অলস্পোর্ট ডেস্ক: প্লে-অফে যাওয়ার কি ক্ষীণ সম্ভাবনাও আছে ইস্টবেঙ্গল এফসি-র? নেই বললে ভুল হবে। অঙ্ক বলছে, আছে। কিন্তু বাস্তব বলছে, অঘটন ছাড়া তা সম্ভব না। সারা বিশ্বের ফুটবলে যদিও অঘটন নিয়মিত ঘটে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের প্লে-অফের রাস্তা পরিস্কার হতে হলে পরপর অনেকগুলি অঘটন ঘটতে হবে, যার সম্ভাবনার কথা অতি বড় লাল-হলুদ সমর্থকেরাও বোধহয় ভাবতে পারছেন না।
গত ম্যাচে পাঞ্জাব এফসি-কে হারানোর পরে এখন ২১ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের ৯ নম্বরে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। গত ছ’টি ম্যাচ থেকে ১০ পয়েন্ট তুলেছে তারা। বুধবার ঘরের মাঠে হায়দরাবাদ এফসি-কে হারিয়ে আইএসএলে প্রথম জয়ের হ্যাটট্রিকের সুযোগ তাদের সামনে, যে সুযোগ প্রথম লিগে তারা হারিয়েছিল এই হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে ড্র করেই। গতবার যে ভাবে সেই মাইলস্টোনের সামনে থেকে ইস্টবেঙ্গলকে ছিটকে ফেলে দিয়েছিল নিজামের শহরের দল, এ বারও তা হবে না তো?
বিপজ্জনক প্রতিপক্ষ
চলতি লিগের প্লে অফের দৌড় থেকে যে দুই দল পাকাপাকি ভাবে ছিটকে গিয়েছে, তাদের অন্যতম হায়দরাবাদ। তাদের আর হারানোর কিছুই নেই। তাই চাপমুক্ত হয়ে মাঠে নামছে তারা। গত সপ্তাহে যে ভাবে তারা মুম্বই সিটি এফসি-কে একটিও গোল করতে দেয়নি, যে ভাবে তাদের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে দু’বারের লিগ চ্যাম্পিয়নদের যাত্রা ভঙ্গ করে, তার পরে হায়দরাবাদ এফসি-কে কোনওভাবেই আর কম গুরুত্ব দিতে পারবে না ইস্টবেঙ্গল।
একেই সপ্তাহখানেক আগে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদের ওই পারফরম্যান্স, যেখানে আটটি শট লক্ষ্যে রাখা সত্ত্বেও একটিও জালে জড়াতে পারেনি মুম্বই, তার ওপর প্রথম লিগে হায়দারাবাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রায় হাতের মুঠোয় এসে যাওয়া তিন পয়েন্ট হাতছাড়া হওয়ার অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়ে এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল যে বেশ চাপে থাকবে এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
তার ওপর পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে গত ম্যাচে দলের নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার পিভি বিষ্ণুর চোট পাওয়ার ঘটনা কোচকে আরও চিন্তায় ফেলতে পারে। তাই পাঞ্জাবের মাঠে নেমে তাদের ৩-১-এ হারিয়ে অনেকটা আত্মবিশ্বাস জোগাড় করে নিয়ে এলেও হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে বেশ চাপেই থাকবে লাল-হলুদ ব্রিগেড।
সামনেই তাদের এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের পরীক্ষা, যা এখন তাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। আইএসএলে সেরা ছয়ে থাকার লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার আফসোস ভুলতে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ভাল পারফরম্যান্স দেখানোই এখন ইস্টবেঙ্গলের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আইএসএলের শেষ কয়েকটি ম্যাচ তাই এখন তারই প্রস্তুতি বলা যেতে পারে।
প্রথম দেখায় স্বপ্নভঙ্গ!
কিন্তু সেই প্রস্তুতিতে বাধ সাধবে না তো হায়দরাবাদ? প্রথম লিগের ম্যাচের কথা নিশ্চয়ই অনেকেরই মনে আছে। সে দিন হায়দরাবাদ এফসি-ই প্রথমার্ধে আধিপত্য বিস্তার করে। তারাই বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করে। তারা যেখানে দশটি সুযোগ তৈরি করে, সেখানে ইস্টবেঙ্গল চারটির বেশি গোলের সুযোগ পায়নি। কিন্তু এ সবই তারা করে দ্বিতীয়ার্ধে।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সেই ম্যাচের প্রথমার্ধে লাল-হলুদ বাহিনীর একটিও শট লক্ষ্যে ছিল না। হায়দরাবাদও প্রথমার্ধে কোনও শট গোলে রাখতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে তারা এবং জিকসন সিংয়ের গোলে এগিয়ে যায়। ম্যাচের শেষ দিকে সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা হায়দরাবাদকে ৮৯ মিনিট পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখার পর তাদের জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয় ডিফেন্ডার মনোজ মহম্মদের আকস্মিক গোলে।
ওভারল্যাপে উঠে আসা মনোজ ছিলেন সম্পুর্ণ অরক্ষিত। ওই ভাবে যে বাঁ দিক থেকে তিনি উঠে আসবেন, ইস্টবেঙ্গলের কোনও খেলোয়াড় তা বুঝতেই পারেননি। ঠাণ্ডা মাথায় জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি এবং লাল-হলুদ বাহিনীর জয়ের হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এ বার যাতে সে রকম কিছু না হয়, তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে।
ফিরে পাওয়া ছন্দে লাল-হলুদ!
ব্রুজোনের দল যে ছন্দে রয়েছে, তা তারা গত সপ্তাহে দিল্লির ম্যাচেই বুঝিয়ে দিয়েছে। সে দিন ইস্টবেঙ্গল যেখানে আটটি গোলের সুযোগ তৈরি করে, সেখানে পাঞ্জাব সাতটি গোলের সুযোগ তৈরি করে। প্রতিপক্ষের বক্সে যেখানে ১৭ বার বল ছোঁয় পাঞ্জাব, সেখানে ইস্টবেঙ্গল ২২ বার বল পায় পাঞ্জাবের বক্সে। দুই দলই চারটি করে শট গোলে রাখে। তবে সুযোগকে দারুণ ভাবে কাজে লাগায় লাল-হলুদ বাহিনী।
ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের গোলে এগিয়ে যায় লাল-হলুদ বাহিনী। ৪৭ মিনিটের মাথায় ফের গোল করে ব্যবধান বাড়ান নাওরেম মহেশ সিং। মহেশের গোলের সাত মিনিট পর তৃতীয় গোল করে দলকে জয়ের দিকে অনেকটা এগিয়ে দেন ডিফেন্ডার লালচুঙনুঙ্গা। দিয়ামান্তাকস, মহেশের গোলে ফেরা দলের পক্ষে অবশ্যই ভাল খবর।
তবে তাদের চোট আঘাত সমস্যা কিছুতেই মিটছে না। ভেনেজুয়েলা থেকে আসা ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিস এই ম্যাচেও অনিশ্চিত। তবে তাঁকে এই ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চে রাখার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছন কোচ অস্কার ব্রুজোন। উইঙ্গার নন্দকুমারেরও চোট রয়েছে। ফলে পরবর্তী দুই ম্যাচে তাঁকে হয়তো দেখা যাবে না বলে জানিয়েছেন কোচ। অনিশ্চিত পিভি বিষ্ণু এবং স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হেক্টর ইউস্তে। গত ম্যাচে চোট পান তাঁরা। তাই গত ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও আক্রমণে দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের সঙ্গে হয়তো ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেসি বৌলিকেই ফের দেখা যাবে। তিনিই যে এখন দলের আক্রমণের প্রধান চালিকাশক্তি, তা গত ম্যাচের পরেই স্বীকার করে নেন কোচ।
‘প্রতিপক্ষকে সহজভাবে নিতে পারব না’
জয়ের ধারা বজায় রাখতে গেলে যে ঘরের মাঠে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ভাল ফুটবল খেলতে হবে তাদের, তা খুব ভাল করেই জানেন কোচ অস্কার ব্রুজোন। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “দল এখন শেপে ও ফর্মে রয়েছে। এই সাফল্যের ধারা বজায় রাখার ও ভাল ভাবে মরশুম শেষ করার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী ও প্রত্যয়ী। তবে প্রতিপক্ষকে সহজভাবে নিতে পারব না। জানুয়ারিতে ওরা যথেষ্ট ভাল খেলেছিল। এফসি গোয়া, বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ড্র করেছিল এবং জামশেদপুরকে হারায়। প্রথম লেগে যে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম, এই হায়দরাবাদ আলাদা। ওরা নিশ্চয়ই পয়েন্ট টেবলের শেষ দুইয়ে থেকে লিগ শেষ করতে চাইবে না। তাই আমাদের সতর্ক থেকে নিজেদের সেরাটা দিতে হবে”।
ফিটনেসের দিক থেকে দল এখন খুব ভাল জায়গায় রয়েছে বলে জানান কোচ। বলেন, “জিপিএস-এর দেওয়া তথ্য বলছে আমাদের খেলোয়াড়দের ফিটনেস এখন সবচেয়ে ভাল জায়গায় আছে। আগামী দু’সপ্তাহে আমাদের পাঁচটি ম্যাচ (এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ-সহ) খেলতে হবে। প্রতি ম্যাচের মধ্যে ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টার অন্তর। সে জন্য ফুটবলারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো ছাড়া উপায় নেই”।
পরিসংখ্যান-তত্ত্ব
হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে শেষ তিন ম্যাচেই অপরাজিত ইস্টবেঙ্গল। এর আগে চেন্নাইন এফসি ও নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে টানা চার ম্যাচে অপরাজিত ছিল তারা। বুধবার জিতলে বা ড্র করলে, তাদের পাশে হায়দরাবাদ যুক্ত হবে। আইএসএলে এর আগে কখনও টানা তিন ম্যাচে জেতেনি ইস্টবেঙ্গল। গত দুই ম্যাচে তিনটি করে গোল করেছে তারা। টানা তিন ম্যাচে একাধিক গোল করে জয়ও পায়নি তারা। শেষ ছ’টি অ্যাওয়ে ম্যাচে জয়হীন রয়েছে হায়দরাবাদ এফসি। ২০২৩-এর মার্চ থেকে ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা দশটি অ্যাওয়ে ম্যাচে জয়হীন ছিল তারা। পাঞ্জাব এফসি-রও গত মরশুমে একই নজির ছিল। এ পর্যন্ত চলতি মরশুমে ১২টি ম্যাচে হেরেছে তারা। গত মরশুমে ১৬ ম্যাচে হেরেছিল তারা।
দ্বৈরথের ইতিহাস
আইএসএলে মোট ৯ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। চারবার জিতেছে হায়দরাবাদ ও দু’বার ইস্টবেঙ্গল, তিনবার ড্র হয়েছে। গত মরশুমেই নিজামের শহরের দলের বিরুদ্ধে দু’টি জয় পায় লাল-হলুদ শিবির। ক্লেটন সিলভার জোড়া গোল হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে প্রথম জয় এনে দেয় কার্লস কুয়াদ্রাতের দলকে। ২-১-এ সেই জয়ই ছিল চলতি লিগে তাদের প্রথম সাফল্য। ফিরতি লিগেও গোল করে দলকে ১-০-য় জেতান ক্লেটন। ২২-২৩ মরশুমে দুই ম্যাচেই হায়দরাবাদ জেতে ২-০-র ব্যবধানে। ২১-২২ মরশুমে প্রথমবার ১-১ ড্র হওয়ার পর হায়দরাবাদ জেতে ৪-০-য়। ২০-২১ মরশুমে হায়দরাবাদ প্রথমে ৩-২-এ জিতলেও দ্বিতীয় লেগে ১-১ ড্র হয়। এ মরশুমের প্রথম মুখোমুখিতে ১-১ ডির হয়। এই ৯ বারে হায়দরাবাদ যেখানে ১৫ গোল দিয়েছে, সেখানে আট গোল করেছে ইস্টবেঙ্গল।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার