Wednesday, February 19, 2025
No menu items!
Google search engine
Homeফুটবলকলিঙ্গ সুপার কাপ-এ ডার্বির পাশাপাশি অন্য লড়াইও থাকছে ইস্ট-মোহনের সামনে

কলিঙ্গ সুপার কাপ-এ ডার্বির পাশাপাশি অন্য লড়াইও থাকছে ইস্ট-মোহনের সামনে

অলস্পোর্ট ডেস্ক: ইন্ডিয়ান সুপার লিগের দশম মরশুম যখন রীতিমতো জমজমাট, সেই সময়ে লিগের দলগুলির সামনে আরও এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। মঙ্গলবার থেকে কলিঙ্গ সুপার কাপ-এর আসর বসতে চলেছে ওডিশা এফসি-র ‘হোম’ ভুবনেশ্বরে। এই নক আউট টুর্নামেন্টে প্রতি বারের মতো এ বারেও প্রতিটি দলের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ এবং যথারীতি আইএসএলে অংশগ্রহনকারী কলকাতার দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের কাছেও এটি বড় পরীক্ষা। 

সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের উদ্যোগে এই টুর্নামেন্টে গতবার ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ১১টি দলই অংশ নিয়েছিল। সঙ্গে পাঁচটি আই লিগের ক্লাবও অংশ নেয় এই টুর্নামেন্টে। এ বারও আইএসএলে অংশগ্রহনকারী ১২টি ক্লাবই এই টুর্নামেন্টে খেলবে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আই লিগের ক্লাবগুলিকেও। তাদের মধ্যে পাঁচটি ক্লাব এই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

২৪ ডিসেম্বর আই লিগ টেবলে যে রকম অবস্থান ছিল, সেই অনুযায়ী সেরা তিনটি দল সরাসরি এই কলিঙ্গ সুপার খেলছে। শেষ দুই দলের মধ্যে একটি প্লে-অফ ম্যাচের গণ্ডী পেরিয়ে মূলপর্বে খেলার যোগ্য অর্জন করবে। ‘এ’ গ্রুপে কলকাতার দুই প্রধান মোহনবাগান এসজি ও ইস্টবেঙ্গল এফসি, হায়দরাবাদ এফসি এবং শ্রীনিধি ডেকান এফসি রয়েছে। 

‘বি’ গ্রুপে রয়েছে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি, নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি, জামশেদপুর এফসি ও শিলং লাজং এফসি। ‘সি’ গ্রুপে মুম্বই সিটি এফসি, চেন্নাইন এফসি, পাঞ্জাব এফসি ও গোকুলাম কেরালা এফসি এবং ‘ডি’ গ্রুপে এফসি গোয়া, ওডিশা এফসি, বেঙ্গালুরু এফসি ও ইন্টার কাশী (সোমবার প্লে অফে রাজস্থান ইউনাইটেডকে ৫-০-য় হারিয়ে)। 

ডার্বিতেই গ্রুপের ফয়সালা?  

অর্থাৎ, আসন্ন কলিঙ্গ সুপার কাপে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও ইস্টবেঙ্গল এফসি একই গ্রুপে এবং গ্রুপ লিগেই তারা একে অপরের মুখোমুখি হতে চলেছে। ভারতীয় ফুটবলের এই মহারণ হতে চলেছে ১৯ জানুয়ারি। দুই দলের কাছেই এটি হতে চলেছে তাদের শেষ গ্রুপ ম্যাচ। প্রতি গ্রুপ থেকে যেহেতু একটি করে দল সেমিফাইনালে উঠবে, তাই এই ম্যাচই কার্যত হয়ে উঠতে পারে কোয়ার্টার ফাইনাল, যা এর আগে বহুবার হয়েছে। 

গ্রুপ হিসেবে যে খুব কঠিন গ্রুপ এটি, খাতায় কলমে অন্তত তা বলা যায় না। কারণ, গ্রুপের অপর আইএসএল দল হায়দরাবাদ এফসি আইএসএলেই বেশ খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তাদের এগারোটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেলেও একটিও ম্যাচে জিততে পারেনি। চারটি ড্র করেছে এবং সাতটিতে হেরেছে। এই চারটি ড্রয়ের ফলে চার পয়েন্ট নিয়ে তারা লিগ টেবলের একেবারে শেষে। এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে কলিঙ্গ সুপার কাপে তাদের ভাল ফল করার সম্ভাবনা কমই বলা চলে। 

আইলিগে আপাতত তিন নম্বরে থাকা শ্রীনিধি ডেকানের সামনে তিন আইএসএল ক্লাবকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার বড় সুযোগ থাকছে। সুপার কাপে অংশগ্রহনকারী আই লিগ ক্লাবগুলির মধ্যে তারাই শীর্ষে। ফলে তাদের কম গুরুত্ব দেওয়ার ভুল দুই প্রধান করবে বলে মনে হয় না। আইএসএলে খেলা আলবিনো গোমস, এলি সাবিয়া, গুরমুখ সিং, মহম্মদ সাজিদ ধোত এই দলে রয়েছেন। তাঁরা যে প্রতিপক্ষদের কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, এমনই আশা করা যায়। তবে আইএসএলে খেলা দলগুলির বিরুদ্ধে কতটা সফল হতে পারবেন, সেটাই প্রশ্ন। 

টুর্নামেন্টের প্রথম দিনই আইএসএলে গতবারের নক আউট চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের মুখোমুখি হবে শ্রীনিধি ডেকান। অর্থাৎ, প্রথম দিনই বোঝা যাবে কতটা তৈরি হয়ে এসেছে তারা। আই লিগে শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতে জিতেছে ডেকান। হারিয়েছে দিল্লি এফসি ও নামধারি-কে। কিন্তু শীর্ষে থাকা কলকাতার মহমেডান স্পোর্টিং ও ছ’নম্বরে থাকা গোকুলম কেরালা এফসি-র কাছে হেরে লিগ টেবলে কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়েছে তারা। এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোটা তাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

বাগানে বিদেশিরাই ভরসা  

এ বার আসা যাক কলকাতার দুই প্রধানের কথায়। সাত ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর বছরের শেষে টানা তিনটি ম্যাচে হেরে বিপর্যস্ত মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। দলের সাত জন ফুটবলার কাতারে ভারতের এএফসি এশিয়ান কাপের দলে রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে অনেকেরই চোট। তার মধ্যে নবতম সংযোজন লালরিনলিয়ানা হ্নামতে। ফলে দলের বিদেশিদের ওপর ভরসা করতেই হবে দলকে। এর মধ্যে আবার কোচ বিদায়ের পালাও সেরে ফেলেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। গত আইএসএলে যিনি দলকে কাপ জিতিয়েছিলেন ও এ বার ডুরান্ড কাপে যিনি দলকে চ্যাম্পিয়ন করেন, সেই হুয়ান ফেরান্দোকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বছর শেষের ভরাডুবির দায়ে। শুধু যে আইএসএলে ব্যর্থ হয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনী, তা নয়। এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বেও ব্যর্থ হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছে তারা। 

সব মিলিয়ে এ বছর শেষ ১১টি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জিততে পেরেছে তারা। দু’টি ম্যাচ ড্র হয়েছে এবং বাকি ছ’টি ম্যাচেই হেরেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। গত ২৪ অক্টোবরের পর থেকে পরিসংখ্যান এ রকমই। এই হারগুলির মধ্যে আইএসএলের শেষ তিনটি ম্যাচে হার ছাড়াও ছিল এএফসি কাপে টানা তিনটি ম্যাচে হার। ওডিশা এফসি-র কাছে তারা ২-৫-এ হারে। বসুন্ধরা কিংসের কাছে হারে ১-২-এ। এমনকী মাজিয়া এসআরসি-র কাছেও তাদের হারতে হয় এক গোলে।

এই অবস্থা থেকে নিজেদের তুলে এনে সুপার কাপ সেমিফাইনালে উঠতে গেলে মোহনবাগানের বিদেশিদের আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। সেই সুযোগও রয়েছে। কারণ, এএফসি-র ক্লাব টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী প্রথম এগারোয় ছ’জন বিদেশি ফুটবলারকে রাখা যাবে। আইএসএলে দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, আরমান্দো সাদিকু, জেসন কামিংস, হেক্টর ইউস্তে, হুগো বুমৌসদের কাউকেই খুব একটা ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলতে দেখা যায়নি। তবে লিগে সেরা ভারতীয় খেলোয়াড়রা তাঁদের পাশে ছিলেন বলে দল হিসেবে সাফল্য পেয়েছিল তারা। কিন্তু যেহেতু সেরা ভারতীয়রা কাতারে এবং আনোয়ার আলি, আশিক কুরুনিয়ানদের গুরুতর চোট, তাই কামিংসদেরই মূল দায়িত্ব নিতে হবে।

ফেরান্দোকে সরিয়ে যাঁকে কোচ করে নিয়ে আসা হচ্ছে, সেই দলের টিডি আন্তোনিও লোপেজ হাবাস ভিসার সমস্যায় সুপার কাপের প্রথম ম্যাচের আগে দেশে পৌঁছতে পারছেন না। ফলে এই টুর্নামেন্টের শুরুটা করতে হবে সহকারী কোচ ক্লিফোর্ড মিরান্ডাকেই। পরে হাবাস এসে গেলে হয়তো তিনিই দলের হাল ধরবেন। তবে আপাতত তিনি ফোনে নির্দেশ দিচ্ছেন বলে ক্লাব সূত্র জানিয়েছে।  

লাল-হলুদে প্রত্যয়, প্রত্যাশা 

মোহনবাগানে যতটা হাহাকার, ইস্টবেঙ্গল শিবিরে কিন্তু ততটা দুশ্চিন্তা নেই। তাদের ডিফেন্ডার লালচুঙনুঙ্গা ও তারকা উইঙ্গার নাওরেম মহেশ সিং রয়েছে কাতারে ভারতীয় শিবিরে। হরমনজ্যোৎ সিং খাবরার চোট। বাকিদের কিন্তু পাচ্ছেন ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত, যিনি প্রায় চার বছর পরে লাল-হলুদ জনতাকে আশার আলো দেখিয়েছেন। ডুরান্ড কাপে প্রথমে ৫৫ মাস পর কলকাতা ডার্বি জিতে শেষ পর্যন্ত চিরপ্রতিদ্বন্দী মোহনবাগানের কাছেই হেরে রানার্স আপ হওয়ার পর আইএসএলে গত তিন বারের চেয়ে অনেক ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। 

ধাপে ধাপে এগোচ্ছে তারা। এই প্রথম তাদের গোলপার্থক্যে ইতিবাচক সংখ্যা দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ যে পরিমান গোল তারা দিয়েছে, তার চেয়ে কম গোল খেয়েছে। একই মরশুমে পাঁচটি ম্যাচে ক্লিনশিট তারা আর কোনও মরশুমে রাখতে পারেনি। পরপর টানা তিন ম্যাচে গোলশূন্য ড্র আইএসএলের ইতিহাসে তারা ছাড়া আর মাত্র দু’টি দল করতে পেরেছে। বছরের শেষ ম্যাচে ওডিশা এফসি তাদের বিরুদ্ধে মাত্র একটি শট গোলে রাখতে পেরেছে। এ মরশুমে এমন আর কখনও হয়নি সের্খিও লোবেরার দলের। প্রিয় দল সম্পর্কে এমন পরিসংখ্যান বহু বছর পরে শুনতে পাচ্ছে লাল-হলুদ জনতা। তাই সুপার কাপে ভাল ফলের ব্যাপারে আশাবাদী তারা। 

ডার্বি নিয়েও বেশ আগ্রহী ইস্টবেঙ্গল শিবির এবং সমর্থকেরা। মোহনবাগানকে এই অবস্থায় পেয়ে ডুরান্ড কাপ ফাইনালে হারের বদলা নিতে মরিয়া তারা। কোচ কুয়াদ্রাত আনন্দবাজার পত্রিকা-কে বলেছেন, “একই মরসুমে দ্বিতীয়বার ডার্বি জেতার পরীক্ষা আমাদের সামনে। দীর্ঘদিন এই সুযোগ আসেনি। ছ’মাসের মধ্যে ফের ডার্বি জিতে সমর্থকদের গর্বিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য”। 

সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে গোলের সংখ্যা বাড়াতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। আইএসএলে যে চার ফুটবলার গোল করেছেন, তাঁদের মধ্যে একজনকে পাচ্ছেন না কুয়াদ্রাত। মহেশকে ছাড়াই আক্রমণ ও গোল দুটোই ঠিকমতো করা ইস্টবেঙ্গলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। মহেশের অনুপস্থিতিতে ছন্দে ফেরা প্রয়োজন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিওর, যিনি ডুরান্ডে গোল পেলেও আইএসএলে না পেয়েছেন গোল, না করেছেন অ্যাসিস্ট। অন্যান্য বিদেশিদের ওপর অনেকটাই নির্ভর করবেন কুয়াদ্রাত। বোরহা হেরেরা, হোসে পার্দো, হিজাজি মাহের, সল ক্রেসপো ও ক্লেটনের দিকে নজর থাকবে সমর্থকদের। 

নজর থাকবে বঙ্গসন্তান শৌভিক চক্রবর্তীর ওপরেও। গত বছর চোটের জন্য খুব কম ম্যাচ খেলতে পেরেছিলেন শৌভিক। এ বছর কিন্তু কুয়াদ্রাতের সাহায্যে নিজেকে অনেক উন্নত ও কার্যকরী করে তুলেছেন তিনি। আইএসএলে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবও জিতে নেন তিনি। মুম্বইয়ের গ্রেগ স্টুয়ার্ট, ওডিশার আহমেদ জাহুর মতো বিপজ্জন ফুটবলারদের অকেজো করে রাখার কাজে শৌভিক বেশ সফল হয়েছেন। সুপার কাপেও হয়তো তাঁর এই ভূমিকায় দেখা যাবে। মাঝমাঠে তিনি এখন লাল-হলুদের অন্যতম প্রধান ভরসা। তিনি তৎপর থাকায় বোরহা হেরেরা আক্রমণে অনেক বেশি অবদান রাখতে পারছেন। ফলে ইস্টবেঙ্গলের গোলের সম্ভাবনাও বাড়বে। 

১৯ জানুয়ারি কলকাতা ডার্বির অপেক্ষায় যেমন থাকবেন দুই দলের সমর্থকেরা, তেমনই সুপার কাপে তাঁদের প্রিয় দল কতটা এগোতে পারবে, তাও তাঁদের কাছে আকর্ষণীয় বিষয়। এই টুর্নামেন্টে ফলের প্রভাব হয়তো আইএসএলের দ্বিতীয় লিগেও পড়বে। তবে কাতারের সঙ্গ সঙ্গে চলতি মাসে ভারতীয় ফুটবল মহলের নজর যে ভুবনেশ্বরেও থাকবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।       

(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments