সুচরিতা সেন চৌধুরী: এই নিয়ে দেখতে দেখতে ইস্টবেঙ্গলে দ্বিতীয় মরসুম শুরু করে দিলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। তিনি গত মরসুমে দলের জন্য হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা হয়ে এসেছিলেন। যা স্বপ্ন দেখিয়েছে লাল-হলুদ সমর্থকদের। ডার্বি জয় থেকে ট্রফি জয়, দীর্ঘদিন পর আবার দল খেলবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। সব মিলে ইস্টবেঙ্গলের স্বপ্নের ফেরিওয়ালাও তিনিই। যিনি হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা হয়ে সব খারাপকে সরিয়ে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে ভাল সময় নিয়ে এসেছেন। ভেঙে পড়া একটা দলকে ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাই হয়তো মরসুমের শুরুতেও আত্মবিশ্বাসের সুর কার্লেস কুয়াদ্রাতের গলায়। আর সেই আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে ড্রেসিংরুমেও।
মঙ্গলবার যুবভারতী স্টেডিয়ামের কনফারেন্স রুমে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২ প্রিলিমিনারি পর্বের প্লে অফে ইস্টবেঙ্গল বনাম অলটিন অসিরের প্রি-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে বার কয়েক ঘুরে ফিরে এল অতীতও। অলটিনের হেড কোচ ইয়াজগালি হোডাজেলদিয়েভ ও কার্লেস কুয়াদ্রাতের অতীত মুখোমুখি হওয়ার ইতিহাসে কুয়াদ্রাতের হার লেখা হয়েছিল। তখন অবশ্য দলটি ছিল বেঙ্গালুরু এফসি। এবার কোচ সেই কার্লেসই কিন্তু দল বদলে বিএফসি থেকে ইস্টবেঙ্গল এফসি হয়ে গিয়েছে। উল্টোদিকে সেই একই দল, সেই একই কোচ। তবে এই ম্যাচকে সেই ম্যাচের বদলা হিসেবে নেওয়া রাস্তায় হাঁটছেন না কুয়াদ্রাত। বরং প্রতিপক্ষ কোচের সঙ্গে তাঁর সক্ষতার কথা তুলে ধরে বুঝিয়ে দিলেন ৯০ মিনিটের বাইরে সবাই ফুটবল দুনিয়ার সতীর্থ।
বলছিলেন, ‘‘বদলার কোনও জায়গাই নেই। আমাদের মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক। আমরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। ওরা খুব ভাল দল। কিন্তু আমি আমার দল নিয়েও খুশি। যারা নিজেদের সেরাটা দিয়ে এই ম্যাচ খেলবে। দল ক্রমশ উন্নতি করছে। দীর্ঘদিন পর ইস্টবেঙ্গল আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে তাই সবাই খুবই উত্তেজিত। সব টুর্নামেন্টের কথা মাথায় রেখেই দল তৈরি করছি। পর পর টুর্নামেন্ট রয়েছে। ঘুরে ফিরে সবাই খেলার সুযোগ পাবে, সামনে অনেকটা পথ রয়েছে। দলের মান উন্নত করতে হবে ক্রমশ।’’
এর সঙ্গে তিনি জুড়ে দেন, ‘‘এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। দীর্ঘদিন পর দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে। আমাদের সামনে ভাল পরীক্ষার সুযোগ।’’ এই ম্যাচ জিততে তিনি সবার সমর্থন চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্পিরিট ভাল জায়গায় রয়েছে। তবে প্রতিপক্ষ সহজ নয়। ওদের এএফসি খেলা প্লেয়ার রয়েছে। আমাদের পুরো গ্যালারি জুড়ে সমর্থন চাই। ঘরের মাঠে খেলা হওয়ার এটা একটা বড় অ্যাডভান্টেজ।’’
ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ দলে কোনও বিদেশি প্লেয়ার নেই। পুরো স্বদেশিদের নিয়েই দল গড়ে খেলতে নেমেছে। ক্লাবের বয়স মাত্র ১৬। তার মধ্যেই দেশের ন্যাশনাল লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছে আটবার। এএফসি খেলে চলেছে টানা, ফাইনাল রাউন্ডেও পৌঁছেছে, এই অবস্থায়, এই ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলের জন্য খুব সহজ হবে না। যদিও এবার খুব ভাবনা-চিন্তা করেই দল গড়েছে লাল-হলুদ কোচ। কুয়াদ্রাত বলেন, ‘‘আমাদের জন্য এএফসি নতুন টুর্নামেন্ট। তবে ওরা নিয়মিত খেলছে। আমাদের সাবধান থাকতে হবে। তবে আমার বিশ্বাস আমাদের প্রস্তুতি ভাল হয়েছে। ওরা ওদের দল তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক ম্যাচের কথা মাথায় রেখেই।’’
এদিকে এএফসি খেলার চারদিনের মাথায় খেলতে হবে ডুরান্ড কাপের ডার্বি। দুটো একদমই আলাদা মাত্রার টুর্নামেন্ট। দলের উপর তার কতটা প্রভাব পড়বে জানতে চাওয়া হলে কার্লেস বলছিলেন, ‘‘কোচ হিসেবে আমি খুবই খুশি। পর পর কঠিন ম্যাচ সব সময়ই ভাল। প্লেয়াররা তাঁদের সেরা প্রস্তুতিতে থাকবে।’’
অলটিন কোচ অবশ্য মেনে নিলেন, কার্লেস কুয়াদ্রাত ও তিনি একে অপরকে আগে থেকে চেনেন, জানেন, সেটা অবশ্যই ভাল। কিন্তু নতুন জায়গা, নতুন ভেন্যু, আলাদা আবহাওয়ায় কোনও সমস্যায় হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশের আর এখানকার আবহাওয়া একদমই এক। তাই কোনও অসুবিধে হবে না।’’ আপাতত বৃষ্টি চলছে কলকাতায়। বুধবারও ম্যাচের সময় বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে আর্দ্রতা, যা সব সময়ই সমস্যার কারণ হতে পারে কিন্তু এই সব নিয়ে ভাবতে নারাজ কোনও কোচই। বরং লক্ষ্য একটাই এই ম্যাচ জিতে পরের পর্বে যাওয়া।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার