Wednesday, January 22, 2025
No menu items!
Google search engine
Homeফুটবলএফসি গোয়ার কাছে হেরে সুপার সিক্স আরও কঠিন করে ফেলল ইস্টবেঙ্গল

এফসি গোয়ার কাছে হেরে সুপার সিক্স আরও কঠিন করে ফেলল ইস্টবেঙ্গল

অলস্পোর্ট ডেস্ক: ফের প্লে অফের দরজা থেকে ফিরে এল ইস্টবেঙ্গল এফসি। বুধবার এফসি গোয়াকে হারাতে পারলে তারা সেরা ছয়ের দরজা খুলতে পারত। কিন্তু এ বারও তা পারল না লাল-হলুদ বাহিনী। বরং টানা পাঁচ ম্যাচে জয়হীন থাকার পর জয়ে ফিরে এল এফসি গোয়া। চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ঘরের মাঠে অষ্টম ম্যাচে তারা জিতল ১-০ গোলে। ৪২ মিনিটের মাথায় একমাত্র গোলটি করেন মার্কিন মিডফিল্ডার নোয়া সাদাউই।

তাদের নবম জয়ের ফলে লিগ টেবলের চার নম্বরেই রয়ে গেল এফসি গোয়া। তবে এখনও তাদের প্লে অফে জায়গা পাকা হয়নি। তিন নম্বরে থাকা মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের চেয়ে একটি ম্যাচ বেশি খেলে তাদের চেয়ে এক পয়েন্ট কম অর্জন করেছে আরব সাগরপাড়ের দল।

বুধবার ম্যাচের খুব কম সময়ই ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে পারে ইস্টবেঙ্গল এফসি। বেশিরভাগ সময়ই তাদের প্রবল চাপে রাখেন কার্লোস মার্তিনেজ, নোয়া সাদাউইরা। বিশেষ করে যে ভাবে ঘন ঘন আক্রমণের ঝড় তুলে লালচুঙনুঙ্গাদের কোণঠাসা করে রেখেছিলেন নোয়া, যে ভাবে গোল করেন, তার পরে তাঁকে ছাড়া ম্যাচের সেরার পুরস্কার অন্য কাউকে দেওয়া যায়নি।

আরও একজনকে অবশ্য এই দৌড়ে রাখা যেত, তিনি ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার প্রভসুখন গিল, যিনি একাই পাঁচ-পাঁচটি সেভ করে দলকে আরও বড় ব্যবধানে হারের হাত থেকে বাঁচান। সারা ম্যাচে যেখানে সাতটি শট লক্ষ্যে রেখে মাত্র একটিকে গোলে পরিণত করে এফসি গোয়া, সেখানে ইস্টবেঙ্গল সারা ম্যাচে একটিমাত্র শট লক্ষ্যে রাখে, তাও সেটি নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ছ’মিনিট আগে। প্রতিপক্ষের বক্সে গোয়ার ফুটবলাররা যেখানে ৪৬ বার বলে পা লাগান, সেখানে ইস্টবেঙ্গল প্রতিপক্ষের বক্সে ১২ বারের বেশি বল ছুঁতে পারেনি।

চলতি লিগে আট নম্বর হারের পরেও অবশ্য প্লে-অফের দৌড়ে টিকে রইল ইস্টবেঙ্গল এফসি। অঙ্কের হিসেব বলছে পাঁচ নম্বরে থেকেও লিগ শেষ করতে পারে তারা। কিন্তু বুধবার তাদের যে পারফরম্যান্স দেখা গেল, তার পরে তাদের নিয়ে আশায় থাকা কঠিন। রক্ষণ, মাঝমাঠ, আক্রমণ— সব বিভাগেই উন্নতি করতে না পারলে তাদের প্লে অফের রাস্তা বেশ কঠিন হয়ে উঠবে। সামনেই কলকাতা ডার্বি। সেই কঠিন ম্যাচের আগেই এই হার, ইস্টবেঙ্গল শিবিরকে আর যাই হোক, আত্মবিশ্বাস জোগাবে না।

এ দিন দলে পাঁচটি পরিবর্তন করে মাঠে নামে ইস্টবেঙ্গল। আক্রমণে নন্দকুমার শেকর ও নাওরেম মহেশ, মাঝমাঠে শৌভিক চক্রবর্তী এবং রক্ষণে হিজাজি মাহের ও নিশু কুমার দলে ফিরে আসেন। কার্ড সমস্যার জন্য দলে ছিলেন না অজয় ছেত্রী। এ ছাড়ও মহম্মদ রকিপ, মন্দার রাও দেশাই ও ফেলিসিও ব্রাউনকে এ দিন ডাগ আউটে বসতে হয়। ভিপি সুহের স্কোয়াডের বাইরেই ছিলেন। অন্যদিকে, সদ্য ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে গোয়ার দলে যোগ দেওয়া বোরহা হেরেরা এ দিন প্রথম এগারোয় ফিরে আসেন।

ঘরের মাঠে শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে এফসি গোয়া। ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে যে ভাবে অবধারিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন নোয়া, তা অবিশ্বাস্য। সামনে শুধু গোলকিপার প্রভসুখন গিল ছিলেন। তাঁর ডানদিক দিয়ে বল গোলে ঠেলতে যান। কিন্তু গিলের পায়ে লেগে তা বাইরে চলে যায়। এর পরের মিনিটেই ফের গোলের সামনে থেকে মিস করেন নোয়া। এ বার বক্সের বাঁ দিক থেকে লো ক্রস দিয়েছিলেন বোরহা।

এফসি গোয়ার আগ্রাসী মেজাজের সামনে ইস্টবেঙ্গলকে বেশিরভাগ সময় রক্ষণে ফোকাস করতে দেখা যায়। প্রথমার্ধের ড্রিঙ্কস বিরতির পর বরং তাঁদের কিছুটা ভাল ফুটবল খেলতে দেখা যায়। এই সময় ডানদিক দিয়ে উঠে নন্দকুমার গোলের সামনে ক্রস পাঠালেও তা ঠিকমতো শট নিতে পারেননি মহেশ। বক্সের বাইরে থেকে ভিক্টর ভাজকেজের শট ও বক্সের মধ্যে ক্লেটন সিলভার হেড ব্লক করে দেয় তাঁদের প্রতিপক্ষ।

প্রথমার্ধের প্রথম আধ ঘণ্টায় যতটা রক্ষণাত্মক মনে হয় ইস্টবেঙ্গলকে, পরের ১৫ মিনিটে কিন্তু তারা বেশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এবং বল পজেশন বাড়িয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও নেয় তারা। কিন্তু এর মধ্যেই একটি সুযোগ তৈরি করে সেটিতেই গোল করে এগিয়ে যায় এফসি গোয়া।

৪২ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে আসা বল পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে প্রথম পোস্টের দিক দিয়ে গোলে কোণাকুনি শট নেন নোয়া, যা এ বার আর আটকাতে পারেননি গিল (১-০)। বক্সে ঢোকার আগে নোয়ার কাছে আসা বল আটকানোর চেষ্টা করেন আলেকজান্দার প্যানটিচ। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হওয়ায় বল পেয়ে যান নোয়া এবং তার পরেই গোল। প্রথমার্ধে এফসি গোয়া চারটি শট গোলে রাখলেও একটিও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী।

এক গোলে এগিয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ফের আগ্রাসী মেজাজে দেখা যায় এফসি গোয়াকে। শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই নোয়া ও কার্লোস মার্তিনেজ একবার করে গোলে শট নেন। নোয়ার শট ব্লক করা হলেও মার্তিনেজের জোরালো ভলি অল্পের জন্য বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। সেই সময়ে ইস্টবেঙ্গলের ন’জন ফুটবলারকে রক্ষণে নেমে আসতে দেখা যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের বয়স ১০ মিনিট হতে না হতেই রক্ষণের শক্তি বাড়াতে শৌভিক ও নিশু কুমারকে তুলে নেন ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। নামান মহম্মদ রকিপ ও এডুইন ভন্সপলকে। শৌভিককে এ দিন চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি। এর মিনিট পাঁচেক পরে পিভি বিষ্ণু ও ভিক্টর ভাজকেজকেও তুলে নেয় ইস্টবেঙ্গল। নামানো হয় প্রায় আনকোরা ফরোয়ার্ড জেসিন টিকে ও ফেলিসিও ব্রাউনকে। এফসি গোয়ার অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজকেও মাঠে নামায় এফসি গোয়া। ফলে গোলের পাস দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে তারা।

৮৩ মিনিটের মাথায় উদান্ত সিংকে ব্যবধান বাড়ানোর অসাধারণ সুযোগ তৈরি করে দেন ভারতীয় দলে খেলা ব্র্যান্ডন। বাঁ দিকের উইং থেকে বক্সের মধ্যে যে মাপা ক্রস দেন তিনি, তা হেডফ্লিক করেন সম্পুর্ণ অরক্ষিত উদান্ত, যা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এর পরেও তিনি সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেন। নোয়ার ক্রস থেকে অবধারিত গোলের সুযোগ পেয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন ব্র্যান্ডনও।

পরিবর্তনগুলির পরেও অবশ্য ইস্টবেঙ্গলের খেলায় তেমন উন্নতি হয়নি। ৭০ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে শুধু একটি হেড করেন ক্লেটন সিলভা। কিন্তু তাতে তেমন জোর ছিল না, লক্ষ্যেও ছিল না। আশ্চর্য ভাবে এ দিন সারা ম্যাচেই ইস্টবেঙ্গলের অ্যাটাকাররা গোলের মুখ দেখতে পাননি। দ্বিতীয়ার্ধের ড্রিঙ্কস পর্যন্ত গোয়া সাতটি শট গোলে রাখলেও ইস্টবেঙ্গল তখনও একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি।

ড্রিঙ্কসের পরে প্রথম এবং একমাত্র শট গোলে রাখে ইস্টবেঙ্গল, যখন বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নেন ফেলিসিও ব্রাউন। ডানদিকের কোণ দিয়ে বল গোলে ঢোকার আগে তা আটকে দেন গোলকিপার ধীরজ সিং, যিনি এ দিন সারা ম্যাচে এই একটিই সেভ করেন। কিন্তু গিলকে এ দিন পাঁচ-পাঁচটি সেভ করতে হয়। তা সত্ত্বেও ক্লিন শিট রাখতে পারেননি।

ইস্টবেঙ্গল এফসি দল (৪-২-৩-১): প্রভসুখন গিল (গোল), লালচুঙনুঙ্গা (মন্দার রাও দেশাই-৭৭), আলেকজান্দার প্যানটিচ, হিজাজি মাহের, নিশু কুমার (মহম্মদ রকিপ-৫৫), শৌভিক চক্রবর্তী (এডুইন ভন্সপল-৫৫), ভিক্টর ভাজকেজ (ফেলিসিও ব্রাউন-৬১), নন্দকুমার শেকর, নাওরেম মহেশ সিং, পিভি বিষ্ণু (জেসিন টিকে-৬১), ক্লেটন সিলভা।

(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments