সুচরিতা সেন চৌধুরী: ইস্টবেঙ্গলকে এই ম্যাচ জিততেই হতো। না, সামনে বড় কোনও লক্ষ্য নেই। সুপার সিক্স তো কঠিন স্বপ্ন, যাকে সামনে রেখে এগোচ্ছিলেন কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। হারের হ্যাটট্রিকের সঙ্গে সেই স্বপ্নও এখন অনেক হিসেবের উপর দাঁড়িয়ে। তাহলে কেন এই ম্যাচ জিততেই হতো ইস্টবেঙ্গলকে? প্রশ্নটা উঠে আসতেই পারে। উত্তর একটাই, সম্মান বাঁচানোর পাশাপাশি দলটার তলিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পাওয়ার জন্য ইস্টবেঙ্গলকে এই ম্যাচ জিততেই হতো। শেষ পর্যন্ত চার ম্যাচ আর হারের হ্যাটট্রিকের পর জয়ে ফিরল দল। বিষ্ণু আর হিজাজির গোলে ২-১-এ কেরালাকে হারিয়ে ১৭ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে ১১ নম্বরেই থেকে গেল ইস্টবেঙ্গল।
শুক্রবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লড়াই ছিল আটের বিরুদ্ধে ১১-র। প্রথম থেকেই দাপট দেখাল ইস্টবেঙ্গল। দলে অনেক ‘নেই’এর ঘনঘটা। তার মধ্যেই এদিন প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিটেই চারটি গোলের সুযোগ নষ্ট করে একটি গোল করল ইস্টবেঙ্গল। দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই নজর কাড়লেন নবাগত বিদেশি রিচার্ড সেলিস। স্পিড, টাচ থেকে শট, সময় দিলে এই ভেঙে পড়া ইস্টবেঙ্গলের সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন ভেনেজুয়েলার এই ফুটবলার। তবে তার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। পোস্ট বাধা না হলে দ্বিতীয় ম্যাচেই নিজের নামের পাশে গোল লিখে নিতে পারতেন তিনি। ৩৭ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে ডান পায়ে যে শট নিলেন তিনি তা পোস্টে লেগে বেরিয়ে গেল বাইরে। গোল না হলেও আশা তৈরি হল তাঁকে ঘিরে।
তার আগেই অবশ্য সোলো রানে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দিয়েছেন পিভি বিষ্ণু। ম্যাচের বয়স তখন ২০ মিনিট। কাউন্টার অ্যাটাকে প্রতিপক্ষের অর্ধ থেকে উঁচু করে ডান প্রান্তে বলল বাঁড়িয়েছিলেন ক্নেটন সিলভা। সেই বল প্রায় মাঝ মাঠ থেকে ধরে প্রতিপক্ষের রক্ষণকে কাটিয়ে সোজা বক্সে ঢুকেই শট নিয়েছিলেন বিষ্ণু। গোলকিপার সচিন সুরেশ তখন গোলের মুখ ছোট করতে বেরিয়ে এসেছেন জায়গা ছেড়ে। সেই সুযোগ নিয়েই গোল লক্ষ্য করে বল ঠেলেন বিষ্ণু। গোল লাইনে ছিলেন কেরালার থরু সিং। কিন্তু তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল চলে যায় গোলে। এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল।
আরও আগেই এগিয়ে যেতে পারত লাল-হলুদ ব্রিগেড। ১৫ মিনিটে মহেশের থ্রু থেকে দিয়ামান্তাকোস যেভাবে ওপেন নেট মিস করলেন তাতে তাঁর গত মরসুমের সর্বোচ্চ স্কোরার হওয়ার পর এই মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের সব আস্থায় জল ঢেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এখনও তাঁকে যা ভেবে দলে নেওয়া হয়েছিল তাঁর কিছুই দেখা যায়নি। চূড়ান্ত ব্যর্থ। বরং প্রথম দিকে পুরো ম্যাচ খেলতে না পেয়ে যেটা পারছিলেন না সেটা বেশি সময় পেতেই করে দেখাচ্ছেন ক্লেটন সিলভা। পুরো মাঠ জু়ড়ে খেলছেন। গোলের সামনে যে ছটফটানিটা দরকার সেটাও পাওয়া যাচ্ছে তাঁরই থেকে। ১৬ মিনিটে তাঁর ফ্রিকিক সুরেশ না বাঁচালে এদিন নামের পাশে গোলও লেখা হয়ে যেত। ২৬ মিনিটে দিয়ামান্তাকোসের পাস থেকে ক্লেটনের শট মাথার উপর দিয়ে বাইরে পাঠান সুরেশ।
প্রথমার্ধে যে গোলের সুযোগ নষ্ট করল ইস্টবেঙ্গল সেটা অস্কারের জন্য বড় মাথা ব্যথার কারণ তো বটেই সঙ্গে এটাই হয়তো দলকে আত্মবিশ্বাসী করবে। অনেকদিন পর পুরো ৯০ মিনিট লড়াই করল দলটা। দলগত খিদেটা দেখা গেল এদিন। তার মধ্যেই ৬৮ মিনিটে দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়াল। কেরালার নুনেজকে ধাক্কা দিলেন ইস্টবেঙ্গলের সেলিস।। আবার তাঁকে পাল্টা ধাক্কা দেন ফ্রেডি। যদিও দক্ষতার সঙ্গে সেই সমস্যা বাড়তে দেননি রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য আরও অনেকটাই গুছিয়ে নিয়ে মাঠে নামে ইস্টবেঙ্গল। তার মধ্যেই একটা সুযোগ চলে এসেছিল কেরালার সামনে তবে তা পোস্টে লেগে ফেরে।
প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল। ৭২ মিনিটে মহেশের কর্নার থেকে হিজাজি মেহেরের হেড সোজা চলে যায় কেরালা গোলে। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। এখানেই ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হল উল্টোটাই। গোল হজম করে বসল ইস্টবেঙ্গল। ৮৪ মিনিটে ফ্রিক কিক থেকে উড়ে আসা বল হিজাজি ক্লিয়ার করলেও তা বক্সের বাইরে বের করতে পারেননি। কেরালা বক্সে তখন ইস্টবেঙ্গল প্লেয়ারদের জটলা। সেই জটলার ফাঁক গলেই দানিশ ফারুকির শট চলে গেল গোলে। ব্যবধান কমাল কেরালা ব্লাস্টার্স। তবে ইস্টবেঙ্গলের জয়ে এদিন বাধা হতে পারেনি তারা। ২০২৫-এ প্রথম জয়ের মুখ দেখল লাল-হলুদ ব্রিগেড।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন সিং গিল, জিকসন সিং (সায়ন বন্দোপাধ্যায়), লাল চুংনুঙ্গা, হিজাজি মেহের, নিশু কুমার, পিভি বিষ্ণু (মার্ক জোথানপুইয়া), সৌভিক চক্রবর্তী, নাওরেম মহেশ, রিচার্ড সেলিস, ক্লেটন সিলভা, দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস (হেক্টর ইউয়েস্তে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার