অলস্পোর্ট ডেস্ক: সম্পুর্ণ নতুন কম্বিনেশন ও দশজন ভারতীয় ফুটবলারকে নিয়ে লড়াই দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি পর্যন্ত লড়াই করেও শেষে হার মানতে হল ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে। শিলংয়ের মাঠে তাদের ৪-০-য় হারিয়ে এই প্রথম ‘হোম উইন’ পেল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। শনিবার ৫৯ মিনিট পর্যন্ত দুর্দান্ত লড়াই করে আলাদিন আজারেই, নেস্টর আলবিয়াখদের আটকে রাখে ইস্টবেঙ্গেলর দ্বিতীয় সারির দল। কিন্তু প্রথম গোল হওয়ার পরেই তাদের যাবতীয় প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে ও ২৭ মিনিটর মধ্যে চার-চারটি গোল করে প্লে-অফের আগে আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে নেয় নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি।
এ দিন প্রথমার্ধে গোলশূন্য থাকার পর ৫৯ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল করেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার নেস্টর আলবিয়াখ, ৬৬ ও ৭৯ মিনিটের মাথায় পরপর দু’টি গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন চলতি লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা মরক্কান তারকা আলাদিন আজারেই। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার চার মিনিট আগে চতুর্থ গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন আলাদিনের স্বদেশীয় মিডফিল্ডার মহম্মদ আলি বেমামের। এ দিন চলতি লিগে ২৩ নম্বর গোলটি করলেন আলাদিন। এতদিন বাকি সব দলের বিরুদ্ধে গোল পেলেও ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোল পাননি তিনি। এ দিন তাঁর সেই লক্ষ্যও পূরণ করে ফেললেন।
এ দিন দশটি পরিবর্তন করে প্রথম এগারো নামায় ইস্টবেঙ্গল। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে সেরা তারকারা খেলতে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত ইস্টবেঙ্গলের। গোলকিপার থেকে ফরোয়ার্ড- সব ভূমিকাতেই এ দিন একাধিক অচেনা মুখ দেখা যায় মাঠে। নিয়মিত খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন বিষ্ণু, নিশু কুমার, ডেভিড লালনসাঙ্গা, ক্লেটন সিলভারা। চাকু মান্ডি, সুমন দে, তন্ময় দাস-রা এ দিনই প্রথম আইএসএলের ম্যাচে মাঠে নামেন। অন্যদিকে, নর্থইস্টও এ দিন পাঁচটি পরিবর্তন করে প্রথম দলে। তবে তাদের সর্বোচ্চ গোলদাতা আলাদিন আজারেই (২১ গোল) এবং অন্য দুই তারকা অ্যাটাকার গিলেরমো ফার্নান্ডেজ ও নেস্টর আলবিয়াখরা এ দিন শুরু থেকেই খেলেন।
আইএসএলে এই নিয়ে এটি তৃতীয় ম্যাচ, যেখানে দশজন বা তার বেশি সংখ্যক ভারতীয় ফুটবলারদের নিয়ে মাঠে নামে ইস্টবেঙ্গল। এর আগে ২০২২-এর জানুয়ারিতে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ও সেই মাসেই জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধেও তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আইএসএলের ইতিহাসে চতুর্থবার প্রথম দলে দশ বা তার বেশি সংখ্যক পরিবর্তন করে কোনও দল নামল এদিন। এর আগে চেন্নাইন এফসি (২০১৮), বেঙ্গালুরু এফসি (২০১৯) ও কেরালা ব্লাস্টার্সও (২০২৪) এতগুলি পরিবর্তন করে দল নামিয়েছিল।
ইস্টবেঙ্গলের প্রায় আনকোরা দল এ দিন শুরু থেকে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে না পারলেও প্লে-অফে পৌঁছনো নর্থইস্টের বিরুদ্ধে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েনি বা দমে যায়নি। তবে তাদের রক্ষণের অনভিজ্ঞতা ও ভুলকে কাজে লাগিয়ে একাধিকবার আক্রমণে ওঠে নর্থইস্ট। প্রথমার্ধে একবার দীনেশ সিং ও দু’বার নেস্টর আলবিয়াখ গোলে শট নিলেও অভিজ্ঞ গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদারের অনবদ্য সেভ তাদের গোল করতে দেয়নি।
পুরোপুরি নতুন কম্বিনেশনে খেলা ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথমবার শট গোলে রাখেন ক্লেটন সিলভা। ৩২ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ক্লেটনের শট আটকান নর্থইস্টের গোলকিপার মিরশাদ মিচু, যিনি এ দিন এ মরশুমে প্রথম গোলে দাঁড়ান। ৪০ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে হীরা মন্ডলের হাওয়ায় ভাসানো বল পেয়ে বাঁ উইং দিয়ে দৌড়ে বক্সে ঢুকে কোণাকুনি শট গোলে রেখেছিলেন বিষ্ণুও। কিন্তু এ বারও তা বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে বিপদসীমার বাইরে বের করে দেন মিরশাদ। পরবর্তী মিনিটেই বিষ্ণুর দেওয়া বলে থ্রু বাড়ান ক্লেটন, যা বক্সের মধ্যে পান ডেভিড লালনসাঙ্গা। ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে মিরশাদ এগিয়ে এসে সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের দখল নেন।
প্রথমার্ধে নর্থইস্ট বল দখলে এগিয়ে (৬০-৪০) থাকলেও লক্ষ্যে শটের সংখ্যায় তাদের সঙ্গে সমান ভাবে পাল্লা (৩-২) দেয় ইস্টবেঙ্গল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর কোনও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী। নর্থইস্ট আরও সাতটি শট গোলে রাখে এবং চারটি গোল করে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আক্রমণ হানে নর্থইস্ট। প্রথমে আলাদিনকে দুর্দান্ত দক্ষতায় আটকান হীরা মণ্ডল। পরিবর্ত ফরোয়ার্ড পার্থিব গগৈও রক্ষণের প্রতিরোধের কারণে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন ৪৯ মিনিটের মাথায়। ৫৬ মিনিটের মাথায় ফের বক্সের সামনে থেকে গোলে কোণাকুনি শট নেন নেস্টর, যা ফের বাঁচান দেবজিৎ। লড়াই চালিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। বারবার মূলত মাঝমাঠ থেকেই আলাদিনদের আটকানোর চেষ্টা করে তারা। আলাদিনকে কড়া পাহাড়ায় রেখেছিলেন নবাগত সুমন দে, যিনি তাঁর ভূমিকায় যথেষ্ট সফলও হন। প্রতিপক্ষের এই দুর্ভেদ্য রক্ষণ দেখে ক্রমশ উইং দিয়ে আক্রমণ তৈরি করা শুরু করে নর্থইস্ট । এবং তাড়াতাড়িই এর ফল পায় তারা।
ম্যাচের ৫৯ মিনিটের মাথায় বক্সের বাঁ দিক থেকে তোনদোনবা সিংয়ের নিখুঁত ক্রসে গোলের সামনে থেকে জালে বল জড়িয়ে দেন নেস্টর (১-০)। তাঁর সামনে চাকু মাণ্ডি থাকলেও তিনি পা পিছলে পড়ে যাওয়ায় বল নেস্টরের কাছে যায় এবং সেই সুযোগই কাজে লাগান তিনি।
এগিয়ে যাওয়ার পরেই দ্বিগুণ আত্মবিশ্বাসে প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নর্থইস্ট এবং শিলংয়ের মাঠে প্রথম জয় সুনিশ্চিত করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। সেই লক্ষ্যে তারা সফল হয় প্রথম গোলের সাত মিনিট পরেই, যা আসে সেটপিসে। কর্নার থেকে প্রথম দ্বিতীয় পোস্টের সামনে বল পান ম্যাকার্টন নিকসন। তিনি গোলে বল ঠেললেও তা দেবজিৎ আটকান। তবে তাঁর হাত থেকে বল ছিটকে আসে আলাদিনের কাছে। এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি, সোজা গোলে শট নেন (২-০)।
ব্যবধান বাড়ানোরও সুযোগ পান গিলেরমো। যখন, ৭২ মিনিটের মাথায়, তাঁকে গোলের বল প্রায় সাজিয়ে দেন আলাদিন। তবে গিলেরমোর কোণাকুনি শট দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে চলে যায়। তাদের তৃতীয় গোলের লক্ষ্য পূরণ হয় ৭৯ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে। বক্সের মধ্যে আলাদিনকে বাধা দেন তন্ময় দাস, যার ফলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পেনাল্টি থেকে চলতি লিগের ২৩তম গোল করেন মরক্কোর গোলমেশিন (৩-০)।
তন্ময় ফের অবৈধ ভাবে বাধা দেন গোলমুখী পার্থিব গগৈকে। ফলে দ্বিতীয় হলুদ তথা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ৮৪ মিনিটের মাথায়। এর দু’মিনিটের মধ্যেই চতুর্থ গোলটি করে নর্থইস্ট। কর্নারের পর প্রথমে রেডিম তলাং গোলে শট নেন, যা সেভ করেন দেবজিৎ। তাঁর হাত থেকে বল ছিটকে এলে তাতে শট নেন পার্থিব গগৈ। এ বারও তা ছিটকে আসে বেমামেরের কাছে। এ বার তিনি সুযোগ নষ্ট করেননি, সোজা গোলে শট নেন ও জালে বল জড়িয়ে দেন (৪-০)। সংযুক্ত সময়ের শেষ দিকে হ্যাটট্রিকের সুযোগ পান আলাদিন। কিন্তু এ বার বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে সাইড নেটের বাইরে বল মারেন।
ইস্টবেঙ্গল এফসি দল (৪-৪-২): দেবজিৎ মজুমদার (গোল), সুমন দে, চাকু মান্ডি, মার্ক জোথানপুইয়া, নিশু কুমার, পিভি বিষ্ণু (সায়ন ব্যানার্জি-৭৫), তন্ময় দাস (লাল কার্ড), ক্লেটন সিলভা, হীরা মন্ডল (অনন্থু এনএস-৭৫), ডেভিড লালনসাঙ্গা, জেসিন টিকে (মুহম্মদ রোশল-৮৭)।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার