অলস্পোর্ট ডেস্ক: লিগের শেষ বেলায় ইস্টবেঙ্গল এফসি জ্বলে ওঠায় যে সেরা ছয়ে পৌঁছনোর দৌড় বেশ জমে উঠেছে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। প্লে অফের শেষ দু’টি জায়গা দখলের জন্য লড়াই এখন মূলত চারটি দলের মধ্যে, যাদের মধ্যে ইস্টবেঙ্গলও রয়েছে। শেষ দুই কঠিন ম্যাচে তারা বেঙ্গালুরু এফসি ও নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে হারাতে পারলে তাদের প্লে অফে খেলার সম্ভাবনা বেঁচে থাকবে ঠিকই। তবে তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যান্য ম্যাচের ফলের দিকে।
বুধবার হায়দরাবাদ এফসি-কে ২-০-য় হারানোর পর লাল-হলুদ বাহিনীর কোচ অস্কার ব্রুজোন আরও প্রত্যয়ী হয়ে উঠলেন। জানিয়ে দিলেন, “শেষ দুই ম্যাচে জেতার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে তাঁর দল। এ দিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ম্যাচে শেষ দশ মিনিটের মধ্যে দেওয়া জোড়া গোলে জয়ের পর তাদের স্প্যানিশ কোচ সাংবাদিকদের বলেন, তিন সপ্তাহ আগেও দলের বাইরে অনেকে বলেছিলেন আমাদের সম্ভাবনা শূন্য শতাংশ। কিন্তু এখন দলের মধ্যে সবাই সেরা ছয়ে পৌঁছনোর স্বপ্ন দেখছে”।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “সপ্তাহ দুয়েক আগেও আমরা ১১ নম্বরে ছিলাম। তবে আমাদের পারফরম্যান্স ভাল কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল। আমরা অবশ্যই সেরা ছয়ে উঠতে চাই। সে জন্য অন্যান্য ম্যাচের ফলের ওপরও আমাদের নির্ভর করতে হবে। তবে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাব আমরা। তা সত্ত্বেও আমরা প্লে অফে খেলার যোগ্যতা নাও পেতে পারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করলে সে জন্য আমরা অন্তত গর্বিত হতে পারব”।
বুধবারের ম্যাচে ৮৫ মিনিট পর্যন্ত ফল গোলশূন্য থাকার পর ৮৬ মিনিটের মাথায় মনোজ মহম্মদের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। এর পরে সংযুক্ত সময়ে একক প্রচেষ্টায় গোল করে দলের জয় সুনিশ্চিত করেন ক্যামেরুন থেকে আসা ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেসি বৌলি। এই জয়ের ফলে সেরা ছয়ে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখল লাল-হলুদ ব্রিগেড। পাঞ্জাব এফসি ও মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে জয়ের পর এ বার হায়দরাবাদ এফসি-কে হারিয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক করে অস্কার ব্রুজোনের দল।
এই জয় সম্পর্কে মেসিদের কোচ অস্কার বলেন, “আজ আমাদের দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স আমাকে অবাক করেছে। এই ম্যাচে ছন্দে ফিরে আসাটা কঠিন ছিল। বিশেষ করে প্রথমার্ধে। চার দিন আগেই ম্যাচ খেলেছি আমরা। তাই এ দিন তরতাজা ভাবটা ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সমর্থকেরা যে ভাবে আমাদের জন্য গলা ফাটিয়েছেন, তাতেই আমাদের ছেলেরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠে এবং এর ফলেই ফারাকটা তৈরি হয়ে যায়। আমার মনে হয়, দ্বিতীয়ার্ধে একটাই দলকে দেখা গিয়েছে এবং সেটা ইস্টবেঙ্গল”।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিস ও ডেভিড লালনসাঙ্গা মাঠে আসার পর ম্যাচের ছবিটা ক্রমশ বদলাতে শুরু করে। এই প্রসঙ্গে অস্কার বলেন, “ডেভিড যখন দ্বিতীয়ার্ধে নামার আগে গা ঘামাচ্ছিল, তখন দিমি মাঠের ভিতর থেকে ইঙ্গিত করে, সে ক্লান্ত। তাই দিমির জায়গাতেই ডেভিডকে নামাই। দ্বিতীয়ার্ধে নেমে ও আরও একবার ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ও যখন মাঠে নামে, তখন ওকে বেশ ক্ষুধার্ত মনে হয়। ওর কোনও সমস্যা নেই। প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল করছে ও। আমাদেরও উজ্জীবিত করে ও”।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মেসি বৌলিরও প্রশংসা করে কোচ বলেন, “আজ মেসিই ছিল আমাদের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়। দলের পারফরম্যান্সে যথেষ্ট গভীরতা এনে দেয় ও। আমাদের দলে ভাল ভাল খেলোয়াড় থাকলেও তারা কেউ পারফরম্যান্সে গভীরতা এনে দিতে পারেনি, যা মেসি পেরেছে। মেসির মতোই একজন ফুটবলার আমাদের দলে প্রয়োজন ছিল”।
দ্বিতীয়ার্ধের দুটি পরিবর্তনই যে ম্যাচের গতিপথ বদলে দেয়, তা স্বীকার করে অস্কার বলেন, “আজ আমাদের ফিনিশিং ভাল হয়নি। প্রথমার্ধে উইংয়ে আমরা নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করেও পারিনি। তীব্র আক্রমণ তৈরি করতে পারিনি আমরা। ওদের রক্ষণে আমরা ফাটল ধরাতে পারিনি। দ্বিতীয়ার্ধে যখন সেলিস এল এবং মেসি ডানদিক দিয়ে উঠতে শুরু করল এবং যখন ডেভিড এসে ওদের রক্ষণে মেসির সঙ্গে দৌড় শুরু করল, তখন আমাদের খেলা আরও সরাসরি ও ভার্টিকাল হয়ে ওঠে”।
সুযোগকে গোলে পরিণত করার হার বা তাদের কনভারশন রেট যে এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল, তা জানিয়ে লাল-হলুদ কোচ বলেন, “সারা মরশুমে সুযোগকে গোলে পরিণত করার ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। অনেক সুযোগ তৈরি করেও বেশি গোল করতে পারিনি আমরা। তবে এখন মনে হচ্ছে ছবিটা বদলাচ্ছে। গত তিন ম্যাচে আমরা আট গোল করেছি। খেয়েছি মাত্র দুটো। তাই পরিসংখ্যান এখন আমাদের পক্ষে। এই ধরনের ম্যাচে, যেখানে দুই দলের মধ্যে ফারাক খুব কম, সেখানে দু-একটা সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেই তিন পয়েন্ট অর্জন করা যায়। সেজন্য ক্লিন শিট রাখাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ”।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার