সুচরিতা সেন চৌধুরী: কে বলেছে ভারতীয় কোচেদের থেকে বিদেশিরা এগিয়ে? কেন আমরা বার বার বিদেশি কোচেদের পিছনে ছুটি যখন বার বার ভারতীয় কোচেরা নিজেদের প্রমাণ করছেন? শুধু ভারতীয় কোচে বিষয়টা প্রসারিত না করলেও হাতে বিকল্পের তো অভাব নেই। এই বাংলা ভারতীয় ফুটবলকে তো কম দেয়নি। সে ফুটবলার হোক বা কোচ। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সিনিয়র পুরুষ দলের কোচের চেয়ারে সব পরীক্ষা-নিরিক্ষার পরও উঠে আসছে এক বঙ্গসন্তান সঞ্জয় সেনের নাম। সেটা তো আর এমনি নয়। আর ইতিমধ্যেই ভারতীয় মহিলা সিনিয়র দলের কোচ হিসেবে ইতিহাস রচনা করেছেন আর এক বঙ্গসন্তান, কার্শিয়ংয়ের ক্রিসপিন ছেত্রী। তাঁর হাত ধরেই এশিয়ান কাপ ২০২৬-এর যোগ্যতা অর্জন করেছে ভারত। পুরো দল সাফল্যের তুঙ্গে রয়েছে, তবে শান্ত ক্রিসপিন। বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কাজ এখনও শেষ হয়নি। থাইল্যান্ডে ম্যাচ জয়ের পর অলস্পোর্টইন্ডিয়া ডট কমের সঙ্গে দ্রুত কথায় যা উঠে এল—
১) সেখানকার পরিবেশ কেমন ছিল?
ক্রিসপিন ছেত্রী: খুব পজিটিভ, আমার মনে হয় চাং মাই ভ্রমণের প্রথম দিন থেকেই আমাদের দলের মধ্যে একটা ইতিবাচক মানসিকতা ছিল, আর সেটাই পুরো সময় ধরে সেখানে ছড়িয়ে পড়েছিল।
২) দলের অনুপ্রেরণা কী?
ক্রিসপিন ছেত্রী: লক্ষ্যটা অনেক দূর, আর সেটাই আমাদের অনুপ্রেরণা ছিল প্রথম থেকে। সাপোর্ট স্টাফ-সহ সকল খেলোয়াড়েরই একটাই গোল রয়েছে, আর সেটা হল বিশ্বকাপ খেলা এবং তারা ইতিহাস তৈরির অংশ হওয়ার চেষ্টা করছে।
৩) কোচ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য সামনে এখন একটা বিশাল মঞ্চ, এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আপনার মানসিকতা কী?
ক্রিসপিন ছেত্রী: যেমন আমি আগেই বলেছি, আমাদের মানসিকতা প্রতিদিনই পরিবর্তিত হচ্ছে আমরা খেলতে খেলতে জয়ের মানসিকতা তৈরি করার চেষ্টা করছি, আমাদের মধ্যে হারের ভয় নেই, সবাই শুধু খেলাটা উপভোগ করছি। এই মানসকিতাটাই প্রথম থেকে ছিল, এখনও সেটাই আছে এবং থাকবে।
৪) জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে আপনাকে কী কী বিষয় অনুপ্রাণিত করেছিল?
ক্রিসপিন ছেত্রী: জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকার জন্য আপনার অনুপ্রেরণার প্রয়োজন নেই, এটি প্রতিটি কোচের স্বপ্ন।
৫) একজন কোচের জন্য রাজ্য দল এবং জাতীয় দলের মধ্যে পার্থক্য কী? যেমন আপনি ওড়িশাকেও কোচিং করিয়েছেন?
ক্রিসপিন ছেত্রী: হ্যাঁ, আমি ওড়িশায় রাজ্য দলের কোচ হিসেবেও কাজ করেছি এবং ক্লাব দর্শন একই রয়ে গিয়েছে… তবে জাতীয় দলের কাজ অনেকটাই আলাদা। সেখানে কৌশলগত সচেতনতা এবং অবস্থান নির্দিষ্ট কাজের বিষয়ে বেশি সচেতন থাকতে হয়, যেখানে রাজ্য দলে আপনাকে কৌশল নিয়ে অনেক বেশি কাজ করতে হয়।

৬) পুরুষ কোচ হিসেবে মহিলা দল পরিচালনা করা কতটা কঠিন?
ক্রিসপিন ছেত্রী: খুব বেশি পার্থক্য নেই, কিন্তু মহিলা ফুটবল খেলোয়াড়দের মাঠের বাইরে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে.. বিশেষ করে বায়োলজিক্যাল বিষয়গুলো, যেমন মান্থলি পিরিয়ড। তাই আপনি অনেক আগে থেকে নিশ্চিত থাকতে পারবেন না কোন খেলোয়াড় ম্যাচের জন্য উপলব্ধ থাকবে, সুযোগ-সুবিধা বা পরিস্থিতি অনুসারে তখন পরিকল্পনা সাজাতে হয়। এছাড়া মাঠের মধ্যে আলাদা করে কোনও পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করি না।
৭) সঙ্গীতা বাসফোর এবং অন্যান্য মেয়েদের সম্পর্কেও কিছু বলুন?
ক্রিসপিন ছেত্রী: আমার দলে খুব কম সিনিয়র খেলোয়াড় আছে যারা প্রশিক্ষণে হোক বা খেলার সময় দলের মান নির্ধারণ করে ও ধরে রাখে… এটা তাদের নামের চেয়েও দল সম্পর্কে অনেক বেশি। সঙ্গিতা একজন দুর্দান্ত নেতা এবং খেলোয়াড় যে তার কাজের নীতির কারণে অন্যান্য খেলোয়াড় বা সতীর্থদের মানকে আরও উন্নত দেখাতে সাহায্য করে।
৮) অস্ট্রেলিয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার এখনও অনেকটা সময় রয়েছে, আপনার পরিকল্পনা কী?
ক্রিসপিন ছেত্রী: হ্যাঁ, আমরা বলতে পারি যে আমাদের হাতে সময় আছে.. তবে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সাত মাস সময় যথেষ্ট নয়, কারণ অন্যান্য টুর্নামেন্টেও খেলোয়াড়রা অংশ নেবে (সিনিয়র ন্যাশনাল/আইডব্লিউএল)।
কিন্তু আমি ফেডারেশনের কাছে আমার পরিকল্পনা তুলে ধরব, তার পর দেখা যাক কী হয়।
৯) আপনি এই দলটি কীভাবে নির্বাচন করেছিলেন?
ক্রিসপিন ছেত্রী: আমার জন্য খেলোয়াড় নির্বাচন করা সহজ ছিল। আমি এমন ভালো খেলোয়াড় খুঁজেছি যারা দলকে সাফল্য এনে দেওয়ার জন্য জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকবে। মধ্যমানের মানসিকতা সম্পন্ন দুর্দান্ত খেলোয়াড় নয়। আমি তাদের ভিতরের খিদেটা দেখতে চাই, যাদের মধ্যে আরও বড় হওয়ার ও দেশের হয়ে খেলার অদম্য ইচ্ছে রয়েছে।
১০) কোচ হিসেবে আপনার পরবর্তী লক্ষ্য কী?
ক্রিসপিন ছেত্রী: অবশ্যই বিশ্বকাপ এবং অলিম্পিকের জন্য যোগ্যতা অর্জন করা। সঙ্গে ২০৩১ বিশ্বকাপের জন্য খেলোয়াড়দের একটি তালিকা তৈরি করুন।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন:ফেসবুক ও টুইটার





