সুচরিতা সেন চৌধুরী: ডার্বির আগে ঘরের মাঠে মুম্বই সিটি এফসির বিরুদ্ধে এই ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলের জন্য এই মরসুমের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ তো ছিল, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তবে সেই ম্যাচে যেভাবে শুরু করল তা দেখে ডার্বির আগে হতাশা ছাড়া আর কিছুই জুটলো না গ্যালারিতে আসা হাতে গোনা সমর্থকদের ভাগ্যে। বাকি ৪৫ মিনিট ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিক্ষা। ০-২ গোলে প্রথমার্ধেই পিছিয়ে পড়াটা মাঠের ১১ জনের জন্য বড় ধাক্কা তো বটেই সঙ্গে রিজার্ভ বেঞ্চের উপর বাড়তি চাপ। যা হয়তো কোচ অস্কার ব্রুজোঁ আগাম বুঝে গিয়েছিলেন। যে কারণে, প্রি-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে সুপার সিক্সের কথায় যেন একটু বিরক্তই হয়েছিলেন। ‘বার বার সুপার সিক্স, সুপার সিক্স’ বললে চাপ বাড়বে। কারণ তিনি বুঝে গিয়েছেন সুপার সিক্স ক্রমশ দূরে সরে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের থেকে। কিন্তু আশা ছাড়েনি। সেই অবস্থাতেই খেলায় ফিরল দল, কিন্তু ধরে রাখত পারল না। এই রোগ লাল-হলুদের পুরনো। ঘরের মাঠে ২-৩ গোলে হেরেই ডার্বি খেলতে নামতে হবে ইসস্টবেঙ্গকে।
হায়দরাবাদ এফসির বিরুদ্ধে আটকে যাওয়াটা দলের জন্য বড় ধাক্কা। তার পরই সুপার সিক্সের স্বপ্ন দেখা ইস্টবেঙ্গল কোচের আত্মবিশ্বাস কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। একটি করে ম্যাচ ধরে খেলতে চাইছেন তিনি। যেখানে নতুন বছরের প্রথম ম্যাচ ভেঙে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফেরাতে পারল না। সোমবার সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে, যে মুম্বই সিটির বিরুদ্ধে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল তারা আগের ম্যাচে নর্থইস্টের কাছে হারের মুখ দেখে এসেছে। যেটা আগের দিন মনে করিয়ে দিয়েছিলেন ব্রুজোঁ। যে আশঙ্কা নিয়ে এই কথা বলেছিলেন কোচ, সেটা যেন প্রমাণ করে দিল মুম্বই। রীতিমতো জয়ের ফেরার মরিয়া চেষ্টা দেখা গেল পেত্র ক্রাতকির ছেলেদের মধ্যে।
প্রথমার্ধের ১০ মিনিটের পর থেকেই খেলার রাশ নিজেদের দখলে নিতে শুরু করে মুম্বই। ২১ মিনিটে মুম্বইয়ের আক্রমণ কর্নারের বিনিময়ে বাঁচিয়ে দেয় ইস্টবেঙ্গল। এর পর ২৭ মিনিটে বিষ্ণুর কর্নার থেকে সুযোগ চলে এসেছিল জিকসনের সামনে, কিন্তু তিনি বলের নাগাল পেয়েও কাজ লাগাতে পারলেন না। ২৮ মিনিটে আবারও সুযোগ চলে এসেছিল মুম্বইয়ের সামনে। তিরির হেড গোললাইনথেকে বাঁচিয়ে দিলেন হেক্টর ইউয়েস্তে। শেষ পর্যন্ত ৪০ মিনিটে গোলের মুখ খুলল মুম্বই।
ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজের একটা থ্রু বল থেকে ছাংতের গোলের পিছনে বড় ভূমিকা রেখে গেল ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ। হিজাজি মেহের ও লাল চুংনুঙ্গাকে দুই পাশে নিয়েই ইস্টবেঙ্গল গোলে বল জড়ালেন ছাংতে। এক কথায় তাঁর স্পিডের কাছে হেরে গেল ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ। এগিয়ে গিয়ে প্রথমার্ধের শেষ কয়েক মিনিট খেলায় আরও আক্রমণ বাড়াল তারা। যার ফল তিন মিনিটের মধ্যেই ২-০ করে ফেললেন নিকোলাওস কারেলিস। তাঁর শট প্রথমে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার গিল। কিন্তু তিনি তা দখলে রাখতে পারেননি। ফিরতি বলে কারেলিসেরই শট চলে যায় গোলে। সেখানেও হিজাজির ব্য়র্থতা চোখে পড়ার মতো।
২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নামে মুম্বই সিটি এফসি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতই জোড়া পরিবর্তন করেন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। প্রভাত লাকরার জায়গায় নিশু কুমার ও নন্ধা কুমারের জায়গায় নাওরেম মহেশকে নামিয়ে খেলার হাল ফেরানোর চেষ্টা করেন করেন তিনি। তাতে খেলার গতি খানিকটা বাড়ে। যার ফল জোড়া গোল করে সমতায় ফেরে ইস্টবেঙ্গল। ৬৬ মিনিটে সাহিল পানওয়ারের সেমসাইড গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। নাওরেমের শট বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ গোলকিপার, ফিরতি বলে বিষ্ণুর শট ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের জালেই পাঠিয়ে দেন পানোয়ার।
আশা ফেরে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে। প্রায় ফাঁকা গ্যালারি পুরো ফাঁকা হয়ে যাওয়ার আগে আবার ফিরে আসে এক বুক আশা নিয়ে। ৮৩ মিনিটে পরিবর্ত হিসেবে নামা ডেভিড গোলে সমতায় ফেরে দল। এখানেই থামতে পারত ম্যাচ কিন্তু এই। ম্যাচ থেকে ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট পাওয়ার ছিল না। ৮৭ মিনিটে শেষ কাজটি করে দেন সেই কারেলিস। নিজের জোড়া গোলের সঙ্গে দলের তিন নম্বর গোলটি করে তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করে ফেলল মুম্বই। এবারও সেই হিজাজি। যিনি কারেলিসের ধারে কাছেই পৌঁছতে পারলেন না। সেই অবস্থায় গোল ছেড়ে এগিয়ে আসা গিলের মাথার উপর দিয়ে ফাঁকা গোলে বল পাঠালেন তিনি। এখানেই শেষ হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট আশা।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন সিং গিল, লাল চুংনুঙ্গা, হিজাজি মেহের, হেক্টর ইউয়েস্তে, প্রভাত লাকরা (নিশু কুমার), আনোয়ার আলি (সৌভিক চক্রবর্তী), নন্ধা কুমার (নাওরেম মহেশ), পিভি বিষ্ণু, জিকসন সিং (ডেভিড), দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস, ক্লেটন সিলভা।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার