সুচরিতা সেন চৌধুরী, ভুবনেশ্বর: কলকাতার বাইরে ডার্বি মানে কিছুটা ম্যারম্যারে। কারণ দুই দলের সমর্থকরা সব সময় গ্যালারি ভরাাতে পারেন না। তবে এবারটা কিন্তু তেমন হচ্ছে না। বরং ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে যুবভারতীর ঝড় উঠবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পুরো যুবভারতী ক্রিড়াঙ্গনের আবহ না পাওয়া গেলেও এক টুকরো সল্টলেক স্টেডিয়ামের আবহ যে এখানে তৈরি হবে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এক লাইনে বলা যেতেই পারে, কলকাতা থেকে ১৯ জানুয়ারি সব রাস্তাই এসে মিলবে এই কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে। শিয়ালদহ, হাওড়া, বিধাননগর রেল স্টেশনের আবহ নিশ্চিত তৈরি হবে ভুবনেশ্বর স্টেশনকে ঘিরে। কে বলতে পারে ১৮ জানুয়ারি রাাত থেকেই ওড়িশার এই স্পোর্টস ক্যাপিটালের দখল নেবেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানর সমর্থকরা।
যা খবর কলকাতা থেকে বাস বোঝাই হয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই ভুবনেশ্বরর উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন দুই দলের সমর্থকরা। আবার খেলা শেষে সেই বাসেই ফিরে যাওয়া কলকাতায়। এদিন তো দুই দলের কোচ ফুটবলাররা এই আবেগের কথাই বার বার বলছিলেন। কুয়াদ্রাত তো বলছিলেন, বার্সোলানো থেকে এসে কলকাতার ফুটবল আবেগের সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। আর সেই সব সমর্থকদের জন্যই দুই দলের ফুটবলার থেকে কোচ ডার্বি জেতার জন্য মরিয়া থাকেন। এবারও সেই খিদেটা চোখে পড়ছে।
এদিকে ওড়িশা এফসি ছাড়া সুপার কাপের সব ম্যাচেই ছিল ফ্রি-এন্ট্রি। কারণ দর্শক হওয়ার প্রত্যাশা কেউ করেননি। তবে ডার্বিতে রয়েছে টিকিটের ব্যবস্থা। অনলাইনে ১০০ ও ২০০ টাকার টিকিট ইতিমধ্যেই শেষ। কিন্তু চাহিদ তুঙ্গে। ট্রেনের টিকিট নেই, লম্বা ওয়েটিং লিস্ট। ভুবনেশ্বরে হোটেলের ঘরও পাওয়া যাচ্ছে না। সবটাই যে ডার্বি মোড তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। বৃহস্পতিবারের ভুবনেশ্বর যে মেতে উঠবে লাল-হলুদ আর সবুজ-মেরুন দ্বৈরথে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। ১২ হাজারের গ্যালারির প্রায় পুরোটাই ভরাবেন দুই দলের সমর্থকরা। পূর্ব দিকের স্ট্যান্ড বরাদ্দ করা হয়েছে মোহনবাগনের জন্য ও দক্ষিণের স্টান্ড ইস্টবেঙ্গলের।
বুধবার সকালে দুই দলের কোচ ও ফুটবলারদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই পাওয়া গেল সবাইকে।বিকেলে ম্যাচের সময়ই দুই দলের অনুশীলন দুই প্রান্তের দুই মাঠে। সন্ধে সাড়ে সাতটায় যখন সেভেনথ ব্যাটেলিয়নের মাঠে দল নিয়ে শেষবেলার অনুশীলনে নেমে পড়লেন কার্লেস কুয়াদ্রাত তখনই ক্যাপিটাল ফুটবল এরিনায় হাবাসের অধিনে অনুশীলনে মাতলেন দিমিত্রি, কামিংস, কিয়ানরা। মাঠেও দুক্ষকেই পাওয়া গেল লড়াকু মুডে। সতর্ক কোচেরা। যদিও মোহনবাগানের বেঞ্চে হাবাস নয় বসবেন ক্লিফোর্ড মিরান্ডাই। জানা যাচ্ছে হাবাসের এখনও ক্লিয়ারেন্স এসে পৌঁছয়নি।


এদিন অনুশীলনে দলের আগেই পৌঁছে গেলেন হাবাস। পরে ঢুকলো টিম। । আনোয়ার আলিকে বেশ কয়েদিন ধরেই দলের সঙ্গে মাঠে নামছেন, যদি ফিজিক্যাল ট্রেনিংই করছেন ফিজিওর সঙ্গে এদিন তাঁর সঙ্গে দেখা গেল হামতেকে। আনোয়ারের এখনই যে ফেরা হচ্ছে না তা সকালেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ক্লিফোর্ড। মনে করা হচ্ছে আইএসএল-এর দ্বিতীয় পর্বে তাঁকে দলে ফেরানো হতে পারে। ততদিনে চলে আসবেন জাতীয় দলের প্লেয়াররাও। তার আগে কলিঙ্গ সুপার কাপের সেমিফাইনালের পাশাপাশি ডার্বি জিততে মরিয়া দুই দলই। গভীরে গিয়ে দেখলে দেখা যাবে তুলনায় ডার্বি জয়ের ইচ্ছেটা অনেকটাই এগিয়ে থাকবে।
এদিন শুরু থেকেই মোহনবাগান বল নিয়ে অনুশীলনে মাতল। কখনও নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া তো কখনও লং শট। হাবাসের পাসিং ফুটবল থেকে লং শট, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জন্য সবটাই তৈরি রাখছেন কোচ। কুয়াদ্রাত বেশ শান্ত। সব সময় হাসি খুশি থাকা কোচ রীতিমতো মজা করতেও ছাড়েন না। কখনও সাংবাদিকদের ইস্ট-মোহন সমর্থক বলে ভাগ করে দেন তো কখনও হাসতে হাসতে ক্লেটনে হিসেব শুধরে দেন। টানা কত ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল অপরাজিত তা মনে করিয়ে দেন ভরা সাংবাদিক সম্মেলনে। সব মিলে ইস্টবেঙঙ্গল ড্রেসিংরুমর পরিবেশ এই মুহূর্তে দাড়িয়ে বেশ চনমনে। আর কথায় আছে ড্রেসিংরুমের পরিবেশের প্রভাব খেলায় পড়ে। তাই হয়তো অনেকেই এই ডার্বিতে এগিয়ে রাখছেন লাল-হলুদকে।
তবে ডার্বিতে কেউ কোনও দিন এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকেনি, ভবিষ্যতেও থাকবে না। মাঠের ওই ৯০ মিনিটই শেষ কথা বলবে। দিন যার ম্যাচ তার। তাই হয়তো কুয়াদ্রাত মনে করিয়ে দিলেন ইতিহাসকে। তিনি মনে করিয়ে দেন, ডুরান্ডের প্রথম ডার্বির আগে অনেকেই বলেছিলেন , এই ম্যাচে মোহনবাগান ৫-০ গোলে জিতবে। ইতিহাস বদলে দেবে (ইস্টবেঙ্গলের ৫-০ গোলে জয়ের ম্যাচ)। কিন্তু কী হয়েছিলেন। ইস্টবেঙ্গল জিতেছিল। এবার ঠিক উল্টো পরিস্থিতি। বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই মনে করছেন এই ডার্বি ইস্টবেঙ্গলের। কিন্ত আসল ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক ঘণ্টা।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার