সুচরিতা সেন চৌধুরী: পর পর দুই ম্যাচ জিতে সাত ম্যাচ পর ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ইস্টবেঙ্গল এফসি। কিন্তু শেষ ম্যাচের ফলের সঙ্গে সঙ্গে আনুসঙ্গিক আরও অনেক কিছু ইস্টবেঙ্গলের জন্য একদমই সুখকর হয়নি। যা দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানো একটা দলের জন্য ধাক্কা তো বটেই। তবে কোচ অস্কার ব্রুজোঁ এমন একজন মানুষ যে দলের মধ্যে কোনও নেগেটিভ মানসিকতাকে প্রশ্রয় দিতে নারাজ। ম্যাচের আগের দিন বলেই দিয়েছিলেন, দুটো রাস্তা আছে, এক, রাত জেগে কী হল, কেন হল ভেবে মাথা খারাপ করা অথবা দুই, সব সমস্যা কাটিয়ে মাঠে নিজেদের সেরাটা দেওয়া। কুয়াদ্রাত পরবর্তী সময়ে তাঁর আগমনে যে দলের অন্দরে অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। যা পঞ্জাব কোচও ম্যাচের আগের দিন মেনে নিয়েছিলেন, যে দলে অস্কার ব্রুজোঁ রয়েছেন, সেই দল যে কোনও সময়ই ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এদিন ছিল আরও একবার প্রমাণ করার পালা। আর পঞ্জাব কোচের কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দিলেন অস্কার ব্রুজোঁ। ০-২ গোলে পিছিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করা ইস্টবেঙ্গল ৪-২ গোলে জিতে মাঠ ছাড়ল।
মঙ্গলবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে পঞ্জাব এফসি। পাঁচ রক্ষণেও তা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। চার ব্যাকের সামনে এদিন খেলছিলেন আনোয়ার আলি। কিছুটা অনভ্যস্ত জায়গা। আর যে দুটো গোল পঞ্জাব করল তা লাল-হলুদের দুই ডিফেন্ডারকে ঘাঁড়ে নিয়েই। তার আগে অবশ্য অফসাইডের জন্য বাতিল হল ডেভিডের গোল। এদিন প্রথম থেকে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ডেভিড। এটিই ছিল তাঁর প্রমাণ করার মঞ্চ, করলেনও। নামের পাশে গোলও লিখে নিলেন তিনি। কোচ বলেছিলেন এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় প্লেয়ারদের নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ থাকবে। সেটাই করলেন তাঁরা। বিষ্ণু নামার পর খেলাটা ঘুরল।
২২ মিনিটে রাকিপকে রীতিমতো ঘাড়ে নিয়েই বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে ইস্টবেঙ্গল জালে বল জড়ান আসমীর সুলজিক। এর পর দ্বিতীয় গোল ৩৯ মিনিটে। এবার থ্রো-ইন থেকে বক্সের ডানদিকের গা ঘেঁষে যে চকিতে শট নিলেন এজেকুয়েল ভিদাল তা যে গোলে ঢুকে গিয়েছে সেটা প্রথমে কেউ বুঝতেই পারেনি। পঞ্জাবের সেলিব্রেশন দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল বল সাইড নেটে নয়, ভিতরের নেটে গিয়েই ধাক্কা খেয়েছে। আরও গোল হতে পারত যদি না পর পর পঞ্জাব আক্রমণ আটকে দিতেন গিল। প্রথমে শরীর দিয়ে এবং সেই বল ছিটকে গেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন লাল-হলুদ দূর্গ।
প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অ্যাডভান্টেজ পজিশনে চলে গিয়েছিল পঞ্জাব এফসি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে অন্য ইস্টবেঙ্গলকে দেখা গেল। ঠিক যেমনটা বলেছিলেন প্রতিপক্ষ কোচ যে ব্রুজোঁর কোচিংয়ে যে কোনও সময় দল ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তেমনটাই হল। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা সবে শুরুই হয়েছিল। মুহূর্তের বদলে যেতে শুরু করল খেলার রঙ। ৪৬ মিনিটে ক্লেটনের ফ্রি-কিক থেকে বক্সের মধ্যে থেকেই হিজাজির হেড লাফিযে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন পঞ্জাব গোলকিপার রবি কুমার। কিন্তু তাঁর হাতে ছুঁয়ে বল ঢুকে যায় গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে নেমে ৫৪ মিনিটে রাকিপের সেন্টার থেকে পিভি বিষ্ণুর গোলে সমতায় ফেরে ইস্টবেঙ্গল। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
প্রথমার্ধে পঞ্জাবের আক্রমণে চাপে পড়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ। দ্বিতীয়ার্ধে ছবিটা ঠিক উল্টে গেল। ড্রেসিংরুমের ভোকাল টনিকের ফল না এটাই পরিকল্পনা ছিল, শুরুতে মেপে খেলে পরে পুরো শক্তি নিয়ে ঝাঁপানো। সে যাই হোক না কেন, সেটা কাজে লেগেছে ইস্টবেঙ্গলের। তৃতীয় গোলটি অবশ্য এল প্রতিপক্ষের পা থেকে। ৬০ মিনিটে ডেভিডের থেকে পাওয়া পাস ধরে নন্ধা কুমারের গোলমুখি শট ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দিলেন সুরেশ মিতেই। আর চতুর্থ গোল এল ডেভিডের অসাধারণ দক্ষতায়। বিষ্ণুর সেন্টার থেকে বক্সের মধ্যেই রীতিমতো শুয়ে পড়ে বল গোলে পাঠালেন তিনি। ম্যাচের বয়স তখন ৬৭ মিনিট। তার আগেই জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন খাইমিনথাং হুংদিম। ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়েছে হোম টিম। যার ফল ম্যাচ শেষে দলের ভাল ফুটবলের সঙ্গেই হাসি মুখে বাড়ি ফিরলেন প্রায় ১০ হাজার সমর্থক। শনিবার বছরের শেষ হোম ম্যাচে আশা করাই যায় দলের জন্য গলা ফাটাতে গ্যালারিতে থাকবেন আরও অনেক বেশি সমর্থক।
ইস্টবেঙ্গল এফসি: প্রভসুখন সিং গিল, মহম্মদ রাকিপ, হেক্টর ইউয়েস্তে, হিজাজি মেহের, লাল চুংনুঙ্গা, আনোয়ার আলি, নন্ধাকুমার (নিশু কুমার), সৌভিক চক্রবর্তী, নাওরেম মহেশ সিং (পিভি বিষ্ণু), ক্লেটন সিলভা (সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়), ডেভিড লালহানসাঙ্গা (আমন সিকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার