সুচরিতা সেন চৌধুরী: এক কথায় ঘটনাবহুল ম্যাচ। যা ঘটল শেষ ২০ মিনিটে। আইএসএল ২০২৪-২৫-এ এখন ইস্টবেঙ্গলের আর হারানোর কিছু নেই। হারানোর কিছু নেই মহমেডানেরও। সব আশা শেষ হয়ে গিয়েছে আগেই। তার পরও এই ম্যাচ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই লিগ দুই দলই শেষ করতে চায় দলের সম্মানের স্বার্থে। যদি জিতে কয়েক ধাপ ওঠা যায়। এই আইএসএল-এর শেষ কলকাতা ডার্বি যখন খেলতে নেমেছিল দুই দল তখন লিগ টেবলের ১১ নম্বরে দাঁড়িয়ে ইস্টবেঙ্গল ও সবার শেষে ১৩-তে দাঁড়িয়ে মহমেডান। এক কথায় সমানে সমানে লড়াই। তবে শেষের দিক থেকে। শেষ হাসি হাসল ইস্টবেঙ্গলই ৩-১ গোলে জিতে। টেবলে না উঠলেও পয়েন্ট ১৮ থেকে ২১-এ পৌঁছলো ইস্টবেঙ্গলের।
ম্যাচের আগের দিনই সাংবাদিক সম্মেলনে ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোঁ জানিয়ে দিয়েছিলেন এই ম্যাচে প্রথম থেকেই খেলবেন দলের নবাগত বিদেশি মেসি। প্রথম থেকে নেমেই কিছু ঝলক দেখালেন ঠিকই কিন্তু তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ দলের বাকিরা বিশেষ করে দিয়ামান্তাকোস। যার অভিযোগ ছিল, তিনি নাকি গোলের বল পাচ্ছেন না। এদিন পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারলেন না। তাও তাঁকে পুরো ম্যাচে মাঠে রেখে দিলেন কোচ। যদিও গোল করে প্রথমে এগিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলই। ২৭ মিনিটে পিভি বিষ্ণুর একটা থ্রু ধরে প্রতিপক্ষের গোলে অসাধারণ ফিনিশ করলেন নাওরেম মহেশ। ১-০ গোলে এগিয়ে গেল লাল-হলুদ ব্রিগেড।
তার আগে অবশ্য একটা নিশ্চিত গোলের সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করলেন মহমেডানের মনভীর সিং। গোলকিপারের সঙ্গে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতেও বলের সঙ্গে সঠিক সংযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ তিনি। না হলে এগিয়ে যেতে পারত মহমেডানই। সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনেও। নিশু কুমারের কর্নার গোলকিপারের হাত ছুঁয়ে ক্রসবারে লেগে বেরিয়ে গেল। প্রথমার্ধের শেষে মার্কের শট কোনওরকমে বাঁচালেন গিল। শেষ মুহূর্তে বিষ্ণু যেভাবে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের গোলে ঢুকে পড়েছিলেন তা থেকে গোল নিশ্চিতই ছিল কিন্তু বাঁচিয়ে দিলেন পদম ছেত্রী।
৫৯ মিনিটে সন্তোষ ট্রফির নায়ক রবি হাঁসদা উঠে দাঁড়াতেই মহমেডান গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস দেখা গেল চোখে পড়ার মতো। তার আগে থেকেই তাঁকে নামানোর আবেদন আসছিল গ্যালারি থেকে। সে কথা শুনলেন কোচ মেহেরাজউদ্দিন। বিদেশি মার্কের পরিবর্তে এক্কেবারে বঙ্গ সন্তান নামিয়ে খেলার হাল ধরার চেষ্টা করলেন দলের কোচ। আর তখনই নন্ধা কুমারকে তুলে সল ক্রেসপোকে নামালেন ইস্টবেঙ্গল কোচ ব্রুজোঁ। এক গোলের ব্যবধান যে যথেষ্ট নয় তা সকলেরই জানা। ৬৩ মিনিটে তিন গজ বক্সের মধ্যে থেকে মহেশের অসাধারণ শট ততধিক অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দিলেন পদম।
তবে তার পর ব্যবধান বাড়াতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি ইস্টবেঙ্গলকে। প্রতিপক্ষের লালরিনফেলার পা থেকে বল কেড়ে পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি। এবার আর তাঁর মাপা পাস হেলায় হারাননি সল ক্রেসপো। নেমেই অসাধারণ ফিনিশ করলেন এবং ২-০ গোলে এগিয়ে দিলেন দলকে। কিন্তু তাতে স্বস্তি এল না। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ব্যবধান কমাল মহমেডান। রবি হাঁসদার পাস থেকে ফ্রাঙ্কার শট গিল ঝাঁপিয়েও ধরতে পারলেন না। ৭৫ মিনিটে মেসিকে তুলে ডেভিডকে নামিয়ে দিলেন ব্রুজোঁ।
ম্যাচের সব থেকে উত্তেজক মুহূর্ত তৈরি হল ৭৭ মিনিটে ইস্টবেঙ্গল বক্সের মধ্যে। মহমেডানের প্রথম আক্রমণ কোনওরকমে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন গিল। ফিরতি বলে আইএসএলে অভিষেক হওয়া রবি হাঁসদার শট ক্রসবারে লেগে ফেরে আবারও ফিরতি বল মহমেডানের গোলমুখি শট গোললাইন সেভ করেন আনোয়ার আলি। ২-২ হওয়া ছিল তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। যা ভাগ্যের জোড়ে বাঁচল ইস্টবেঙ্গল।
এর মধ্যেই অভিনব পরিবর্তন করলেন অস্কার ব্রুজোঁ। যা নিয়ে ক্ষোভ দেখা গেল গিলের মধ্যে। ৮৮ মিনিটে তাঁকে তুলে দেবজিত মজুমদারকে নামাতে গেলে মাঠ ছাড়তে রাজি হচ্ছিলেন না প্রভসুখন সিং গিল। রীতিমতো বিরক্তি নিয়ে গোল পোস্টের পিছন দিয়ে বেরনোর সময় কর্নার ফ্ল্যাগ হাত দিয়ে মেরে তিনি তাঁর ক্ষোভও প্রকাশ করেন। নিজের বেঞ্চ পর্যন্ত যেতে যেতে তাঁর অভিব্যক্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল মোটেও খুশি নন। আর ঠিক তখনই পরিবর্ত হিসেবে নেমে প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল জার্সিতে গোল করে যান ডেভিড। ৮৯ মিনিটে আনোয়ারের ক্রস প্রভাত লাকরা বক্সের মধ্যে বুক দিয়ে নামিয়ে দিয়েছিলেন ডেভিডকে। সেই বল ধরে ঘুরেই শট নিলেন গোলে। এবার আর বাঁচাতে পারেননি ছেত্রী। আর তাতেই গিলের সব রাগ গলে জল হয়ে গেল।
মহমেডান: পদম ছেত্রী, জো জোহেরলিয়ানা, গৌরব বোরা, ফ্লোরেন্ত ওজির, ভানলাল জুডিকা, অ্যালেক্সিস গোমেজ, মনবীর সিং (উইঙ্কল ছোটে), কে লালরিনফেলা, লালরেমসাঙ্গা (বিকাশ সিং), মার্ক আন্দ্রে (রবি হাঁসদা), কার্লোস ফ্রাঙ্কা
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন গিল, নিশু কুমার, আনোয়ার আলি, হেক্টর ইউয়েস্তে, মহম্মদ রাকিপ, পিভি বিষ্ণু, নাওরেম মহেশ (প্রভাত লাকরা), সৌভিক চক্রবর্তী, নন্ধা কুমার (সল ক্রেসপো), দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস, রাফায়েল এরিক মেসি (ডেভিড)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার