অলস্পোর্ট ডেস্ক: রেফারির শেষ বাঁশি বেজে উঠতেই ‘ আমি পেরেছি’ গোছের একটা ভাব ফুটে উঠেছিল ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোর শরীরি ভাষায়। একটা তৃপ্তির হাসি ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর মুখে। তাঁকে জড়িয়ে ধরেন সহকারী কোচ বিনো জর্জ। সেটাই স্বাভাবিক। যে গ্রুপে মোহনবাগানের মতো দল ছিল, সেখান থেকে এক নম্বর হয়ে সুপার কাপের সেমিফাইনালে ওঠার কাজটা সহজ ছিল না। তবে সেটাই করে দেখিয়েছেন অস্কার পরিকল্পনামাফিক ফুটবল খেলে। ড্র করতে পারলে শেষ চারে যাওয়া সম্ভব হবে, সেখানে মোহনবাগানকে জিততেই হত গোলপার্থক্যে পিছিয়ে থাকায়। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটা জেতেনি ঠিকই, কিন্তু কাগজে কলমে ফেবারিট মোহনবাগানের আক্রমণভাগকে বোতলবন্দী করে অস্কার প্রয়োজনীয় ড্র করে সুপার কাপে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেলেন। সবচেয়ে বড় কথা, সুপার কাপ থেকে ছিটকে গিয়ে মোহনবাগান যেখানে এসিএল টুতে খেলার প্লে অফ স্লট হারালো, তখন ইস্টবেঙ্গলের সামনে কার্লেস কুয়াদ্রাতের পর আবার সুপার কাপ জয়ের সঙ্গে এসিএল টু প্লেঅফ খেলার সম্ভাবনা জিইয়ে থাকল।
আর সেকারণেই মারগাঁও ফতোরদা নেহরু স্টেডিয়ামের মাঠে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে বাজিমাত করে সাময়িক উচ্ছ্বাস দেখালেও পরে দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যান অস্কার। কারণ তিনি বিলক্ষণ জানেন ডার্বি ড্র করলে সেমিফাইনালে পৌঁছলেও আসল কাজটা এখনও বাকি। সেটা হল সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। গত মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখনও কোনও ট্রফি তিনি জেতেনি। সবচেয়ে বড় কথা, ডুরান্ড কোয়ার্টারফাইনালে মোহনবাগানকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে বাড়তি উচ্ছ্বাসে গা ভাসানোর কারণে ডায়মন্ড হারবার এফসির কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হারের মুখে পড়েছিল তাঁর দল। তাই এবার অনেক বেশি সতর্ক ও সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ফুটবলারদের মোহনবাগানের সঙ্গে ড্র করে সুপার কাপ সেমিফাইনালে ওঠার পর। সেমিফাইনালে ওঠার রাতটা সাজঘরে উৎসবে মাতার সুযোগটুকু দিলেও কোচ অস্কার বারবার মনে করিয়েছেন, ফোকাসটা যেন ঠিক থাকে বাকি ২ ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হতে।
মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে ঠিক কী পরিকল্পনা ছিল? অস্কার জানান, ‘ ড্র করলে শেষ চারে যাব, এই ভাবনটা ফুটবলারদের মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে বলেছিলাম। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলার কথা বলেছিলাম। মোহনবাগানের আক্রমণকে দানা বাঁধা সুযোগ না দিয়ে গোল করে ম্যাচ জেতার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিল ফুটবলাররা। গোল পায়নি, কিন্তু আমরা গোলের অনেক সুযোগ তৈরি করেছিলাম। ম্যাচটা জিততেও পারতাম। প্রশংসা করতে হবে আমার দলের মিডফিল্ডার ও ডিফেন্ডারদের। কোনও সময় ওরা মোহনবাগান ফুটবলারদের খেলার রাশ হাতে নিতে দেয়নি। সারা ম্যাচে মোহনবাগানের কোনও গোলের সুযোগই নেই। আমি তো আগেই বলেছিলাম, গত মরশুমে আমরা ভাল খেলিনি। কিন্তু এবার দলগঠন ও সবদিক থেকে আমরা নিজেদের গুছিয়ে নিতে পেরেছি। এর ফলে মোহনবাগানের মতো দেশের এক নম্বর ক্লাব সহ অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আমাদের ফারাকটা অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছি। যত দিন যাবে, দলের খেলা আরও খুলবে।’
মিগুয়েল, রশিদ, বিপিন, ক্রেসপো কারও নাম আলাদা করে নিতে রাজি হলেন না কোচ অস্কার। বলেন, এটা মিলিত প্রচেষ্টার সাফল্য। দলের সকলের সমান অবদান আছে। এমনকি যাঁরা রিজার্ভ বেঞ্চে কাটিয়েছেন, তাঁদেরও। যে যখনই সুযোগ পেয়েছে খেলার নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে মাঠে। এটাই বাকি মরশুমে দলের মাঝে বজায় রাখতে হবে।
সেমিফাইনাল বা ফাইনালের দিন তো এখনও ঘোষণা হয়নি। এটা কতটা সমস্যায় ফেলতে পারে দলকে? অস্কারের প্রতিক্রিয়া, ‘ একদিকে যেমন ৭দিনে ৩টি ম্যাচ খেলার ধকল নিতে হয়েছে ফুটবলারদের, তাও আবার গোয়ার খেলার অযোগ্য মাঠে, তাতে সঙ্গে সঙ্গে সেমিফাইনাল খেলতে হলে ফুটবলাররা ক্লান্তি অনুভব করতে পারত। এখন ফুটবলারদের কিছুটা বিশ্রাম দিয়ে সুপার কাপ সেমিফাইনালের জন্য তৈরি করার সুযোগ পাব। আবার একইসঙ্গে এটাও ঠিক, একটা টুর্নামেন্ট চলার সময় ফুটবলাররা একটা ছন্দে চলে আসে, তারপর হঠাৎ লম্বা ব্রেক এসে পড়লে সেই ছন্দ নষ্ট হতে পারে। সেটা যাতে না হয়, সেব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে আমাদের।’
সুপার কাপ সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ মুম্বই এফসি বা কেরালা ব্লাস্টার্স। তবে এআইএফএফ এখনও সুপার কাপ সেমিফাইনাল ও ফাইনালে দিন ও স্থান নিয়ে কোনও কিছু জানাতে পারেনি। বিশেষ করে মাঝে ভারতীয় ফুটবল দলের ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এএফসি এশিয়ান কাপের নিয়মরক্ষার খেলা থাকায়। জাতীয় শিবির ও খেলার জন্য সুপার কাপের খেলা ৬ নভেম্বরের পর স্থগিত থাকবে। একইসঙ্গে এআইএফএফকে মাথায় রাখতে হবে এফসি গোয়ার ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় এসিএল টু-র খেলাও। সেবুঝে সুপার কাপের দিন ও স্থান ঠিক করতে হবে ফেডারেশনকে। ততদিন নিজেদের প্রস্তুতির মাঝে থেকে ফিটনেস ধরে রাখতে হবে অস্কার ব্রিগেডকে।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন:ফেসবুক ও টুইটার





