সুচরিতা সেন চৌধুরী: দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ২১ বছর। কিন্তু লাল-হলুদ জার্সিতে আশিয়ান কাপ জয়ের সেই ইতিহাস আজও তাজা। ২৬ জুলাই, ২০০৩। ইন্দোনেশিয়ার মাটিতে বেগতেরো শাসানাকে হারিয়ে বিদেশের মাটি থেকে কাপ নিয়ে ফিরেছিলেন একদল বাঙালি। সঙ্গে সুলে মুসা, ডগলাস ডিসিলভা, মাইক ওকোরোর মতো বিদেশি আর ভাইচুং ভুটিয়া, মহেশ গাউলি, কুলুথুঙ্গনের মতো ভীনরাজ্যের ফুটবলার। কিন্তু ২১ বছর পর সব থেকে বেশি যে মানুষটা আলোচনায় থাকলেন তিনি আর কেউ নন, তিনি সুভাষ ভৌমিক। প্লেয়ার থেকে দলের সঙ্গে থাকা ডাক্তার, ম্যানেজার, সহকারি কোচ, সবার কথায় বার বার উঠে এল সেই মানুষটার কথা।
শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তর গলা ধরে এল সুভাষ ভৌমিকের কথা বলতে গিয়ে। কত জানা, না জানা গল্প শোনালেন সেই সময় ক্লাবের সঙ্গে থাকা মানুষগুলো। এক মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাঁবুতে উদ্বোধন হওয়া নতুন মিডিয়া রুম যেন পৌঁছে গেল সেই সময়ে। ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণ মজুমদার তো ২১ বছর আগে জাকার্তা থেকে কেনা শার্ট পরেই মিডিয়া রুমের ফিতে কাটলেন। যে মিডিয়া রুমের দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে বিখ্যাত সাংবাদিকদের ছবিও। সেখানে বসেই তিনি বলছিলেন, “খুব যত্ন করে রেখেছি এই শার্টটা। এটা আমাকে সেই সময়ের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।”
সামনের তিনটি রো জুড়ে তখন বসে বিকাশ পাজি, চন্দন দাস, দীপক মণ্ডল, দেবজিৎ ঘোষ, অনীত ঘোষ, ষষ্ঠী দুলে, দীপঙ্কর রায়ের মতো আশিয়ান জয়ের কারিগররা। তাঁদের সবার গায়ে ২১ বছরের আশিয়ান জয়ের জার্সি। পিঠে জ্বল জ্বল করছে সেই পুরনো এবং বিখ্যাত হয়ে যাওয়া জার্সি নম্বর যা হয়তো এখন অন্য কারও গায়ে শোভা পায়। এই মঞ্চ থেকেও যেন উঠে এল বাঙালি ফুটবলারের অভাবের কথা। উঠে এল এই প্রজন্মের ফুটবল থেকে ক্লাব প্রেমের কথা।
বর্তমান আর অতীত মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল আশিয়ান জয়ের ২১ বছরের মঞ্চে। অতীতের পাশাপাশি ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথাও বলে গেলেন দেবজিৎ ঘোষ। মনে করালেন তাঁর মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার গল্প। বলছিলেন, “ওই ঘটনার পর আমাকে সেমিফাইনাল আর ফাইনালে না খেলানোয় কোচের উপর শেষ দিন পর্যন্ত রাগ ছিল। সেই সময় তো কয়েকদিন কথাই বলিনি। তবে আবার ক্লাবের সেই সাফল্য দেখতে চাই। আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হোক ইস্টবেঙ্গল, সেটা দেখতে চাই।”

যেন দেবজিৎ ঘোষের সুর ধরেই প্রত্যেক আশিয়ান বিজয়ী দলের সদস্য ক্লাবের কাছে এটাই দাবি করে গেলেন। উঠে এল ষষ্ঠী দুলে-চাইম্যান লড়াইয়ের কথা। ষষ্ঠী বলেন, “কোচ জিজ্ঞেস করেছিল প্রতিপক্ষে চাইম্যান বলে একটা প্লেয়ার আছে তাঁকে কে আটকাতে পারবে? আমি হাত তুলেছিলাম আর বলেছিলাম ওকে তো আমি চিনি না, তাই ওর জার্সি নম্বরটা বলে দেবেন আর আমাকে এক থালা ভাত এনে দেবেন।” তার পরটা তো ইতিহাস, যা সব ইস্টবেঙ্গল প্রেমীর জানা।
এছাড়াও উঠে এল অনেক না জানা তথ্য। যেমন প্রয়োজনের তুলনায় কম টাকা নিয়ে বিদেশে খেলতে যাওয়া থেকে ইন্দোনেশিয়ায় ডিম, আলু সেদ্ধ ভাত খেয়ে কাটানো। কী ভাবে এই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাওয়া থেকে রাতারাতি চ্যালেঞ্জ করে মহেশ গাউলিকে গোয়া থেকে তুলে এনে আশিয়ান কাপে খেলিয়ে দেওয়া-সব গল্প নতুন করে উঠে এল এই অনুষ্ঠানে। কাটা হল ‘আসিয়ান গ্লোরি’ লেখা লাল-হলুদ কেক।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার