সুচরিতা সেন চৌধুরী: আর মাত্র কয়েকটা দিন। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে ২০২৪-২৫ মরসুমের আইএসএল। তার আগে আবহ তৈরি করে দিল আইএসএল ২০২৪-২৫ মিডিয়া ডে। বুধবার কলকাতা শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে আইএসএল নিয়ে হয়ে গেল সাংবাদিক সম্মেলন। সেখানে হাজির ছিল কলকাতার তিন দল ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান ছাড়াও ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন নর্থইস্ট ইউনাইটেড, ওড়িশা এফসির মতো দল। দলের কোচ ও ফুটবলাররা ভাগ করে নিলেন আইএসএল নিয়ে তাদের মত।
এই মরসুমেই আইএসএল-এ অভিষেক হতে চলেছে মহমেডান এসসির। তাই হয়তো এদিন তাদের দিয়েই শুরু হল সাংবাদিক সম্মেলন। আইএসএল-এ মহমেডানকে প্রথম খেলতে হবে ডুরান্ড চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে। তবে পুরো দলের মাথায় ঘুরছে কলকাতা ডার্বি। কারও লক্ষ্য মোহনবাগানকে হারানো আবার কেউ চায় ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে সেরাটা দিতে। কেউ আবার চান ডুরান্ড কাপে মুম্বই এফসির কাছে হারের বদলা নিতে। তবে প্রথম আইএসএল খেলতে নামার আগে আশাবাদী মহমেডান।
অন্যদিকে ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন নর্থইস্ট কিন্তু সদ্য পাওয়া সাফল্যকে পিছনে ফেলেই আইএসএল ২০২৪-২৫ শুরু করতে চায়। তারা বলছেন, ডুরান্ড কাপ এখন অতীত। আইএসএল একদম আলাদা টুর্নামেন্ট। তাই অনেক উন্নতি করতে হবে। এবং কোচ স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন, এখন তাঁর পাখির চোখ মহমেডান ম্যাচ। একটা একটা করে ম্যাচ ধরেই এগোতে চান নর্থইস্ট কোচ। গত ১১ বছরে এই প্রথম ট্রফি, তাই সেই ধারা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর নর্থইস্ট।
এদিকে গত বছরই আইএসএল-এ অভিষেক হওয়া পঞ্জাব এফসি শুরুতেই বড় কিছু করতে না পারলেও বড় দলগুলোকে বেগ দিয়েছিল। দলের অধিনায়ক লুকা বলছেন, তাঁরাও ম্যাচ বাই ম্যাচই ভাবছেন। প্রাথমিকভাবে সুপার সিক্সের যোগ্যতা অর্জন করাই লক্ষ্য।
জামশেদপুর এফসি একমাত্র দল যার কোচ ভারতীয়। একমাত্র ভারতীয় হেড কোচ আইএসএল-এ। আর এই দলের কোচ খালিদ জামিল। ভারতীয়দের মধ্যে অন্যতম অভিজ্ঞ কোচ। গত মরসুমের মাঝ পথে দলের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল যার ফলে তাঁর থেকে বিরাট কিছু আশা করা হয়নি। তবে এবার প্রথম থেকেই দলের দায়িত্বে তিনি। তাই আশাও তাঁকে ঘিরে অনেকবেশি। তাঁর পাশাপাশি সিভেরিও গত মরসুমের মাঝপথে ইস্টবেঙ্গল থেকে জামশেদপুরে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর কাছে এবার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচ যে স্পেশাল তা মেনে নিলেন। তিনি মেনে নিলেন, তাঁর ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সময়টা ভাল যায়নি তবে সমর্থকদের ভালবাসার পাশাপাশি তাঁদের সমালোচনাও ভোলেননি তিনি তাই তার কাছে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি তা জিততে চান।
এর মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা দিয়ে গেলেন খালিদ জামিল। প্রশ্ন তুললেন আইএসএল-এ ভারতীয় কোচ নিয়ে। বললেন, তিনি একা কেন, আরও ভারতীয় কোচ থাকা উচিত। বলছিলেন, “ভারতীয় কোচদের আরও সুযোগ দিতে হবে তবেই তাঁরা উন্নতি করবে।”
গত কয়েক বছরে ওড়িশা এফসিও ভারতীয় ফুটবলের পাওয়ার হাউস হয়ে উঠেছে। বড় বড় দলকে রীতিমতো সমস্যায় ফেলেই এগিয়েছে ওড়িশা। ঘরে বাইরে হারিয়েছে আইএসএল-এর বড় বড় দলকে। গত মরসুমে তিন নম্বরে শেষ করা ওড়িশা এফসি এবার চাইবে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নিয়ে মরসুম শেষ করতে। হুগো বুমৌসকে এবার দলে নিয়েছে ওড়িশা। কেন তাঁকে বেছে নিলেন কোচ সার্জিও লোবেরা তাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, তাঁকে অনেকদিন ধরেই তিনি জানেন আর শুধু প্রোফাইল দেখে তিনি দল গড়েননি বরং তাঁর ওড়িশা এফসির পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে যে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেবে সেটাও তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি লোবেরা মনে করেন এই ধরণের টুর্নামেন্ট ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। তিনি বলেন, “কোচ হিসেবে আমার কাজ প্লেয়ার তুলে আনা। ভারতীয় ফুটবলারদের ক্ষেত্রেও তাই। ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে দারুণ প্রতিভা রয়েছে। তাদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। আর এখন ভারতীয় প্লেয়াররা আমাদের সাহায্য করবে টুর্নামেন্ট জিততে।”
সবার শেষে এল কলকাতার দুই দল মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগান সদ্য ডুরান্ড কাপে রানার্স হয়ে শেষ করেছে। সেটাকে পিছনে রেখেই আইএসএল-এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন মোহনবাগান কোচ। ডুরান্ড ফাইনালে হারকে আইএসএল-এ বদলাতে চাইবেন তিনি। তবে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে এই মরসুমে কারা থাকতে পারে তা এখনই ভাবতে নারাজ। বরং এই প্রশ্নটা তাঁর পাশে বসা ফুটবলার দিমিত্রি, কামিন্সদের উদ্দেশে ছুঁড়ে দিলেন হোসে মোলিনা।
মোলিনা মেনে নিলেন গত মরসুমে মোহনবাগান খুব ভাল খেলেছিল। কিন্তু সেটা অতীত। “আমার মাথায় এখন শুধুই মুম্বই সিটি ম্যাচ,” বলছেন মোলিনা। পাশাপাশি মোহনবাগানকে আইএসএল-এর সঙ্গে খেলতে হবে এএফসিও। তবে দুটো টুর্নামেন্টের মধ্যে কোনও পার্থক্য দেখছেন না মোলিনা। তাঁর কাছে যে কোনও ম্যাচ তাঁরা জেতার জন্যই নামবে। তিনি বলছেন, “কোনও পার্থক্য নেই।” গত মরসুমে চোটের জন্য ছিটকে যাওয়া আশিক কুরুনিয়ান আবার ফিরছেন দলে। তিনি জানিয়ে দিলেন, মাঠে ফেরার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন তিনি। বলছিলেন, “আমি ফুটবল ছাড়া আর কিছু জানি না। আমার দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার হয়েছে, তাতে কী? আমি সব চোট সারিয়ে এই মরসুমে ফিরে এসেছি। চোট সব সময়ই একটা বড় ধাক্কা কিন্তু সেটা একজন ফুটবলারের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক।”
সবার শেষে মঞ্চে এল লাল-হলুদ ব্রিগেড। কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত, ক্লেটন সিলভারা। গত মরসুমে সুপার কাপ জিতে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। যার ফলে খুলে গিয়েছিল এএফসির দরজাও। কিন্তু মরসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে যেতে হয়েছে। যার পর আইএসএল আরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তাদের জন্য। গত মরসুমে যাদের বিরুদ্ধে হারের মুখ দেখে শুরু করতে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে এই মরসুমেও তাদের বিরুদ্ধেই আইএসএল যাত্রা শুরু করছে দল। যদিও ইস্টবেঙ্গল কোচ বলছেন, বছর বদলের সঙ্গে সঙ্গে সবটাই বদলে গিয়েছে। আগের বছর কী হয়েছিল তা দিয়ে এই মরসুম বিচার করা যাবে না। বলেন, “নতুন মরসুম, নতুন দল। সবাই সবার সেরাটা দেবে।”
অন্যদিকে কলকাতা শহরের প্রশংসায় হেক্টর ইউয়েস্তে। বলছিলেন, “গত বছর ইস্টবেঙ্গলের ভাল অফার পেয়ে চলে এসেছিলাম। তার পর থেকে আমি আর আমার স্ত্রী এই শহরকে দারুণভাবে উপভোগ করেছি।” তিনি এও জানালেন, আনোয়ারকে তাঁর পাশে পেয়ে তিনি দারুণ খুশি। কোচ কার্লেসও জানিয়ে দিলেন আনোয়ারকে দলে পেয়ে খুশি তিনি।
পাশাপাশি কার্লেসের মুখে শোনা গেল মহমেডানের প্রশংসাও। তিনি বলছিলেন, “গতবছর ওদের বিরুদ্ধে খেলেছি, কষ্ট করে জিততে হয়েছে। ওদের আইএসএল-এ খেলাটা প্রাপ্য। আর মহমেডানের আইএসএল-এ আসা প্রতিযোগিতা বাড়াবে স্বাভাবিক।” গত মরসুমে যেভাবে চোট ভুগিয়েছিল এবার যেন তেমনটা না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। শৌভিক চক্রবর্তী অবশ্য মহমেডানের সংযোজনকে ফুটবলের উন্নতি হিসেবেই দেখছেন।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার