মাহিকা ভট্টাচার্য: আর হাতে মাত্র কয়েকটা দিন। জোর কদমে শুরু হয়ে গিয়েছে আইপিএলের প্রস্তুতি। প্রতি বছরের মতো, এ বছরও কিছু প্লেয়ারের বিদায় ঘণ্টা বাজতে চলেছে। কিন্তু তাঁরা কাঁরা, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা না গেলেও একটা আগাম ধারণা করা যেতেই পারে। সব কিছুরই শেষ হওয়ার সময় থাকে। দলে পুরনোদেরও যেমন প্রয়োজন, তেমন পুরনোদের হাত ধরে নতুন প্রজন্মের এগিয়ে আসাটাও জরুরী। যদিও বয়স দেখে সব সময় সব কিছুর বিচার করা যায় না। তবুও কিছু ক্ষেত্রে সময়ের কাছে খেলাকে হার মানতেই হয়। পারফরম্যান্সের ওপর, পরের বছরের নিলামের ওপরও অনেক তারকারা অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। পূর্বে খেলতে না পারলে আইপিএল চলাকালীনও অবসর ঘোষণা করেছেন অনেক ক্রিকেটারই। এ বছরই শেষ আইপিএল হতে পারে বেশ কয়েক জন বিদেশি তারকাদের।
ফাফ দুপ্লেসি— ২০১২ সাল থেকে আইপিএল খেলছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটার ফাফ দুপ্লেসি। দেখতে দেখতে ১২ বছর পার করে দিলেন ৩৯ বছর বয়সী ওপেনার। দু’বার চ্যাম্পিয়নও বটে। প্রথম থেকে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেললেও এখন তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের অধিনায়ক। তিনিও ধোনির মতোই চেন্নাইয়ের খারাপ সময় দেখেছেন। ২০১৬ এবং ২০১৭-তে তিনি রাইসিং পুণে সুপারজায়েন্টের হয়ে খেলেছেন। ২০১৮-তে তিনি আবার চেন্নাই সুপার কিংসে ফিরে আসেন। ২০১৮ এবং ২০২১-এর আইপিএলে চেন্নাইয়ের সাফল্যের পিছনে দুপ্লেসির অবদান অনস্বীকার্য। যদিও ২০২২-এর বড় নিলামে সাত কোটি টাকায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলে যোগ দেন তিনি। সে বছর থেকে তাঁর নেতৃত্বেই দলটি খেলছে। আইপিএলে তাঁর চার হাজারেরও বেশি রান রয়েছে। শতরান না করলেও ৩৩টি অর্ধশত রান করেছেন তিনি। তাঁর সর্বোচ্চ অপরাজিত ৯৬।
২০১৮-তে দুপ্লেসির কাঁধে ভর করে চেন্নাই ফাইনালে উঠেছিল। তিনি একা হাতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারিয়েছিলেন। তাঁর খেলা অন্যতম সেরা ইনিংস ছিল সেটি। প্রথম প্লে অফে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ১৪০ রান করতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয় চেন্নাইকে। ৬২ রানে ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। ফাফ একা হাতে ম্য়াচটি বের করেছিলেন। তিনি ৪২ বলে ৬৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।
২০২১-এর আইপিএল ছিল তাঁর সেরা সময়। ১৬টি ম্যাচ খেলে ৬৩৩ রান করেছিলেন তিনি। তবে ওই একই দলে তাঁর সতীর্থ রুতুরাজ গায়কোয়াড় ৬৩৫ রান করে কমলা টুপি পান।
২০২২-এ বিরাট কোহলি অধিনায়কত্ব থেকে সরে আসার পর, দক্ষিণ আফ্রিকার এই ক্রিকেটার ব্যাঙ্গালোরের অধিকায়ক হন। সে বছর আরসিবি প্লে অফে উঠলেও, ফাইনালে জায়গা করতে পারেনি। ২০২৩ আইপিএল-এ আটটি অর্ধশত রান-সহ ৭৩০ রান করেছিলেন দুপ্লেসি। কমলা টুপির দৌঁড়ে সেবারও দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তিনি।
২০২১-এ তিনি আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। এখন শুধু খেলেন টি২০ লিগ।
মঈন আলি— ২০১৮ থেকে আইপিএল খেলছেন মঈন আলি। তাঁর প্রথম দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। ২০২১ থেকে তিনি চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলেন। মোট ৫৯টি ইনিংস খেলে ১০৩৪ রান করেন। তাঁর সর্বোচ্চ রান ৯৩। গড় ২২.৪৮ এবং স্ট্রাইক রেট ১৪৩.০২। তিনি ৫৯ ম্যাচে ৭১০ বল করে ৮২২ রান দেন। ৩৩টি উইকেট আছে তাঁর ঝুলিতে। ইকনমি রেট ৬.৯৫।
৩৬ বছর বয়সী ইংল্যান্ডের অল রাউন্ডার ২০২৩-এ আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। প্রথমে ২০২১-এ ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজের পর টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছিলেন মঈন। কিন্তু দলের অধিনায়ক বেন স্টোকস, কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম এবং ইংল্যান্ড বোর্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রব কি-র সঙ্গে বৈঠকের পরে সিদ্ধান্ত বদল করেন। এর পর, ২০২১-এ অ্যাশেজ খেলে তিনি তাঁর অবসর ঘোষণা করেন। আইপিএলে তিনি দু’বার চ্যাম্পিয়ন হন। ২০২২ সালে আট কোটি টাকার বিনিময়ে মঈনকে ধরে রেখেছিল সিএসকে। ২০২৩-এ ১৫টি ম্যাচে তিনি বল করে ন‘টি উইকেট পান।
মহম্মদ নবি— টি২০ ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হলেন আফগানিস্তানের মহম্মদ নবি। ২০১৭ থেকে তাঁর আইপিএলে পথ চলা শুরু। সে বার ৩০ লক্ষ টাকায় সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলতে দেখা যায় তাঁকে। টানা চার বছর নবি হায়দরাবাদের হয়ে খেলেন। এর পর, ২০২১ সালে এক কোটি টাকায় তিনি কলকাতায় যোগ দেন। ২০২৩-এর নিলামে তিনি অবিক্রিত ছিলেন। এই মরসুমে তাঁকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জার্সিতে দেখা যাবে। ৩৯ বছর বয়সী বিদেশি তারকা এখনও পর্যন্ত ১৭টি ম্যাচ খেলেছেন। মোট ১৮০ রান করেছেন। তাঁর সর্বোচ্চ রান ৩১। গড় ১৫ এবং স্ট্রাইক রেট ১৫১.২৬। তিনি ১৭টি ম্যাচে ৩৪৩ বলে ৪০৮ রান দেন। তাঁর ঝুলিতে মোট ১৩টি উইকেট রয়েছে। তাঁর সেরা ১১ রানে ৪ উইকেট। ইকোনমি রেট ৭.১৪।
২০২২ সালে আইপিএলের গ্রুপ পর্বে একটি ম্যাচেও নবিকে খেলায়নি কলকাতা নাইট রাইডার্স। সে বার আফগান ক্রিকেটারকে এক কোটি টাকা দিয়ে নিলামে কিনেছিল কেকেআর। তার পরেও তাঁকে পরিকল্পনায় রাখেননি ব্রেন্ডন ম্যাকালামরা। ২০২৩ সালে নিলামে নবি থাকলেও তাঁকে কোনও দল কেনেনি। এই বছর, দেড় কোটি টাকার বিনিময় নবিকে নেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। সম্ভবত এই মরসুমেই শেষ বারের জন্য দেখা যাবে তাঁকে।
আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন, ডেভিড ওয়ার্নারের মতো বিদেশি তারকাদের এই তালিকায় রাখাই যায়। তবে তাঁদের তারকা তকমা হয়তো আরও এক বছর আইপিএল দলগুলো চাইবে। তাই এখনই আইপিএলকে বিদায় জানাবেন বলে মনে হচ্ছে না। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার ইমরান তাহির ২০২১ সালে অবসর ঘোষণা করেন। তাঁর বয়স ছিল ৪১। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার ক্রিস গেইলও ৪১ বছর বয়স পর্যন্ত আইপিএল খেলেছেল। যদিও তিনি তাঁর অবসর নিয়ে কোনও রকম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেননি। আইপিএলে বড় নজিরও আছে তাঁর। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলের হয়েই তিনি টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ও অবিশ্বাস্য ১৭৫ রানের ইনিংস খেলেন। তাই বয়স নয় পারফর্মেন্সই শেষ কথা বলবে এই আইপিএল থেকে কে কে অবসর নেবেন।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার