সুচরিতা সেন চৌধুরী: পাক্কা দু’মাস পর মাঠে ফিরলেন সল ক্রেসপো। আগের দিনই তাঁর ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। সেই মতো অধিনায়কের ব্যান্ড পরেই এদিন মাঠে ফিরলেন এই স্প্যানিশ মিডিও। ব্রুজোঁ আগের দিনই বলেছিলেন, “আমাদের জন্য এখন সব ম্যাচই ফাইনাল”। আর ছয় ফাইনালের প্রথম ম্যাচ ছিল চেন্নাইয়নের বিরুদ্ধে। চেন্নাইও খুব ভাল জায়গায় নেই। যাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে দেওয়াটা খুব কঠিন হওয়ার কথা ছিল না। আগের দিন সেই ঘরের মাঠকেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন কোচ। কিন্তু সেখানে যেভাবে নিজেদের ভুলে বিপদে পড়তে হল বার বার, তাতে এদিন দলকে সমর্থন করতে আসা হাজার দশেক সমর্থকদের জন্য হতাশার তো বটেই। হতাশা কোচের জন্যও। শেষ ছয় ম্যাচের প্রথম ম্যাচ চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ০-৩ গোলে হেরে যে প্লে-অফের স্বপ্ন দূরেই ছিল, তা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল তো বটেই। এবার বাকি পাঁচ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের সামনে শুধুই সম্মান রক্ষার লড়াই।
প্রথমার্ধেই পর পর গোলে ইস্টবেঙ্গলকে রীতিমতো ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দিল চেন্নাই। শুরুটা আক্রমণাত্মকভাবেই করেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১০ মিনিট। তার পরই একটা ছোট্ট ভুল পুরো দলের আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়ে গেল যখন নিজের গোলেই বল ঠেলে প্রতিপক্ষকে এগিয়ে দিলেন নিশু কুমার। ১৩ মিনিটে উইলমারের পাস ধরে ইস্টবেঙ্গল গোলের একদম সামনে পৌঁছে গিয়েছিলেন জন শিল্ডস। তবে তিনি নিজের দেহের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। লাইনের বাইরে চলে যাওয়ার আগে ছোট্ট ব্যাক হিলে বল ঠেলেছিলেন। ছেড়ে দিলে যা বাইরেই যেত। জায়গায় ছিলেন না গোলকিপার গিলও। কিন্তু সেই বল ক্লিয়ার করতে গিয়েই নিজের গোলে পাঠিয়ে দিলেন নিশু। সেমসাইড সব সময়ই যে কোনও দলের আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা। তার উপর যখন সেই দল কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখন এমন ভুল হজম করা মুশকিল।
এদিন ইস্টবেঙ্গলে ক্রেসপোর সঙ্গে ফিরেছেন রাকিপও। আনোয়ারও বেঞ্চে বসার মতো জায়গায় পৌঁছেছেন, পরিবর্ত হিসেবে ৭২ মিনিটে নামলেনও। এদিকে একদিন আগেই কলকাতায় পৌঁছে পরের দিনই মাঠে নেমে পড়লেন নবাগত ক্যামেরুনের বিদেশি মেসি বাউলি। ৫৯ মিনিটে ক্রেসপোকে তুলে তাঁকে মাঠে নামিয়ে একটা ফাটকা খেলার চেষ্টা করলেন কোচ ব্রুজোঁ। কারণ একদিনও দলের সঙ্গে অনুশীলন না করা একজন প্লেয়ারকে নামিয়ে দিয়ে খেলার হাল ধরার চেষ্টা ফাটকা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। আর সেটাই করলেন তিনি। কারণ এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এই দলটার আর কিছু হারানোর নেই। এই ম্যাচে হার সুপার সিক্সের যে ক্ষিণ আশা তাতে জল ঢেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আর সেটা প্রথমার্ধেই লেখা হয়ে গিয়েছিল। যখন ২১ মিনিটে ইরফানের মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে সোলো দৌঁড়ে কেটে গিয়েছিলেন রাকিপ। এর বক্সের বাইরে থেক তাঁর সেন্টার ধরে উইলমার জর্ডনের ফিনশ গায়ে লেগে থেকেও আটকাতে পারলেন না নুঙ্গা। ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়ল ইস্টবেঙ্গল। ধুকতে থাকা একটা দলকে মানসিকভাবে পিছিয়ে দিতে ২১ মিনিটেই দুই গোল হজম করে পিছিয়ে পড়াটা বড় সেটব্যাক তো বটেই। তার পর ৩৪ মিনিটে নিশুর সেন্টার থেকে সেলিস ও ৫৬ মিনিটে নিশুরই ফ্রিকিক থেকে ক্রেসপোর নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট দলকে এক ধাক্কায় আরও অনেকটাই পিছিয়ে গেল। ৭৫ মিনিটে সেলিসের জোড়াল শট দারুণ দক্ষতায় বাঁচালেন চেন্নাই গোলকিপার মহম্মদ নওয়াজ। অতিরিক্ত সময়ে জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেন নুঙ্গা।
এখানেই শেষ নয়, পরিবর্ত হিসেবে নেমে ৯০+৯ মিনিটে ড্যানিয়েল চেন্নাইয়ের হয়ে শেষ গোলটি করে গেলেন। যা সেলিসের ফ্রিকিকে মাথা ছুঁইয়ে ড্যানিয়েলকে দিলেন কিয়ান। ইস্টবেঙ্গলের হারের তালিকায় আরও একটা সংযোজন হল। এক কথায় লজ্জার হার।১৯ ম্যাচে পাঁচটি জয়, তিনটি ড্র ও ১১টি হার-সহ ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ১১ নম্বরে নেমে গেল লাল-হলুদ ব্রিগেড। জিতে ২০ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে ১০-এ জায়গা করে নিল চেন্নাই।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন সিং গিল, মহম্মদ রাকিপ (নন্ধা কুমার), লাল চুংনুঙ্গা, হেক্টর ইউয়েস্তে (প্রভাত লাকরা), নিশু কুমার (আনোয়ার আলি), পিভি বিষ্ণু, নাওরেম মহেশ সিং, সল ক্রেসপো (মেসি বাউলি), জিকসন সিং, রিচার্ড সেলিস, দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার