সুচরিতা সেন চৌধুরী: ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো, আর মাত্র কয়েকটা মাস ব্যাস’– শুক্রবার আইএফএ অফিসে চাকরির ফর্মে সই করতে করতে হয়তো মনে মনে অঞ্জন দত্তের এই গানটাই গাইছিলেন রবি হাঁসদা, চাকু মান্ডি, মনোতোষ মাঝিরা। একটা অদ্ভুত স্বস্তি, যেটা এতদিন ছিল না। ফুটবল ছিল, কিন্তু সঙ্গে ছিল সংশয়। আজ একটা সন্তোষ ট্রফি জয় ভাগ্য বদলে দিল ওদের।
বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি ২০২৪-এ ছ’টি গোল রয়েছে মনোতোষ মাঝির ঝুলিতে। সুদূর পুরুলিয়া থেকে সেই কবেই কলকাতায় চলে এসেছিলেন ফুটবলে কেরিয়ার গড়ার লক্ষ্যে। অনেক ক্লাব ঘুরে তিনবার সন্তোষ ট্রফির ট্রায়ালে অকৃতকার্য হয়ে শেষ পর্যন্ত এবার সুযোগ পেয়ে যান। হতাশ করেননি তিনি। আর তাঁদের হতাশ করেনি রাজ্য সরকার।
সন্তোষ জিতে শহরে ফিরেই ইচ্ছের কথা জানতে চাওয়ায় ফুটবলারদের একটাই দাবি ছিল, চাকরি। মনোতোষ বলছিলেন, “এখন আরও মন দিয়ে খেলতে পারব। এতদিন খেলছিলাম কিন্তু একটা চিন্তা সবসময় মাথায় ঘুরত, খেলে কিছু করতে না পারলে কীভাবে চলবে। এবার আর সেই চিন্তা নেই। বাড়িতে বাবা-মাও খুশি।”
টুর্নামেন্টের সেরা, সর্বোচ্চ গোলদাতা রবি হাঁসদা খুশি এই চাকরি পেয়ে। বলছিলেন, “আইএফএ ও মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। এই চাকরিতে আমাদের খুব উপকার হবে, পরিবারের জন্য ভাল। আমরা সবাই গরিব ঘরের ছেলে। এই চাকরিতে পরিবারে একটু আলো ফুটবে।” এর সঙ্গে তিনি জুড়ে দেন, “চাকরির জন্য খেলায় কোনো সমস্যা হবে না। দুটোই সমান মনোযোগ দিয়ে করব।”
সন্তোষ ট্রফি জিতে ফেরার পরই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিল পুরো দল। সেখানেই তাদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আর একদিনের মধ্যেই তা কার্যকরীও হয়ে গেল। শুক্রবার আইএফএ অফিসে রাজ্য সরকারের তরফে পুরো বাংলা দলের চাকরির ফর্ম ফিলআপ হয়ে গেল। সকলের জন্যই আপাতত ‘এসআই’ পদ দেওয়া হয়েছে। ২২ জনের দলের ২১ জনই চাকরি নিচ্ছেন। একমাত্র নরহরি শ্রেষ্ঠা ছাড়া। তিনি ইতিমধ্যেই অন্য চাকরি পেয়েছেন। কেন্দ্র সরকারি চাকরি নিয়ে বিহার চলে যাচ্ছেন তিনি।
সন্তোষ ট্রফি খেলে মনোতোষরা বুঝতে পেরেছেন দেশের মধ্যে বাংলার ফুটবলই সেরা। মনোতোষ বলছিলেন, “সবার সঙ্গে খেলে এটাই বলব আমরাই সেরা। আমরা যদি চ্যাম্পিয়ন নাও হতাম তাও আমরাই সেরা ছিলাম পুরো টুর্নামেন্টে।” যদিও শেষ পর্যন্ত সেরা হয়েই ফিরেছে দল। সঙ্গে তার যথোপযুক্ত উপহারও পেয়েছে। সরকারের তরফে চাকরির পাশাপাশি মিলেছে ৫০ লাখ টাকাও। এবার সবার চোখে বড় ক্লাবের স্বপ্ন। কলকাতার তিন ক্লাবও ইতিমধ্যেই তাঁদের নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।
জানা গিয়েছে, আপাতত সবাইকে এসআই পোস্টের জন্য ফর্ম ফিলআপ করালেও শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর আপাতত পোস্ট দেওয়া হবে। তবে পড়াশোনা করে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগও পাবেন ফুটবলাররা।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার