সুচরিতা সেন চৌধুরী: রাত পোহালেই চিরপ্রতিক্ষিত সেই দিন। আরও একটা ফাইনাল। আবারও ফাইনালে কলকাতার দল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। গতবারের থেকে অবশ্য এবার বদলেছে প্রতিপক্ষ। মুম্বই বদলে হয়েছে বেঙ্গালুরু। তবে ম্যাচটা যখন ফাইনাল তখন যে কোনও প্রতিপক্ষই যে কঠিন তা নিয়ে কোনও সংশয়ই নেই দলের কোচ, ফুটবলারের। বেঙ্গালুরু কোচের পাশে বসেই তাই মোহনাবাগান কোচ জানিয়ে গেলেন, বেঙ্গালুরু এফসির প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কথা। একইভাবে আর এক ফাইনালিস্ট বেঙ্গালুরু কোচ জেরার্ড জারাগোজা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন, ঘরের মাঠে মোহনবাগান কঠিন প্রতিপক্ষ। তার মধ্যেই দুই দল টগবগ করে যে ফুটছে একটা ফাইনালকে কেন্দ্র করে তা দুই কোচের কথাতেই স্পষ্ট। মাঠের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নামার আগে তাই শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে একমঞ্চে হাজির হল মোহনবাগান ও বেঙ্গালুরুর কোচ। একদম পাশাপাশি চেয়ারে বসে একে অপরের দিকে হাসিই ছুঁড়ে দিলেন। মনের মধ্যে তখন হয়তো ২৪ ঘণ্টার অপেক্ষা।
দারুণ ছন্দে মোহনবাগান এসজি। এই পুরো মরসুমটা দাঁপিয়ে খেলেছে দল। টানা অপরাজিত থাকার রেকর্ড করে ফেলেছে। সঙ্গে পর পর দু’বার শিল্ড জয়ের রেকর্ডও পুড়ে ফেলেছে ঝুলিতে। এবার শুধু শেষ রেকর্ডের অপেক্ষা। একই মরসুমে শিল্ড ও চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি ঘরে তোলা। গত মরসুমে সেটা অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছে, এবার তাই সবটা নিয়ে ঝাঁপাতে চায় মোহনবাগান। মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা বলছিলেন, ‘‘আমরা মোটিভেটেড। ফাইনালে খেলতে নামাটাই একটা মোটিভেশন। আগে কী হয়েছে আমি সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না, আমি বর্তমানের কথা ভাবছি। কারণ আমরা ফাইনাল খেলতে চলেছি, প্রতিপক্ষ যে কেউ হতে পারে।’’
এর পাশাপাশি তিনি এও জুড়ে দেন, ‘‘আমরা এখানে খুব কঠিন সেমিফাইনাল ম্যাচ খেলেছি। তবে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে খেলা আর বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে খেলা দুটো আলাদা। এটা কঠিন ম্যাচ হতে চলেছে। বেঙ্গালুরু খুব ভালো দল। পুরো মরসুম ওরা ভাল খেলেছে। তবে আমাদেরও পরিকল্পনা রয়েছে, যেটা আমি এখানে বলতে চাই না।’’ মোলিনা মনে করে দুই দলই কোচ এবং ভাল ফুটবলার সমৃদ্ধ। এই ম্যাচটা উপভোগ করতে চাইছেন দুই দলের কোচই। তিনি স্পষ্ট করে বলে দেন, ‘‘আমি ভাবছিই না অতীতে কী হয়েছে তা নিয়ে। আমরা এখানে এসেছি খেলতে এবং নিজেদের সেরাটা দিয়ে এই ম্যাচ জিততে।’’
দুই কোচই অবশ্য গুরুত্ব দিচ্ছেন দুই দলের সমর্থকদের. যেহেতু কলকাতায় খেলা সে কারণে গ্যালারির দখল যে মোহনবাগান সমর্থকদের হাতেই থাকবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এক কথায় ১২ জনে খেলতে চলেছে মোহনবাগান। আর সেই ১২তম ম্যানই ভাবাচ্ছে বেঙ্গালুরু কোচ জারাগোজাকে। বলছিলেন, ‘‘ওরা ভাগ্যবাণ যে ওরা ঘরের মাঠে খেলবে। এই মরসুমের সেরা খেলাটা হয়তো আমরা খেলব। ওরাও হয়তো ওদের সেরাটা খেলবে। তবে ওরা ঘরের মাঠে অসাধারণ। মোহনবাগানের কাছে অসাধারণ সব প্লেয়ার রয়েছে। তবে এক বা দু’জনকে নয় আমাদের পুরো মোহনবাগান দলকেই আটকাতে হবে।’’
মোলিনা যেমন বলেছিলেন, তাঁর দলের কোচ, ফুটবলাররা সেরা তেমনই জারাগোজাও জানিয়ে দিলেন তাঁর কাছে রয়েছে সেরা সাপোর্ট স্টাফ এবং তাঁদের উপর আস্থা রয়েছে জারাগোজার। তিনি বলছিলেন, ‘‘ভারতে হেড কোচ হিসেবে কাজ করার প্রথম দিন থেকেই আমি গুরপ্রিত, সুনীল ছেত্রীদের দলে পেয়েছি। সুনীল ছেত্রী আমার ভাবনা-চিন্তাটাই বদলে দিয়েছে।’’ তবে দলে যতই সুনীল থাকুন না কেন, মোহনবাগানকে সমীহ করছেন বেঙ্গালুরু কোচ।
বলছিলেন, ‘‘মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলাটা সব সময়ই চ্যালেঞ্জ সল্টলেকের মাটিতে। তবে আমরা আমাদের সমর্থকদের জন্য এই ম্যাচ জিততে চাই। ওরা আমাদের সমর্থন করতে কখনও শিলং, কখনও জামশেদপুরে পৌঁছে যায়। ওদের এই জয় প্রাপ্য।’’ তবে তিনি মেনে নিয়েছেন, ফাইনাল সব সময়ই আলাদা।
দিনের শেষে ফাইনালের মাঠে নামার আগে কোথাও যেন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে দুই কোচ। জিততে হবে সমর্থকদের ভালবাসার মূল্য দিতে, সেরাটা দিতে হবে আর খেলাটা উপভোগ করতে হবে। এক ঝাঁক তারকা নিয়ে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে নামার আগে দুই দলেরই মানসিক প্রস্তুতি সারা। এবার শুরু লড়ে দেওয়ার পালা। প্রমাদ গুনছেন দুই কোচ।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার