সুচরিতা সেন চৌধুরী: যেভাবে শুরু করেছিল সেখান থেকে যে গোল খেয়ে যেতে পারে এত তাড়াতাড়ি তা হয়তো কেউ ভাবতেও পারেনি। কিন্তু চকিতে প্রতিপক্ষের গোল রীতিমতো হতদ্যম করে দিল লাল-হলুদ ব্রিগেডকে। না হলে শুরু থেকেই পর পর আক্রমণে বিমান বাহিনীর রক্ষণকে রীতিমতো ব্যস্ত রেখেছিল দল। কিন্তু খেলার গতির বিপরীতে গিয়েই ইস্টবেঙ্গল এফসির বিরুদ্ধে গোলের মুখ খুলে ফেলল ভারতীয় বিমান বাহিনী। যা হাজার দু’য়েকের গ্যালারিকে সাময়িক থমকে দিল। একে তো সোমবার। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন। তার উপর বৃষ্টি, খেলা শুরু রাত সাতটায়। তার মধ্যেও দলকে সমর্থন করতে হাজির হয়েছিলেন সমর্থকরা। তাঁদের হতাশ করেননি ফুটবলাররা। পিছিয়ে পড়ে ৩-১ গোলে জিতে মাঠ ছাড়ল ইস্টবেঙ্গল।
শুরু থেকে শেষ পুরো সময়টাই প্রায় খেলা হল ভারতীয় বিমান বাহিনীর বক্সে। মাঝে মাঝে তারা যা আক্রমণে উঠল তা হাতে গোনা আর তা থেকেই প্রথম গোল এল ম্যাচের। সোমবার যুবভারতী ক্রিড়াঙ্গনে ডুরান্ড কাপ ২০২৪-এর প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। প্রতিপক্ষ বিমান বাহিনী। শুরু থেকেই ইস্টবেঙ্গল দলের বার্তা ছিল আক্রমণ আর আক্রমণ। কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত এই মরসুমে ভাল কিছু করার লক্ষ্যেই অনেক আগে থেকে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন। পুরো দল নিয়েই ডুরান্ডের প্রথম ম্যাচে তিনি খেলতে নেমেছিলেন যা কলকাতা অন্যকোনও দল করেনি। তবুও শুরুতে ধাক্কা খেতে হল।
ম্যাচের ২০ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের দুই রক্ষণকে যেভাবে বোকা বানিয়ে গোলটি তুলে নিল বিমান বাহিনী তাতে এখনও যে অনেক কাজ বাকি আছে তা স্পষ্ট। প্রথমে বক্সের বাঁ দিক থেকে মার্ককে বোকা বানিয়ে যে ক্রস সেন্টারে উড়ে এল তাতে মাথা ছুঁইয়ে যখন বিমান বাহিনীর নাওরেম সিং গোলে পাঠালেন তখন তাঁর গায়ে লেগে থেকেও কিছু করতে পারলেন না হিজাজি মেহের। গত বছর মাঝ মরসুমে যোগ দিয়েও নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। এবার এখনও খোলস খুলে বেরনোর সময় আসেনি। তবে শুরুতেই গোল হজম করে বসলেও আক্রমণের ঝাাঁঝ এক মুহূর্তের জন্যও কমেনি ইস্টবেঙ্গলের। যার ফল প্রথমার্ধেই সমতায় ফেরে দল।
৪৩ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে প্রথম গোল করে ফেললেন মহমেডানকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম কারিগর ডেভিড লালহানসাঙ্গা। মাদিহ তালালের থেকে প্রায় মাঝ মাঠ থেকে পাওয়া বল বক্সের বাইরে পেয়ে গিয়েছিলেন ডেভিড। গোলের মুখ ছোট করতে ততক্ষণে গোল ছেড়ে অনেকটাই বেড়িয়ে এসেছেন প্রতিপক্ষ গোলকিপার। সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে তাঁর মাথার উপর দিয়ে ফাঁকা গোলে বল পাঠান ডেভিড। প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়ে আঙুল দিয়ে নিজের জার্সি নম্বর দেখিয়ে যেন সমর্থকদের বোঝাতে চাইলেন তিনি তৈরি। এর আগে তাঁর হেড পোস্টে লেগেও ফেরে। এক কথায় শুরুতেই ভরসা দিলেন তিনি। ভরসা দিলেন প্রথম ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে প্রথম নামা দিমিত্রিয়স দায়ামান্তাকোসও।
দলকে এগিয়ে দিলেন তিনিই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ডেভিডের জায়গায় তাঁকে নামিয়ে দিয়েছিলেন কোচ। দুই বিদেশি থেকে তিন বিদেশিতে চলে গিয়ে জয় তুলে নেওয়ার লক্ষ্যই ছিল লাল-হলুদ কোচের। হলও তাই। ৬১ মিনিটে তালাল থেকে মার্ক হয়ে বল পেয়ে গিয়েছিলেন দায়ামান্তাকোস। উঁচু হয়ে আসা বলে তাঁর হেড চলে যায় গোলে। গোল করে দলকে এগিয়ে তো দিলেনই সঙ্গে গোল করালেনও। ৬৮ মিনিটে সল ক্রেসপোর পা থেকে যে গোল এল তার ফাইনাল পাসটিও এসেছিল তাঁরই পা থেকে। তবে ইস্টবেঙ্গলের সবাই মিলে যা গোল মিস করল তাতে গোলের মালা পরাতে পারত প্রতিপক্ষকে। সেখানে পিছিয়ে পড়ে জয়ে ফিরল ইস্টবেঙ্গল।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন সিং গিল, মহম্মদ রাকিপ, লাল চুংনুঙ্গা, হিজাজি মেহের, মার্ক জোথানপুইয়া, মাদিহ তালাল (জেসিন টিকে), জিকসন সিং, সৌভিক চক্রবর্তী (অমন সিকে), নাওরেম মহেশ সিং (পিভি বিষ্ণু), সল ক্রেসপো, ডেভিড লালহানসাঙ্গা (দিমিত্রিয়স দায়ামান্তাকোস)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার