সুচরিতা সেন চৌধুরী: যুবভারতীর গ্যালারি জুড়ে জ্বলল মশাল, উঠল হুঙ্কার, “জয় ইস্টবেঙ্গল”। এই শীতের বৃষ্টিভেজা শহরেও গ্যালারি মাতালেন প্রায় ১৭ হাজার সমর্থক। দু’ম্যাচ পর আবার দলে ফিরলেন ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম ভরসা দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস। প্রথম দলে রাখা হল না নাওরেম মহেশ সিংকেও। ৪-২ গোলে গত ম্যাচে জয়ের দলে দুটো পরিবর্তন করলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। সেই জায়গায় প্রথম দলে জায়গা করে নিলেন পিভি বিষ্ণু। আগের ম্যাচে তিনি দ্বিতীয়ার্ধে নামার পরই খেলাটা ঘুরে যায়। তার পুরস্কার পেলেন হাতে নাতে। অন্যদিকে প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়া ডেভিড সেই ম্যাচে গোল করেছেন, করিয়েওছেন কিন্তু দিয়ামান্তাকোসের মতো তারকাকে জায়গা করে দিতে তাঁকে বাইরে বসতেই হল। এদিনই বছরের শেষ হোম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। প্রতিপক্ষ জামশেদপুর। ১-০ গোলে জিতেই ঘরের মাঠে বছর শেষ করল ইস্টবেঙ্গল এফসি।
পঞ্জাব এফসির বিরুদ্ধে গত ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিল দলটা সেখান থেকেই যেন এই ম্যাচ শুরু করল। প্রথমার্ধ গোলশূন্যভাবে শেষ করলেও এক কথায় কোয়ালিটি ফুটবল খেলল অস্কার ব্রুজোঁর দল। ভাল ফুটবলের নজির রেখেই দ্বিতীয়ার্ধে নামল দুই দল। এক কথায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের অজস্র সুযোগ নষ্ট। না হলে প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যেতে পারত ইস্টবেঙ্গল। সেদিক থেকে দেখতে গেলে প্রথমার্ধে তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি জামশেদপুর এফসি। তবে তাদের গোলের নিচে অ্যালবিনো গোমেজ না থাকলে বিপদ বাড়ত। একাই বাঁচালেন একাধিক গোল।
ম্যাচ শুরুর সাত মিনিটের মধ্যেই নিশ্চিত গোলের সুযোগ আটকে যায় পোস্টে। প্রথমে ক্লেটনের শট বাঁচিয়ে দেন গোলকিপার। সেই বল ক্লিয়ার হয়ে পেয়ে যান আনোয়ার আলি। প্রায় মাঝমাঠ থেকেই তাঁর জোড়াল শট ইনসাইড পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায় বাইরে। এর পরই ১৪ মিনিটে রাকিপের চোটে বড় ধাক্কা খায় ইস্টবেঙ্গল। তাঁকে তুলে জিকসন সিংকে নামাতে বাধ্য হন কোচ। এর পর ৩৭ মিনিটে আনোয়ার, ক্লেটন হয়ে বক্সের মধ্যে শুধু গোলকিপারকে পেয়েও তাঁরই হাতে বল জমা দেন নন্ধা কুমার। ৪০ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে ক্লেটনের শট বাঁচিয়ে দেন সেই অ্যালবিনো। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবে।
দিয়ামান্তাকস এদিন ইস্টবেঙ্গলের ভাল ফুটবলের মধ্যেই সব থেকে বড় বিতর্কিত অংশ। তিনি একাই যেভাবে গোলের সামনে গিয়ে বার বার খেই হারালেন তাতে তাঁর চোট পুরোপুরি সেরে উঠেছে, এমনটা মনে হল না। তবুও ৬০ মিনিটে গোলের মুখ খুললেন সেই দিয়ামান্তাকসই। তা বলে ইস্টবেঙ্গলের ভাল ফুটবলের মধ্যে তাঁকে রাখা যায় না। বরং এদিন ইস্টবেঙ্গলের খেলাটাকে দারুণভাবে পরিচালনা করলেন ক্লেটন সিলভা। প্রায় মাঝমাঠ থেকেই গোলের বলটি তুলে এনে নন্ধাকে দিয়েছিলেন ক্লেটন। নন্ধার থেকে বল পেয়ে এবার আর ভুল করেননি দিয়ামান্তাকস।
গোল পেয়েই ডেভিডকে ডেকে নিলেন ব্রুজোঁ। দিয়ামান্তাকসকে তুলে নামিয়ে দিলেন তাঁকে। কারণ গত ম্যাচে কোচের ভরসা জিতে নিয়েছিলেন তিনি। তার পুরস্কার হিসেবে এটা প্রাপ্য ছিল ডেভিডের। প্রথম গোল পাওয়ার আট মিনিটের মধ্যেই বিষ্ণুর শট ক্রসবারে না লাগলে ব্যবধান বাড়াতে পারত ইস্টবেঙ্গল। তবে পর পর দুই ম্যাচে জয়ের পর একটা কাঁটা তো থেকেই যাবে কোচের মনে। দল যেভাবে গোল নষ্ট করেছে এদিন তা নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে হবে অনুশীলনে। সঙ্গে দিয়ামান্তাকসের ফর্ম ও চোটের অবস্থা নিয়েও ভাবতে হবে। ভাবতে হবে নন্ধা কুমারের ফর্ম নিযেও। তবে সব কিছুর মধ্যে এদিনের প্রাপ্তি ১২ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের ১০ নম্বরে উঠে আসা।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন সিং গিল, মহম্মদ রাকিপ (জিকসন সিং), হেক্টর ইউয়েস্তে, হিজাজি মেহের, লাল চুংনুঙ্গা, আনোয়ার আলি, নন্ধা কুমার (নাওরেম মহেশ সিং), সৌভিক চক্রবর্তী, পিভি বিষ্ণু, ক্লেটন সিলভা, দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস (ডেভিড)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার