সুচরিতা সেন চৌধুরী: লক্ষ্যটা ছিল জয়ের হ্যাটট্রিকের। আইএসএল-এ যা কখনও করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল এফসি। এবার সেটাই তাতাচ্ছিল পুরো দলকে। কোচ অস্কার ব্রুজোঁও পর পর জয়ে ছিলেন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। আগের দিন বলেই দিয়েছিলেন, এবারের ইস্টবেঙ্গল নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। হয়তো ভুল ছিলেন না তিনি। ৪২ মিনিটে ১০ জনে হয়ে গিয়েও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই যেভাবে গোলের মুখ খুলে ফেলল লাল-হলুদ ব্রিগেড তাতে সাত ম্যাচ পর জয়ের মুখ দেখা দলটার সামনে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে লড়ে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। কিন্তু যতটা সমর্থক সমাগম আশা করেছিল ইস্টবেঙ্গল কোচ, ফুটবলাররা সেটা দেখা গেল না। তাও পর পর জয়ে হতাশা কাটিয়ে ফিরে আসা প্রায় ১৩ হাজার সমর্থক হ্যাটট্রিক দেখতেই মাঠে এসেছিলেন। কিন্তু ১-২ গোলে হার নিয়েই ফিরতে হল।
ম্যাচের শুরুতেই অবশ্য বড় ধাক্কা খেলেন কোচ ব্রুজোঁ। চার মিনিটের মাথায় গুরুতর চোট পেলেন দলের বিদেশি মিডিও মাদিহ তালাল। হুগো বুমৌসের সঙ্গে সংঘর্ষে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তালাল। মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আবার মাঠে নামেন ঠিকই কিন্তু বেশিক্ষণ খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। ১০ মিনিটেই তাঁকে তুলে নন্ধা কুমারকে নামাতে বাধ্য হন কোচ। আগে থেকেই মাঠের বাইরে চলে গিয়েছেন দলের দুই বিদেশি দিয়ামান্তাকোস আর সল ক্রেসপো। সেই তালিকায় যুক্ত হলেন তালালও। কে যে কতদিনের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেলেন তা এখনও পরিষ্কার নয়, তবে ঘুরে দাঁড়িয়েই আবারও সমস্যায় ইস্টবেঙ্গল।
৩৭ মিনিটে জেরির শট পোস্টে লেগে ফেরার সময় কিছুটা চাঞ্চল্য তৈরি হয় ইস্টবেঙ্গল বক্সে। তার পরই আরও বড় ধাক্কাটা খায় দল। ৪২ মিনিটে জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে হয় জিকসন সিংকে। দ্বিতীয় হলুদ কার্ডটা না দেখালেও পারতেন রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বিষ্ণুকে তুলে নিশু কুমারকে নামিয়ে রক্ষণকে আরও কিছুটা পোক্ত করার চেষ্টা করেন অস্কার ব্রুজোঁ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে যেভাবে খেলা শুরু করেছিল তাতে মনেই হচ্ছিল না ১০ জনে খেলছে দল। কিন্তু পুরো ৪৫ মিনিট ১১-র বিরুদ্ধে ১০-এর লড়াই একই গতিতে ধরে রাখা যে সম্ভব নয় সেটা সেটা আরও একবার প্রমাণ হল।
৫৩ মিনিটে মহেশের কর্নার থেকে ওড়িশা গোলকিপার অমরিন্দর সিংয়ের গায়ে লেগে বক্সের মধ্যেই বল পেয়ে গিয়েছিলেন হিজাজি। সেই বল তাঁর পা থেকে প্রতিপক্ষ প্লেয়ারের পায়ে লেগে বক্সের মধ্যেই পেয়ে যান লাল চুংনুঙ্গা। চলতি বলেই তাঁর শট সোজা চলে যায় গোলে। এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। তবে এই উচ্ছ্বাস তিন মিনিটেই হাতছাড়া করে ফেলে নিজেদের ভুলে। যে মহেশের কর্নার থেকে এগিয়ে গিয়েছিল দল, সেই মহেশের পা থেকেই বল কেড়ে ওড়িশাকে সমতায় ফেরান জেরি। তাঁর দূরপাল্লার শট আটকাতে পারেননি গিল। বার কয়েক বল ফসকালেনও তিনি। আবির বাঁচালেনও। তবে গোলের নিচে এখনও ভরসা হয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
এর পরও বার কয়েক নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি হল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। কিন্তু একগুচ্ছ হতাশা নিয়ে আর গোল তুলে নিতে পারল না দল। চোটে আক্রান্ত ইস্টবেঙ্গল শিবিরের অর্ধেকের বেশি বিদেশি। যাঁরা রয়েছেন তাঁদের উপর ভরসা করে ম্যাচ জেতা যায় না ভাগ্য সহায় না থাকলে। যে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছিল গত দুই ম্যাচে তা এই একটা ম্যাচই যথেষ্ট নষ্ট করে দেওয়ার জন্য। বরং ৮১ মিনিটে ওড়িশার হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করে ইস্টবেঙ্গলের এক পয়েন্টের আশাও শেষ করে দিলেন হুগো বুমৌস। রেফারিরও কি কিছুটা ভূমিকা থেকে গেল না! প্রশ্নটা থেকেই গেল।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন গিল, লাল চুংনুঙ্গা, হিজাজি মেহের, মহম্মদ রাকিপ, আনোয়ার আলি, নাওরেম মহেশ সিং (ডেভিড), জিকসন সিং (জোড়া হলুদ কার্ড), মাদিহ তালাল (নন্ধা কুমার), সৌভিক চক্রবর্তী, পিভি বিষ্ণু (নিশু কুমার), ক্লেটন সিলভা।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার