সুচরিতা সেন চৌধুরী: আইএসএল এখন অতীত ইস্টবেঙ্গলের জন্য। শেষ মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়িয়ে একটা আশা জাগিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। তাই পুরো দলের পুরো মনোযোগটাই এখন এএফসিতে। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ঘরের মাঠে অস্কার ব্রুজোঁর সামনে ছিল আইএসএল-এর খেলাটাই ধরে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য। শুরুটাও সেই মতোই করেছিল। কিন্তু খেলার গতির বিপরিতে গিয়েই শুরুতে এগিয়ে গেল প্রতিপক্ষ এফসি আর্কাদাগ। কাউন্টার আক্রমণেই ম্যাচের ১০ মিনিটে আর্কাদাগকে এগিয়ে দিয়েছিলেন গুরবানভ। এই গোলের পিছনে যতটা গুরবানভের কৃতিত্ব ততটাই দায় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের তো বটেই। এর পর থেকে পুরো ম্যাচটাই চলল আর্কাদাগের বক্সে। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে পারল না ইস্টবেঙ্গল। ঘরের মাঠে ০-১ গোলে হেরে সেমিফাইনালে পৌঁছতে হলে এখন দ্বিতীয় লেগে দুই গোলের ব্যবধানে জিততেই হবে ইস্টবেঙ্গলকে।
বুধবার কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ইস্টবেঙ্গলের সামনে ছিল আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের প্রমাণ করার ম্যাচ। আগেরদিনই ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোঁ বলে দিয়েছিলেন, দেশের প্রতিনিধিত্ব করা তাঁর দলের জন্য সব সময়ই গর্বের। সঙ্গে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছতে ঘরের মাঠে এই ম্যাচ জিতে থাকাটা খুবই জরুরী ছিল। ফিরতি লেগের ম্যাচ খেলতে হবে আর্কাদাগের ঘরের মাঠে। যারা ৬০ ম্যাচ জিতে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধ খেলতে নেমেছিল। যে ক্লাবের বয়স মাত্র দুই বছর। খেলতে নেমেছিল শতবর্ষের ক্লাবের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচে দলকে সমর্থন করতে গ্যালারি ভরিয়েছিলেন সমর্থকরা যে আগ্রহ এই মরসুমে আইএসএল-এও দেখা যায়নি। এদিন প্রায় ২৬ হাজার ইস্টবেঙ্গল সমর্থকও তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ।
শুরুতেই প্রতিপক্ষ আর্কাদাগ এগিয়ে গেল ঠিকই কিন্তু পুরো ম্যাচে অনেকবেশি আধিপত্ত ছিল ইস্টবেঙ্গলের। যেভাবে নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করল তাতে অনেক বড় ব্যবধানে জিততে পারত এদিন ইস্টবেঙ্গল। যা দ্বিতীয় লেগের আগে দলকে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী করতে পারত। এদিন ম্যাচের ১০ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা একটা বল ধরে যেভাবে ইস্টবেঙ্গলের দুই স্টপার ইউয়েস্তে ও জিকসনকে মাত দিলেন গুরবানভ তখন আর কিছুই করার ছিল না। লালচুংনুঙ্গার পায়ের ফাঁক দিয়ে সেই বল চলে যায় গোলে। এর পর একাধিক সুযোগ পায় ইস্টবেঙ্গল।
৩৭ মিনিটে দিমিত্রির শট জমা হয় গোলকিপারের হাতে। পর পর কর্নার পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ লাল-হলুদ ব্রিগেড। ৪৬ মিনিটে মেসি বৌলি যে সিটার নষ্ট করলেন তার জন্য আফশোস করতে হবে দলকে। তার আগেই প্রতিপক্ষের আক্রমণ দারুণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন প্রভসুখন গিল। দ্বিতীয়ার্ধেও দারুণভাবে বাঁচালেন প্রতিপক্ষের আক্রমণ। তবে গোল না করতে পারলে সবই বৃথা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আর্কাদাগ অধিনায়ক বাসিমভের শট ক্রসপিসে লেগে ফেরে। কিন্তু গোলের মুখ না খুলতে পারলে কোনও ভাল খেলারই কোনও মূল্য নেই।
দিয়ামান্তাকোস আইএসএল-এর পর ব্যর্থ এএফসিতেও। যে কারণে ৮৪ মিনিটে তাঁকে তুলে ক্লেটন সিলভাকে নামাতে বাধ্য হলেন ব্রুজোঁ। তবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে বড্ড দেরি করে ফেললেন তিনি। যেখানে ডেভিডকে নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে সেখানে এদিন তাঁকে নামালেনই না কোচ। কেন এই মরসুমে পুরো ব্যর্থ দিয়ামান্তাকোসকে এতটা সময় প্রতিদিনই মাঠে রেখে দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠছেই। সঙ্গে গোল মিসের বহরও ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিপক্ষ আর্কাদাগ যেখানে পুরো সময়টাই রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে গেল তাতে ইস্টবেঙ্গলের সব প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়ল। যা সুযোগ এল তা রীতিমতো হেলায় হারালেন ক্রেসপো, মেসি, দিয়ামান্তাকোসরা। যেভাবে ছ’গজ বক্সের মধ্যে থেকে গোল মিস করলেন সেলিস সেটাও বড় মাথা ব্যথার কারণ হবে ব্রুজোঁর জন্য।
এই একগুচ্ছ মাথা ব্যথার কারণ এক সপ্তাহে বদলে ফেলতে পারলে প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে দু’গোলের ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখতে পারেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। আর্কাদাগের খেলায় আহামরি কিছু ছিল না যা নজর কাড়তে পারে। বরং ফুটবলের মাপকাঠিতে এগিয়ে থাকবে ইস্টবেঙ্গলই। তবে প্রয়োজনীয় গোলে জিতে সেমিফাইনালে না যেতে পারলে আইএসএল-এর পর এএফসি থেকেও শুধুই হতাশাই জুটবে ভাগ্যে।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন সিং গিল, মহম্মদ রাকিপ (নিশু কুমার), হেক্টর ইউয়েস্টে, জিকসন সিং, লালচুংনুঙ্গা, মহেশ সিং, সৌভিক চক্রবর্তী, সল ক্রেসপো, রিচার্ড সেলিস (পিভি বিষ্ণু), মেসি বৌলি, দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস (ক্লেটন সিলভা)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার