মোহনবাগান ০ ইস্টবেঙ্গল ০
মুনাল চট্টোপাধ্যায়: গোয়ার মারগাঁওয়ের ফতোরদা নেহরু স্টেডিয়ামের মাঠে শুক্রবার সন্ধেতে মেগা ডার্বিতে খেলতে নামার আগে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও ইস্টবেঙ্গলের কাছে সুপার কাপ সেমিফাইনালে ওঠার অঙ্কটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল দিনের অন্য ম্যাচে ডেম্পো ও চেন্নাইনের মধ্যে ম্যাচ ১-১ শেষ হওয়ায়। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় ইস্টবেঙ্গলের সামনে দরকার ছিল শুধু একটা ড্র, সেখানে মোহনবাগানকে জিততেই হত শেষ চারে যেতে। সাদামাটে খেলায় পরিকল্পনামাফিক ফুটবলের জোরে ম্যাচটা গোলশূণ্য ড্র রেখে সুপার কাপের সেমিফাইনালে গেল ইস্টবেঙ্গল। তাদের এসিএল টু প্লেঅফ খেলার আশা যখন জিইয়ে থাকল, তখন মোহনবাগান এসজির একটা এসিএল স্লট হাতছাড়া হল। এখন তাদের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসিএল টু মূল পর্বে খেলার স্লটের জন্য ঝাঁপাতে হবে।
ডেম্পো ম্যাচে দল নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে ভুগেছিলেন মোহনবাগান এসজি কোচ হোসে মোলিনা। গোলশূণ্য ড্র করায় বাড়তি চাপ নিয়েই ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের মুখোমুখি হয় তাঁর দল। সেটা মাথায় রেখেই নিজের সেরা একাদশকেই বেছে নেন মোলিনা লাল হলুদের বিপক্ষে। দুই উইংব্যাকে শুভাশিস ও মেহতাব, স্টপারে আলবার্তো ও আলড্রেডকে খেলিয়ে রক্ষণ জমাট রাখার পথে হাঁটেন বাগান কোচ। মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণ করতে আপুইয়ার সঙ্গে অনিরুদ্ধ থাপাকে খেলানোর সিদ্ধান্তও ছিল সঠিক। আক্রমণ ও রক্ষণের ভারসাম্য বজায় রাখতে। ইস্টবেঙ্গলকে চাপে রাখতে গেলে দুটো উইংয়ে মনবীর ও লিস্টনকে খেলানো যে দরকার, সেটা বুঝে শুরু থেকেই তাঁদের প্রথম একাদশে ব্যবহার করেন মোলিনা। একবারে সামনে নাম্বার টেন পজিশনে সাহাল আর নাম্বার নাইনের ভূমিকায় গোলমেশিন ম্যাকলারেন।
অন্যদিকে, যেখানে ড্রই যথেষ্ট, সেখানে শুরু থেকে অলআউট খোলামোলা আক্রমণে উঠে নিজেদের বিপদ ডেকে আনবেন না ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার, সেটা জানাই ছিল। সেইমতো পরিকল্পনামাফিক দল সাজান লাল হলুদ কোচ। প্রত্যাশামতোই অস্কার প্রথম ২ ম্যাচে খেলা টিম কম্বিনেশনের ওপরই বেশি নির্ভর করেছেন ডার্বিতেও। চার ব্যাকে রাকিপ, সিবিলে, আনোয়ার, জয় গুপ্তা। ইস্টবেঙ্গল কোচের কৌশল ছিল খুব পরিষ্কার। তিনি প্রতিপক্ষকে খেলার দখল নিতে দেবেন না বলেই মাঝমাঠে লোক বাড়িয়ে খেলার পথ বেছেছিলেন। বিপিনকে উইং দিয়ে আক্রমণ হানার দায়িত্ব দিয়ে মাঝে মিগুয়েল, রশিদ, সল ক্রেসপোর সঙ্গে মহেশকে রেখে। আর বাগান রক্ষণকে ব্যস্ত রাখতে সামনে শুধু হামিদকে।
প্রবল বর্ষণে মাটির নীচে জমে থাকা জলে ভারি হয়ে যাওয়া মাঠে বল গড়াতে সমস্যা হচ্ছিল। তার মাঝেও ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে আক্রমণের একটা বাড়তি ঝাঁজ ছিল। সেখানে মোহনবাগানের খেলায় একটা বাড়তি সতর্কতা বেশি করে নজরে আসে। সম্ভবত ঝোপ বুঝে কোপ মারার অপেক্ষায়। কিন্তু ২৩ মিনিটে গোলের প্রথম সুযোগটা চলে এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের কাছে। বক্সের বাইরে থেকে মিগুয়েলের তোলা বলে বিপিনের হেড মোহনবাগান গোলকিপার বিশালের হাতের নাগাল এড়িয়ে ক্রশপিস আর পোস্টের কোনে লেগে ফেরায় বাঁচে সবুজ মেরুন। ২৯ মিনিটে আবার গোল করার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল লাল হলুদ। মিগুয়েলের সঙ্গে পাস খেলে সল ক্রেসপো বক্সের মাঝে বল বাড়ালে, সেই বলে মহেশের সাইডভলি অল্পের জন্য বাইরে যায়। প্রথম ৪৫ মিনিটে মোহনবাগানের তরফে গোলের সুযোগ বলতে তেমন কিছুই ছিল না। আপুইয়ার একটা গোল লক্ষ্য করে নির্বিষ শট ছাড়া।
প্রথমার্ধ গোলশূণ্য শেষ হওয়ায় মোহনবাগানের সামনে দ্বিতীয়ার্ধের ৪৫ মিনিট আর সংযুক্তি সময়টুকুই ছিল ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে ওঠার রাস্তা পাকা করতে। সে কারণে বিরতির পর মাঠে নামা মোহনবাগান ফুটবলারদের খেলায় একটা বাড়তি তাগিদ ধরা পড়েছিল। প্রথমার্ধের তুলনায় ইতিবাচক, খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার ভাবটা। সম্ভবত বিরতিতে বাগানের হেড স্যার মোলিনা তাঁর ফুটবলারদের সাজঘরে তেমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন গোলের জন্য ঝাঁপাতে।
কাঙ্খিত গোল পেতে ৬৩ মিনিটে সাহালকে তুলে তাঁর জায়গায় জেসন কামিংসকে নামান মোলিনা। গোল পেতে মরিয়া হয়ে দলে আরও তিনটি বদল আনেন তিনি। মনবীর ও লিস্টনের জায়গায় জোড়া আক্রমণাত্মক ফলা পেত্রাতোস ও রবসনকে। থাপাকে তুলে টাংরিকে। পাল্টা দলে ফ্রেশ লেগ হিসেবে ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার নামিয়ে দেন বিষ্ণুকে বিপিনের জায়গায়, আর হামিদের বদলি হিসেবে জাপানি হিরোশিকে। চোট পেয়ে বসে গেলে তাঁর জায়গায় ৮৭ মিনিটে নামেন শৌভিক। ৯২ মিনিটে শুভাশিসকে তুলে সুহেলকে নামিয়েছিলেন মোলিনা গোলের আশায়। কিন্তু তাঁর সে আশা পূর্ণ হয়নি। ম্যাচটা গোলশূণ্য রেখে সুপার কাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় অস্কার বাহিনী।
ম্যাচ শেষে দু’দল ফুটবলাররা উত্তেজিত হয়ে বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। তবে দু’শিবিরের কোচ, কর্তাদের হস্তক্ষেপে সেই ঝামেলা বেশিদূর গড়ায়নি।
মোহনবাগান: বিশাল, মেহতাব, আলবার্তো, আলড্রেড শুভাশিস(সুহেল), মনবীর(পেত্রাতোস), আপুইয়া, অনিরুদ্ধ(টাংরি), লিস্টন(রবসন), সাহাল(কামিংস), ম্যাকলারেন।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভুসুখন, রাকিপ, সিবিলে, আনোয়ার, জয়, মহেশ(এডমুন্ড), মিগুয়েল, রশিদ, সল(শৌভিক), বিপিন(বিষ্ণু), হামিদ(হিরোশি)।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন:ফেসবুক ও টুইটার





