অলস্পোর্ট ডেস্ক: রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কলকাতা ডার্বিতে মহমেডান এসসি-কে হারানোর পর দুই দলেরই প্রশংসা করেন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোন। তবে নিজের দলের খেলোয়াড়দের প্রশংসাই করেছেন তিনি এবং এটাই স্বাভাবিক।
রবিবার কলকাতার দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নাওরেম মহেশ ও সউল ক্রেসপোর অনবদ্য দুই গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। তবে মহমেডানের পক্ষে ব্যবধান কমান ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার কার্লোস ফ্রাঙ্কা, যিনি বহু চেষ্টার পর গোল পান এই ম্যাচে। কিন্তু ৮৯ মিনিটের মাথায় ডেভিড লালনসাঙ্গা তাঁর প্রাক্তন ক্লাবের বিরুদ্ধে গোল করে জয় সুনিশ্চিত করেন। আইএসএলে এই প্রথম কলকাতা ডার্বি জিতল ইস্টবেঙ্গল এফসি।
ম্যাচের পর লাল-হলুদ কোচ সাংবাদিকদের বলেন, “মহমেডানের প্রশংসা করতেই হবে। ওরা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও ওরা আজ যথেষ্ট ভাল খেলেছে। লড়াই করে ম্যাচটা জেতার চেষ্টা করেছে ওরা। আমার তরফ থেকে মহমেডানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রইল”।
দলের পরিবর্ত খেলোয়াড়দের প্রশংসা করে অস্কার বলেন, “আজ আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চই ম্যাচের ফয়সালা করে দিয়েছে। সউল বেঞ্চ থেকে নেমে গোল করল, ডেভিডও তাই। গত কয়েক সপ্তাহে এটাই ছিল না আমাদের। ৯০ মিনিট ধরে ধারাবাহিক ভাবে আমরা খেলতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু তবে দল আজ ভাল খেলেছে। প্রতিপক্ষকে আটকে রাখতে পেরেছি, শেপ বজায় রাখতে পেরেছি, কৌশলগত শৃঙ্খলাও ছিল আমাদের খেলায়। আমাদের ছেলেদের প্রশংসা করতেই হবে। দারুন খেলেছে ওরা”।
তা ছাড়া দলের চোট-আঘাত সমস্যা কিছুটা হলেও মিটেছে বলে জানান স্প্যানিশ কোচ। তিনি বলেন, “চোট-সমস্যা কমেছে। ফলে আজ আমরা খেলায় উন্নতি আনার জন্য বেঞ্চ থেকে কয়েকজন খেলোয়াড়কে নামাতে পারলাম”।
আইএসএলে এই প্রথম ডার্বি জিতল তারা। এই প্রসঙ্গে অস্কার বলেন, “ডার্বি বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু দুটো দলের খেলা নয়, ক্লাবের ঐতিহ্য, সমর্থকদের আবেগ, ভালবাসাও এর সঙ্গে মিশে থাকে। তাই ম্যাচের পরে সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা গেল, তারা দলের ছেলেদের পারফরম্যান্সে খুশি। এই দিনটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গত সপ্তাহটা আমাদের খারাপ গিয়েছে”।
দলের নতুন বিদেশী ফরোয়ার্ড ক্যামেরুনের রাফায়েল মেসি বৌলির প্রশংসাও শোনা গেল তাঁর নতুন দলের কোচের মুখে। তিনি বলেন, “যে ৬০ ও মিনিট খেলেছে, তাতে যথেষ্ট আন্তরিকতা ছিল। প্রতিপক্ষকে ও সমানে চাপে রেখেছিল। মনে হচ্ছিল, সারা মরশুমই যেন ও আমাদের সঙ্গে ছিল। দলের মধ্যে একটা গতিশীলতা এনে দিয়েছে মেসি। ওর মধ্যে সেই চারিত্রিক দৃঢ়তা ও ব্যক্তিত্ব আছে। লং বলে ও খুবই ভাল। বল ধরে রাখতে পারে। বাঁ দিক দিয়ে ও বেশ কয়েকবার দৌড়ে যে ভাবে বক্সে ঢুকেছে, তা অনবদ্য। ওর জন্য আমরা আজ অনেকটা চাপে রাখতে পেরেছি মহমেডানকে। ওর পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট। ওর কাছ থেকে যেটা চেয়েছিলাম, সেটাই পেয়েছি”।
মহমেডানের বিরুদ্ধে লিগের প্রথম ম্যাচে নন্দকুমার শেকর ও নাওরেম মহেশ লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ায় বেশ বিপদে পড়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। রবিবার সেই দু-জনই বেশ ভাল খেলেন। তাঁদের সম্পর্কে কোচ বলেন, “নন্দর পরিবারের একজন প্রয়াত হয়েছেন বলে ওর সময়টা ভাল যাচ্ছিল না। তবে নন্দ ও মহেশ আজ ভাল খেলেছে। প্রথম লিগে যা হয়েছিল, সে জন্য আমরা খুশি ছিলাম না। সেই ম্যাচে ন-জনে খেলতে হয়েছিল আমাদের। মহমেডানের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে ওরা দুজন লাল কার্ড দেখে যে সমস্যা তৈরি করেছিল, আজকের ম্যাচে তার প্রায়শ্চিত্ত করল বলতে পারেন। এ ছাড়া ক্রেসপো আজ মাঠে ফিরে সমস্যা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। ও আমাদের দলের একজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। তবে আজ ওকে মাত্র ৩০ মিনিট পেয়েছি। ওকে আমাদের পুরো ৯০ মিনিট দরকার”।
সেরা ছয়ে ওঠার আশা এখন ক্ষীণ ইস্টবেঙ্গলের। তবু লিগের শেষটুকু যে ভাল ভাবেই করতে চায় তারা, তা জানিয়ে কোচ বলেন, “আইএসএলে আমরা লড়াই ছেড়ে দিইনি। লড়াই জারি থাকবে। যতটা ভাল ভাবে শেষ করা যায় আইএসএল, সেই চেষ্টা করব। পরবর্তী ম্যাচে যদি সেলিস ও জিকসনকে পেয়ে যাই, তা হলে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠব। যদিও ওদের পেশীর চোট রয়েছে এবং ওদের জোর করে খেলিয়ে ঝুঁকি নিতে রাজি নই আমরা”।
অন্যদিকে মহমেডানের কোচ মেহরাজউদ্দিন ওয়াডুও তাঁর দলের খেলায় খুশি। বলেন, “শুরুটা আমরা ভালই করেছিলাম, কিন্তু শুরুতেই গোল খেয়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়ে গেল। যখনই আমরা খেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা শুরু করি, তখনই গোল খেয়ে যাই। দুটো গোলই আমরা আটকাতে পারতাম। তবে দল ভাল লড়াই করেছে। দুটো গোল খাওয়ার পরেও একটা শোধ করতে পেরেছে, এটা তো ভাল। ওরা যেমন আরও গোল করার জন্য মরিয়া ছিল, আমরাও অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওরা সুযোগগুলোকে গোলে পরিণত করতে পেরেছে, যা আমরা পারিনি”।
এ দিন বাংলার স্ট্রাইকার রবি হাঁসদাকে আইএসএল অভিষেকের সুযোগ দেন, যা দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়ে নেন তিনি। কোচও তাঁর খেলায় খুশি। বলেন, “রবি দারুণ খেলেছে। ও নেমেই একটা গোলে অ্যাসিস্ট করে, ফ্রাঙ্কা তা থেকে গোলও পায়। তবে আমি মনে করি, সব সমই উন্নতির অবকাশ থাকে। ও এখন আইএসএলের দলে রয়েছে। তবে ওকে যে কোনও দলে নাম্বার নাইন হিসেবে পাকা জায়গা করে নিতে ওকে আরও পরিশ্রম করে হবে। অন্যদের চেয়ে আরও অসাধারণ হয়ে উঠতে হবে”।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার