সুচরিতা সেন চৌধুরী: আইএফএ শিল্ড ২০২৫-এর শুরু থেকেই একটা রব উঠে গিয়েছে, যে ফাইনালে মুখোমুখি হতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। শিল্ডের প্রথম ম্যাচে শ্রীনিধির বিরুদ্ধে জয়ের পরও শুনতে হয়েছিল আর মঙ্গলবার নামধারীর বিরুদ্ধে জিতে ফাইনালে পৌঁছানোর পরও তাঁকে ফাইনালে ডার্বি নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই বেশ বিরক্ত ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। তবে তিনি যতই বিরক্ত হোন না কেন সব কথাই বলেন স্বাভাবিকভাবেই। এদিনও যেমন ডার্বি প্রসঙ্গে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি না কেন টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ফাইনালে ডার্বি নিয়ে সবাই কথা বলছে। আমাদের তো জিততে হবে ফাইনালে পৌঁছতে হলে। আমাদের আজকের ম্যাচটা খুব কঠিন ছিল। কাল মোহনবাগানের ম্যাচ আছে, ওদেরও ওটা জিততে হবে, তবে তো ফাইনাল।’’
তিনি খুব ভালো করেই জানেন, বাংলা এবং ভারতের ফুটবলে ডার্বি নিয়ে কতটা উন্মাদনা থাকে। তাই সব টুর্নামেন্ট আয়োজকরাই চান একটা ডার্বি যেন সেই টুর্নামেন্টে হয়। আসন্ন সুপার কাপ তো নকআউটের অপেক্ষাও করেনি, একই গ্রুপে দুই দলকে রেখে গ্রুপ পর্বেই ডার্বির আয়োজন করে দিয়েছে। আপাতত ফিরে আসা যাক আইএফএ শিল্ডে। তিন বছর পর শিল্ড আয়োজন করতে সক্ষণ হয়েছে আইএফএ। তবে একদমই ছোটভাবে। দুই গ্রুপে তিনটি তিনটি ছ’টি দল নিয়ে শিল্ড। যেখানে সব থেকে শক্তিশালী দল ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানই। তবে এদিন নামধারীর বিরুদ্ধে খেলা শেষে রীতিমতো বিরক্ত ইস্টবেঙ্গল কোচ।
নামধারী প্রথম থেকেই খুব বেশি ফিজিক্যাল ফুটবল খেলছিল। বার বার যেভাবে ফাউল করছিল তাদের ফুটবলাররা তাতে বড় চোটের সম্ভাবনা ছিল ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের। তবে অস্কারের অভিযোগ রেফারি এর বিরুদ্ধে তাঁর ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করেননি। অস্কার বলেন, ‘‘নামধারী যে ভাবে ফিজিক্যাল গেম খেলছি তাতে আমি মোটেও খুশি নই। রেফারি তাদের সেটা করতে অনুমতি দিচ্ছিল।’’ তবে তিনি এটাও মেনে নিয়েছেন, এদিন তাঁর দল যা খেলেছে সেটা যথেষ্ট নয়।
তিনি বলেন, ‘‘আমার দলের দু’জন মূল প্লেয়ার নেই। এক আনোয়ার ও দুই মহেশ। মহেশ মাঝখানে খেলাটা পরিচালনা করে। যারা রয়েছেন তাদেরকে সুপার কাপের আগে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’’ তাঁরা দলের সঙ্গে যোগ দিলে দল শক্তিশালী হবে বলেই বিশ্বাস অস্কারের। তার মধ্যে ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসে দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন জাপানী স্ট্রাইকার হিরোশি। তবে তিনি কবে খেলতে পারবেন তা নিয়ে সঠিক কোনও তথ্য কোচের কাছে নেই।
এদিন আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে পৌঁছানোর পরও দলের নবাগত বিদেশি ফুটবলারকে নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে ইস্টবেঙ্গল কোচকে। তাতে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘ম্যানেজমেন্ট হিরোশিকে নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারবে, আমি জানি না। তবে আমি অবশ্যই চাই ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেলার জন্য ছাড়পত্র পেয়ে যাক। সামনে সুপার কাপ রয়েছে।’’ ম্যাচ ফিটনেস প্রসঙ্গে অস্কার বলেন, ‘‘হিরোশি তার পুরনো দলের হয়ে ১ জুলাই থেকেই অনুশীলন শুরু করে দিয়েছিল। ও খেলার মধ্যেই ছিল। সেটা নিয়ে সমস্যা নেই। তবে যত দ্রুত ওর সব কাগজপত্র ক্লিয়ার হয়ে যাবে তত ভালো।’’
এদিনের কোচের সঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন দলের অন্যতম ফুটবলার মহম্মদ রাকিপও। তিনিও ফাইনালে জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, পাশাপাশি এও জানিয়ে গেলেন এদিনের ম্যাচ খুব কঠিন ছিল। রাকিপ ফাইনাল প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘জিততে হবে, ফোকাস করে খেলতে হবে। পর পর ম্যাচ জিতে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আজকের ম্যাচ খুব কঠিন ছিল। ফাইনালের আগে যেটুকু সময় আছে তাতে নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে। তবে আমরা যে কোনও দলের জন্যই প্রস্তুত।’’
এদিন দলকে সমর্থন করতে কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারির অনেকটাই প্রায় ভরিয়েছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। দলের জয় থেকে কোচ, প্লেয়ারকে ঘিরে তাঁদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। টিম বাস ঘিরে ইস্টবেঙ্গলের নামে স্লোগানে গমগম করছিলো স্টেডিয়াম চত্তর। সমর্থকদের অভিবাদনের মধ্যেই টিম বাসে উঠলেন ক্রেসপো, মিগুয়েল, অস্কাররা। সবার কাছে একটাই আবদার সমর্থকদের, ডুরান্ডের পর আরও একটা ডার্বি জয়, সঙ্গে শিল্ডও। যদিও নামধারী কোচ প্রাক্তন মোহনবাগান ফুটবলার হরপ্রীত সিং ফাইনালে যদি ডার্বি হয় তাদরে তাঁর প্রাক্তন দলকেই এগিয়ে রাখছেন। যা শুনে অস্কার বলছেন, ‘‘হতাশা’’।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন:ফেসবুক ও টুইটার





