মোহনবাগান ১ (দিমিত্রি)
ইস্টবেঙ্গল ০
সুচরিতা সেন চৌধুরী: এই তো কয়েকদিন আগের কথা। সারে চার বছর পর ডার্বি জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কয়েকদিনের মধ্যে ভাগ্যের ফেরে আবার ডার্বি। তবে সেই জয়ের ধারা ধরে রাখা হল না। বরং ১০ জনের মোহনবাগান হারিয়ে দিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলকে। সঙ্গে ডুরান্ড কাপ ২০২৩ চ্যাম্পিয়নও হয়ে গেল মোহনবাগান। মরসুমের প্রথম ট্রফি নিয়ে এএফসি কাপে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নামবে হুয়ান ফেরান্দোর দল। মোহনবাগান গ্যালারিতে যখন জ্বলে উঠেছে জয়ের দীপ তখন একরাশ হতাশায় মুহূর্তে খালি হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি। মোহনবাগান ফুটবলাররা যখন ভিক্ট্রি ল্যাপ দিতে ব্যস্ত তখন মাঠের মধ্যেই ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে মাথা নিচু করে বসে ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা। আধঘণ্টা আগের একটা মুহূর্ত কিন্তু ছিল ঠিক বিপরীত।
ম্যাচের বয়স তখন ৬২ মিনিট। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান গ্যালারি। পিন পড়লেও শোনা যাবে শব্দ। অন্যদিকে উচ্ছ্বাস ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে। মাঠের মধ্যে রেফারিকে ঘিরে দুই দলের ফুটবলাররা। দুটো হলুদ কার্ড দেখে লাল কার্ড নিয়ে মাঠ ছাড়তে হল মোহনবাগান মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপাকে। এমনই এক ডার্বিতে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল মোহনবাগান স্ট্রাইকার ওকোলি ওডাফাকে। তার পর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল গ্যালারি। দর্শকের ছোড়া ইঁটের আঘাতে হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন রহিম নবি। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ম্যাচ। না সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আর হয়নি। সেই পরিস্থিতিতে ম্যাচের দখল নেওয়ার কথা ছিল ইস্টবেঙ্গলেরই, কিন্তু হল উল্টোটাই। ১১ থেকে ১০ হয়ে যেন জ্বলে উঠলো মোহনবাগান।
৭১ মিনিটে প্রায় মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে নিয়ে গেলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারদের চমকে দিয়ে বদলে নিয়েছিলেন ডান থেকে বাঁ পা। আর সেই জোড়াল শট নড়তে দেয়নি প্রভসুখন গিলকে। থমকে থাকা মোহনবাগান গ্যালারি ফিরল স্বমহিমায়। অন্যদিকে থমকে গেল ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি। প্রথম ডার্বি জয়ের পর অনেক আশা নিয়ে দলকে সমর্থন করতে এসে ফিরতে হল হতাশা নিয়ে। কোনওভাবেই মন জিততে পারল না ইস্টবেঙ্গলের খেলা। অনেকটাই ছন্নছাড়া আর বোঝাপড়ার অভাবে ভুগল পুরো সময়টা। ৯০ মিনিটের পাশাপাশি ৯ মিনিটের অতিরক্ত সময় পেয়েও ১০ জনের মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারল না। বরং আরও সুযোগ তৈরি করল মোহনবাগান। ব্যবধান বাড়তেই পারত। তবে ম্যাচ শেষ হল ১-০ গোলেই।
ডার্বি মানেই টানটান উত্তেজনা, ডার্বি মানেই একরাশ আবেগ। মোহনবাগান ফাইনালে পৌঁছনোর পর থেকেই ময়দান জুড়ে শুধুই টিকিটের হাহাকার। তার মধ্যেই এদিন প্রায় ৬০ হাজার দর্শক গ্যালারি ভড়ালেন। ডুরান্ডের দ্বিতীয় ডার্বি তার উপর ফাইনাল বলে কথা। রবিবারের দুপুরে উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম সব রাস্তা গিয়ে মিশেছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। একটাই লক্ষ্য কলকাতা ডার্বির সাক্ষী থাকা আর নিজের দলকে সমর্থন করা। যদিও অনেক ডার্বির মতোই এই ম্যাচের প্রথমার্ধও কেন যেন তালকাটাই থেকে গেল।
অনেকটা সময় খেলা হল উদ্দেশ্যহীনভাবে। একে অপরকে মেপে নেওয়ার সেটাই দুই স্প্যানিশ কোচের স্ট্র্যাটেজি কিনা সেটা জানা নেই। তবে গোলমুখী শট প্রায় হলই না বলতে গেলে। পজেশনে এগিয়ে থাকল মোহনবাগান। শুরু থেকে অনেকটা সময় খেলা হল ইস্টবেঙ্গল বক্সে। সুযোগ না বললেও আধা সুযোগ কম তৈরি করল না মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গলের সামনে পজিটিভ সুযোগ একটাই এল প্রথমার্ধে। না, প্রথমার্ধে কেউ গোলের মুখ খুলতে পারল না। প্রথমার্ধ শেষ হয়েছিল গোলশূন্যভাবেই।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলার গতি কিছুটা বাড়ল। সঙ্গে বাড়ল কার্ডের সংখ্যা। ফুটবলারদের পাশাপাশি একগুচ্ছ কার্ড দেখলেন কোচ, সাপোর্ট স্টাফরা। মাঠে এবং রিজার্ভ বেঞ্চে মাঝে মাঝেই উত্তেজনা ছড়াল। তবে তা কখনওই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। এই মরসুমে ডার্বি এখনও ১-১। ইস্টবেঙ্গলের সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য থাকবে। মোহনবাগান চাইবে জয় ধরে রাখতে। তবে দুই দলই যে এখনও তৈরি না তা তাদের খেলাতেই স্পষ্ট। যে কথা বার বার বলেছেন দুই কোচ। তার মধ্যেই লেখা থাকবে হার-জিতের ইতিহাস। মোহনবাগানের ট্রফির ক্যাবিনেটে আরও একটি ট্রফি যুক্ত হবে। ইস্টবেঙ্গলের জন্য আপাতত শুধুই অপেক্ষা।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, আনোয়ার আলি, হেক্টর ইয়ুস্তে, শুভাশিষ বোস, আশিস রাই (মনবীর সিং), অনিরুদ্ধ থাপা, হাল আব্দুল সামাদ (ব্রেন্ডন হামিল), আশিক কুরুনিয়ান (গ্লেন মার্টিন্স), দিমিত্রি পেত্রাতোস, হুগো বুমৌস (জেসন কামিংস), আর্মান্দো সাদিকু (লিস্চন কোলাসো)
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন গিল, মহম্মদ রাকিপ (নিশু কুমার), লালচুংনুঙ্গা (এডউইন ভ্যান্সপল), জর্ডন এলসে (জোসে অ্যান্তোনিও পার্দো), মন্দার রাও দেশাই, সল ক্রেসপো, হরমনজ্যোত খাবরা, বোরহা হেরেরা (ক্লেটন সিলভা), নাওরেম মহেশ, নন্ধ কুমার, জেভিয়ের সিভেরিও (সুহের)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার