অলস্পোর্ট ডেস্ক: এক মাসেরও বেশি সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে মাঠে নামতে পারেননি হ্যামস্ট্রিংয়ে সমস্যার জন্য। যা নাকি ১৫ বছরের পেশাদার ফুটবল জীবনে আগে কখনও হয়নি তাঁর। চোট সারিয়ে নিজেকে ক্রমশ সুস্থ করে তুলছেন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের তারকা ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ।
গত মরশুমে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে নিয়ে এ বারও সমর্থকদের অনেক আশা। গত মরশুমের চেয়েও বেশি গোলের আশায় এ বার জেসন কামিংস, আরমান্দো সাদিকুদের নিয়ে এসেছিল মোহনবাগান এসজি। কিন্তু গোলের জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে সেই দিমি-র দিকেই। অথচ হ্যামস্ট্রিংয়ের সমস্যার জন্য ১ নভেম্বরের পর আর মাঠে নামতে পারেননি তিনি।
এক দিকে মাঠে নামতে পারছিলেন না পেট্রাটস। অন্যদিকে, দলের সাফল্যের ধারাবাহিকতাও বিঘ্নিত হয় এই কয়েক সপ্তাহে। ১ নভেম্বরের পর মোহনবাগান এসজি যে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে, তার মধ্যে মাত্র একটিতে জেতে তারা, একটিতে ড্র করে ও তিনটি ম্যাচে হারে। এএফসি কাপে হারের হ্যাটট্রিক করে মোহনবাগান। আইএসএলে টানা পাঁচটি ম্যাচে জয়ের পর গত ম্যাচে ঘরের মাঠে ড্র-ও করে তারা। এর কোনওটিতেই ছিলেন না পেট্রাটস।
দলের পারফরম্যান্সের গ্রাফ যখন নীচের দিকে নামতে শুরু করে দিয়েছে, তখনই পেট্রাটসের অভাব অনুভব করছে সবুজ-মেরুন শিবির। তবে শুক্রবার গুয়াহাটিতে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ম্যাচে হয়তো তিনি ফের ফিট হয়ে মাঠে পারবেন। এমনই আশা দেখা গিয়েছে। দলের সঙ্গে অনুশীলন করা শুরু করেছেন অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড। ক্রমশ ম্যাচ-ফিটনেস ফিরে পাচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে।
নিজেও সেই আশা করছেন পেট্রাটস। বুধবার সাংবাদিকদের তেমন আশার কথাই শোনালেন তিনি। বলেন, “আমি অনুশীলনে মনোনিবেশ করছি। এখনও দুদিনের অনুশীলন বাকি আছে। পরের ম্যাচে খেলতে পারব কি না, সেই সিদ্ধান্ত তো আর আমি নেব না। তবে পরের ম্যাচের জন্য তৈরি হয়ে ওঠাই এই মুহূর্তে আমার লক্ষ্য”।
এত দিন ধরে পেশাদার ফুটবলে রয়েছেন। কিন্তু কখনও নাকি হ্যামসস্ট্রিং সমস্যায় তাঁকে ভুগতে হয়নি। নিজেই এ কথা জানালেন রাশিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলের এই সদস্য। বলেন, “এই অভিজ্ঞতা প্রথম হল আমার। ১৫ বছরের ফুটবল জীবনে এর আগে কখনও হ্যামস্ট্রিং সমস্যায় ভুগিনি। শিখলাম, কী ভাবে এই ধরনের চোট সামলে অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে ক্রমশ সুস্থ করে তোলা যায়। নিজেকে ফের বিশ্লেষণ করে নিজের আসল জায়গায় ফিরিয়ে আনার সুযোগও পেয়েছি। আশা করি, এই অভিজ্ঞতা আমাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। পরবর্তী ম্যাচে সেরাটা দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। শুরু থেকে খেলি বা পরিবর্ত হিসেবে নেমে পাঁচ মিনিট খেলি। দলকে ভাল ফল এনে দেওয়ার চেষ্টাই করব”।
চলতি আইএসএলের প্রথম ম্যাচেই জ্বলে ওঠেন পেট্রাটস। পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে ৩-১ জয়ে একটি গোল করেন ও একটি করান। চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধেও একটি গোল পান তিনি। তবে বাকি দুটি ম্যাচে কোনও গোল পাননি বা অ্যাসিস্টও করতে পারেননি। ১ নভেম্বর জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে শেষ মাঠে নামেন। তার পরে আর মাঠে নামতে পারেননি হ্যামস্ট্রিং সমস্যার জন্য।
মরশুমের শুরুতে ডুরান্ড কাপ ফাইনালে একমাত্র ও জয়সূচক গোল করে দলকে খেতাব এনে দেওয়ার পর এএফসি কাপের বাছাই পর্বে মাচিন্দ্রা এফসি-র বিরুদ্ধে দু’টি গোলে অ্যাসিস্ট করেন তিনি। এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের শুরুতেই ওডিশার বিরুদ্ধে ৪-০-র জয়ে একাই জোড়া গোল করেন পেট্রাটস। বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে ২-২ ড্রয়ে একটি গোল করেন। কিন্তু পরের তিনটি ম্যাচে খেলতেই পারেননি।
গত আইএসএল মরশুমে এক ডজন গোল করা এই ৩১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড যদিও বলছেন তাঁর একার পারফরম্যান্স দলের সাফল্যের পক্ষে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু তিনি মাঠে ফিরে দলকে জয়ে ফেরাবেন, এমনই আশা করে রয়েছেন সমর্থকেরা। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে দেখা যাচ্ছে তাঁর দ্রুত মাঠে ফেরার আকুতি।
এই প্রসঙ্গে পেট্রাটস বলছেন, “আমি সব সময়ই নিজেকে উন্নত করে তোলার চেষ্টা করি। প্রতি দিনই যাতে উন্নত পারফরম্যান্স দেখাতে পারি, সেই চেষ্টা করি। এই মরশুমে দল (আইএসএলে) সবে ছ’টা ম্যাচ খেলেছে এবং আমি তার মধ্যে চারটে খেলেছি। আমার নিজের পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যান এখানে বেশি জরুরি নয়। এটা দলগত খেলা এবং আমাদের দলের লক্ষ্য একটাই, জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আমি গোল করি বা অন্য কেউ করুক, সেটা বড় কথা নয়। মরশুমের শেষে দলের সবার হাতে ট্রফি উঠল কি না, সেটাই বড় কথা। এটা ঠিকই যে, প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত লক্ষ্য থাকে। আপাতত আমার লক্ষ্য নিজেকে সুস্থ করে তোলা ও খেলার উপযুক্ত করে তোলা”।
গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা জেসন কামিংসকে এই মরশুমের আগে সই করিয়ে চমকে দিয়েছিল মোহনবাগান এসজি। উদ্দেশ্য ছিল পেট্রাটসকে একজন যোগ্য সঙ্গী দিয়ে তাঁর ওপর থেকে চাপ কমানো। কিন্তু চলতি আইএসএলে এখন পর্যন্ত কামিংস নিজেকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছেন বলে অনেকেরই মনে হচ্ছে না।
পরিসংখ্যান বলছে, এই আইএসএলে কামিংস যেখানে মোট তিনটি শট নিয়েছেন গোলের লক্ষ্যে, সেখানে পেট্রাটস চারটি শট তিনকাঠিতে রেখেছেন। দু’জনেই অবশ্য দু’টি করে গোল ও একটি করে অ্যাসিস্ট করেছেন, গোলের সুযোগ তৈরির দিক থেকে কামিংস সামান্য এগিয়ে (৭-৬)। কিন্তু ক্রস তোলার দিক থেকে (কর্নার-সহ) পেট্রাটস তাঁর স্বদেশীয়র চেয়ে অনেক এগিয়ে (২৬-৫)। নিখুঁত ক্রসের হারের দিক থেকেও পেট্রাটস (৪২.৩১-২০) অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছেন তাঁর সতীর্থকে।
কিন্তু বিপক্ষের বক্সে কামিংস যেখানে এখন পর্যন্ত ২২ বার বলে পা লাগিয়েছেন, সেখানে পেট্রাটস ১৪ বারের বেশি টাচ করতে পারেননি। তিনি যেমন গোল তৈরি ও গোল করা দুই দিকেই সমান মনযোগী, কামিংসের গোল করার প্রবণতাই বেশি, গোল তৈরি করা নিয়ে ততটা আগ্রহী লাগছে না তাঁকে। অন্তত পরিসংখ্যান সে রকমই বলছে। পেট্রাটসের অনুপস্থিতিতে কামিংস আরও দায়িত্বশীল হবেন বলে যখন ভাবা হয়েছিল, তখনও তিনি তা পারেননি।
সমর্থকেরা কামিংসের কাছ থেকে আরও বেশি তৎপরতা আশা করলেও, স্বদেশীয় তারকার পাশেই দাঁড়িয়েছেন পেট্রাটস। তিনি বলেন, “এখন জেসনকে নিয়ে যে ধরনের প্রশ্ন উঠছে, গত বছর লিস্টনকে নিয়েও একই রকমের প্রশ্ন উঠেছিল। ফুটবলে চড়াই-উতরাই থাকে। আমি বলছি না ও সেরা জায়গায় আছে বা নেই। জেসন নিজের সেরাটাই দিচ্ছে। প্রত্যেকেই চায় তার সময় আসুক। হয়তো দেখা যাবে পরের ম্যাচে জয়সূচক গোলটি ও-ই করবে। তখন আর এ সব আলোচনার দরকার পড়বে না”।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “ইতিমধ্যেই জেসন দলের হয়ে অনেকগুলো গোল করেছে। আরও করবে। এখনই এত আগে থেকে কারও পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে তার সম্পর্কে কোনও ধারণা করা বোধহয় ঠিক হবে না। ওর সময় এলে ও নিশ্চয়ই আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে। ওর মতো হাই প্রোফাইল খেলোয়াড়কে নিয়ে বেশি প্রত্যাশা তো থাকবেই। এটাই ওর কৃতিত্ব। এটা খারাপ কিছু না। সারা দুনিয়ায় এমন হয়ে থাকে। বিশ্বের সেরারাও কেউ একটু খারাপ খেললেই তার সমালোচনা শুরু হয়। তবে আমার বিশ্বাস, অবস্থার পরিবর্তন হবেই”।
গোলের জন্য শুধু ফরোয়ার্ডদের দিকে না তাকিয়ে দলের সবারই এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত বলে মনে করেন পেট্রাটস। যেমন গত ম্যাচে নেন দুই ডিফেন্ডার ব্রেন্ডান হ্যামিল ও আশিস রাই। তাঁর মতে, “সারা মরশুমে তো আর দু-একজন গোল করে না। ডিফেন্ডাররাও যদি গোল করতে পারে, তা হলে তো ভালই। ইদানীং যেমন আমাদের ব্রেন্ডান ও রাই গোল করল। এটা খুবই ভাল লক্ষণ। অনেক সময় ডিফেন্ডাররা ওভারল্যাপ করে উঠে গোল করলে অনেকে প্রশ্ন তোলে, ফরোয়ার্ডরা গোল করতে পারছে না কেন? কিন্তু এটা একটা দলের ভাল দিক। আশা করি, আমাদেরও সে রকমই হবে, সবাই গোল করবে। প্রয়োজনে প্রত্যেকে নেমে এসে ডিফেন্সও করবে। এটাই তো দলগত প্রচেষ্টা”।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার