মুনাল চট্টোপাধ্যায়: একের পর এক বিষয়ে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন অপদস্ত হচ্ছে চুড়ান্তভাবে। জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে। সর্বশেষ বড়সড় ধাক্কা খেল কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন অফ স্পোর্টসে (সিএএস)। বলা ভাল ফেডারেশন থাপ্পর খেল। ফেডারেশনের আপিল কমিটির চার্চিল ব্রাদার্সকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণার চাপানো সিদ্ধান্ত খারিজ করে ইন্টার কাশীকে অবিলম্বে আইলিগ ট্রফি দেওয়ার কড়া নির্দেশ পাঠাল কোর্ট অফ আর্বিটেশন অফ স্পোর্টস। এমন একটা সিদ্ধান্তে যে ইন্টার কাশী শিবিরে খুশি হাওয়া বইছে, সেটা বলাই বাহুল্য। সেখানে চার্চিল ব্রাদার্স শিবিরে হতাশার সঙ্গে ক্ষোভ বাড়বে। তবে সিএএস বা ক্যাসের দেওয়া অর্ডারের পর আদালতের দরজায় কড়া নেড়েও কোনও ফল হবে না চার্চিলের।
ক্যাসের নির্দেশ, দ্রুত লিগ টেবিলে পয়েন্ট প্রাপ্তির ভিত্তিতে স্থানের বদল ঘটিয়ে ইন্টার কাশীকে ২০২৪-২৫ মরশুমের আইলিগ ট্রফি তুলে দিক ফেডারেশন। ক্যাসের অর্ডারের পর ইন্টার কাশীর স্থান ১ নম্বর ৪২ পয়েন্ট প্রাপ্তির ফলে। বাকি ৩ স্থানে যথাক্রমে চার্চিল(৪০পয়েন্ট), রিয়েল কাশ্মীর(৩৭ পয়েন্ট), নামধারী(২৯ পয়েন্ট)।
এখানেই অর্ডারের শেষ নয়। আর্বিট্রেশনের খরচ বাবদ ক্যাসের দপ্তরে আলাদা আলাদা ভাবে টাকা জমা দিতে বলেছে ক্যাস। খরচের ৫৫ শতাংশ বহন করতে হবে ভারতীয় ফুটবল ফেডারশনকে, ১৫ শতাংশ করে চার্চিল, রিয়েল কাশ্মীর ও নামধারীকে। এছাড়া আইনি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ইন্টার কাশীকে ৩০০০ সুইস ফ্রাঁ( ভারতীয় মুদ্রায় আনুমানিক ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা) ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে বলেছে ফেডারেশনকে। একই কারণে ইন্টার কাশীকে ১০০০ সুইস ফ্রাঁ (ভারতীয় মুদ্রায় আনুমানিক ১ লাখ ৭ হাজার টাকা) দেবে চার্চিল, রিয়েল কাশ্মীর ও নামধারী।
আইলিগের ম্যাচে ইন্টার কাশীর বিদেশি ফুটবলার মারিও বার্কোকে খেলানো নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল। স্প্যানিশ এই ফুটবলারের নাম দু’বার নথিভুক্ত করা নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। চোটের জন্য মারিও বার্কোর জায়গায় ভিন্ন ফুটবলার নথিভুক্ত করে পরে তাঁকে আবার দলে ফেরানো নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। আইলিগের নিয়মে চোটের কারণে একই মরশুমে তিনবার ফুটবলার বদল করার কথা বলা থাকলেও। আইলিগের কম্পিটিশন কমিটি সেই নিয়ম মেনে ইন্টার কাশীর বার্কোর নাম পুনরায় নথিভুক্ত করার মধ্যে কোনও দোষ খুঁজে পায়নি। তারা ইন্টার কাশীকে ক্লিন চিট দিয়েছিল। কিন্তু ফেডারেশনের আপিল কমিটি সেই সিদ্ধান্ত খারিজ করে ইন্টার কাশীকে দোষী সাব্যস্ত করে চার্চিলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে ট্রফিও তুলে দেয়।
কিন্তু আসল পিকচার তখনও বাকি ছিল। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্যাসে চলে যায় ইন্টার কাশী। ৩১ মে নেওয়া আপিল কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৪ জুন ক্যাসের কাছে ইন্টার কাশী সুবিচার চেয়ে আবেদন করলে, ফেডারেশনের নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় ক্যাস। এবং চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে বলে। বিপদ বুঝে ফেডারেশন হাস্যকর ভাবে চার্চিলের কাছে আইলিগ ট্রফি ফেরত চায়। চার্চিল বেঁকে বসে। বরং হুমকি দেয়, তারা আদালতে চলে যাবে। এর আগে ক্যাসের দপ্তরে নামধারী এফসির বিরুদ্ধে অবৈধ ফুটবলার খেলানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণ হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় করা আবেদনও জিতে আইলিগ ট্রফি ইন্টার কাশীর ঘরে ঢুকল।
ক্যাসে মুখ পোড়ার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে ফেডারেশন সভাপতি কল্যান চৌবে ইন্টার কাশীকে আইলিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘ খেলাধুলোর জগতে ক্যাসের ভূমিকা অনস্বীকার্য সবধরনের আইনি জটিলতার অবসান ঘটাতে। তাদের দেওয়া সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ সম্মান জানাচ্ছি। ইস্টার কাশীকে সরকারি ভাবে আইলিগ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মানছি। তাদের অভিনন্দন। দ্রুত ট্রফি তুলে দেওয়া হবে।’
আইলিগে গত দু’বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে গত দু’মরশুমে প্রোমোশন পেয়ে আইএসএলে খেলেছে পাঞ্জাব এফসি ও মহমেডান স্পোর্টিং। এবার আইলিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ইন্টার কাশীর সামনে আইএসএল খেলার সুযোগ। কিন্তু কোটি টাকার প্রশ্ন, আইএসএল কবে শুরু হবে এফএসডিএল ও ফেডারেশনের বিতর্কের জট ছাড়িয়ে? দেশের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে তাকিয়ে এখন সবপক্ষ সেই জটের অবসানে। ইন্টার কাশীও।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন:ফেসবুক ও টুইটার





