পিচের পথে হাঁটবে?‌ এটা কতটা সাহায্য করবে ভারতকে, নাকি ঝামেলায় ফেলবে?‌ সৌরভের স্পষ্ট জবাব,‘‌ লাইভলি পিচ হলে, ভারতের জন্য সেটা অ্যাডভান্টেজ। আমাদের ব্যাটাররা ইংল্যান্ডের তুলনায় অনেক বেশি পাওয়ারফুল। আমাদের বোলারদের ২০ উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা আছে। হার্ড আর লাইভলি উইকেট দিলে সেই সুবিধা বেশি করে নিতে পারবে আমাদের বোলাররা।’‌ সৌরভ অবশ্য মনে করেন, বাকি তিনটি টেস্টে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবে মানসিক ও দক্ষতায় ভারত এগিয়ে থেকেই নামবে বাকি ম্যাচগুলোয়।

আকাশদীপের আগুন ঝরানো বোলিং নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সৌরভ বলেন,‘‌ খুব খুশি। এমন অনেক কথা শুনি, এ বাঙালি নয়, ও এরাজ্যের নয়। এগুলো মনে কষ্ট দেয়। আমি যেমন বাংলার ছেলে, তেমন মুকেশ ,আকাশদীপরা তো বাংলারই গর্ব। এর আগে শামি বাংলায় খেলে উঠে এসেছে। ওদের লড়াইকে কুর্নিশ জানানো উচিত সকলের। দেশের হয়ে মাঠে সেরা দিচ্ছে, জেতাচ্ছে, এর থেকে বড় আর কী হতে পারে?‌’‌

শুভমান গিলের ব্যাটে অসাধারন সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে কী বলবেন?‌ একজন সফল ও ডাকাবুকো অধিনায়ক হিসেবে পরিচিত সৌরভের মুখে শুভমানের প্রশংসা। প্রতিক্রিয়া,‘‌ আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, প্রথম টেস্টের পরই টুইট করেছিলাম। বলেছিলাম, শুভমান ইজ দ্য বেস্ট ক্যাপ্টেন উইথ ব্যাট। তাই আমি ওর এই পারফরমেন্সে অবাক নই। ওর সামনে বিরাট কেরিয়ার পড়ে আছে। এখনও অনেকদূর যেতে হবে। কেরিয়ার একটা নতুন দিশা পাবে। এখন একটা হনিমুন পিরিয়ড চলছে। যতদিন যাবে চাপ বাড়বে। পরের তিনটি টেস্টেই বাড়বে। সেই প্রেসারটা ওকে হ্যান্ডেল করতে হবে।’‌

একটা সময় ভারতীয় ক্রিকেট দলকে ব্যাটসম্যান নির্ভর থাকতে হত বেশি করে। পরবর্তী সময়ে কপিলদেব জমানা থেকে ব্যাটারদের পাশাপাশি বোলারদের একটা বড় ভূমিকা নিতে দেখা গেছে ভারতের সাফল্যে। এবার যেমন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ টেস্টে বুমরা না থাকলেও আকাশদীপ, সিরাজরা ম্যাচ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। এটা কতটা সন্তোষজনক?‌ সৌরভের মতে, ‘‌ আমি একটা সাক্ষাতকারে বলেছি, ভারতীয় ক্রিকেট এমন একটা জায়গা, যেখানে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। প্রতিটা জেনারেশনে প্লেয়ার এসেছে। জায়গা কখনও খালি পড়ে থাকেনি। গাভাস্কার ছিল, কপিল দেব ছিল। তেন্ডুলকার হয়েছে, দ্রাবিড় হয়েছে, কোহলি হয়েছে, কুম্বলে হয়েছে। পরবর্তী সময় শামি, বুমরা এসেছে। এখন শুভমান গিল, আকাশদীপ, মুকেশ, সিরাজ রাজ করেছে। এর পরও অন্য কেউ আসবে। এটা ভারতীয় ক্রিকেটের আসল শক্তি।’‌

ভারতীয় দলের ফার্স্ট ইলেভেনে কুলদীপকে কি খেলানো উচিত নয়?‌ সৌরভের পরিষ্কার জবাব, ‘‌ অবশ্যই। আমি তো মনে করি ওয়াশিংটন সুন্দর বা নীতিশ রেড্ডির জায়গায় দলে কুলদীপকে অবশ্যই দরকার। উইকেট যদি পরের ম্যাচগুলোতে গ্রিন হয়, তাহলে বুমরা দলে ফিরলে ৪ জন ফার্স্ট বোলার নিয়ে খেলতে হতে পারে। জাদেজা ভালই ব্যাট করে, করছেও। তাই কুলদীপকে রাখা উচিত দলে।’‌

বাকি ৩ টেস্টে ভারতীয় দলের জন্য কী বার্তা বা টিপস থাকবে আপনার?‌ সৌরভের উত্তর, ‘‌আমি আগেই বলেছি, এখনও বলছি, ভারত প্রথমে ব্যাট করে ৪০০ রান তুললে ম্যাচ জিতবেই। আর বেন স্টোকস তো আছেই, টসে জিতে ভারতকে আগে ব্যাট করতে পাঠিয়ে সেই লক্ষ্যপূরণের জন্য।’‌

বায়োপিকের কাজ চলছে জোরকদমে, সৌরভের নানা ব্যস্ততার মাঝে। এমনও শোনা যাচ্ছে, সিএবির পরবর্তী সভাপতি তিনি হতে পারেন। এমনকি ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচের পদেও তাঁকে দেখা যেতে পারে। কিন্তু এসব নিয়ে প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে গেলেন সৌরভ হাসিমুখে। জানালেন, সময় বলবে, কী হবে।

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন:ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments