সুচরিতা সেন চৌধুরী: আইএসএল ২০২৪-২৫ শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। কারও হাতে বাকি তিন ম্যাচ তো কারও চার। এর মধ্যেই বাকি হিসেব গুছিয়ে নিতে হবে সব দলকে। ইতিমধ্যেই শেষ চার নিশ্চিত করে ফেলেছে মোহনবাগান এসজি সঙ্গে লিগ শিল্ডও প্রায় ছুঁই ছুঁই অবস্থায়। সামনের ওড়িশা ম্যাচ জিততে পারলেই কাজ শেষ। তবে সেটা অত সহজ হবে না। কিন্তু আজকের বিষয়টা মোটেও লিগ শিল্ড জেতা বা আইএসএল জেতা বা হারার নয়, বিষয়টা একটু আলাদা। আর সেখানেও শীর্ষেই রয়েছে মোহনবাগান। শুধু তাই নয়, যে ইস্টবেঙ্গল এফসি ও মহমেডান এসসি লিগ টেবলের ১১ ও ১৩ নম্বরে থেকে রীতিমতো মান বাঁচানোর লড়াই করছে, এক্ষেত্রে তারাও কিন্তু উঠে এসেছে মোহনবাগানের পরেই। মানে এই একটা জায়গায় রীতিমতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করছে কলকাতার তিন প্রধান। যেখানে এক নম্বরে মোহনবাগান থাকলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে রয়েছে মহমেডান ও ইস্টবেঙ্গল।
ভাবছেন তো এমন কী হল, যে তিন প্রধান শীর্ষে। একটু না হয় ঘুরিয়ে ভাবা যাক। আইএসএল ২০২৪-২৫-এ কলকাতার তিন প্রধানকে সব থেকে বেশি সমস্যায় কী ফেলেছে? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। চোট ও কার্ড সমস্যা। কঠিন সময়ে হঠাৎই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে দলের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার। আর সেই সময় দল সাজাতে হিমশিম অবস্থা হয়েছে কোচেদের। সে হোসে মোলিনা হোক বা অস্কার ব্রুজোঁ বা চেরনিশভ। এমন অবস্থা হয়েছে যে দল ছেড়ে আপাতত দেশেই ফিরে গিয়েছেন মহমেডান কোচ। তবে এই সব সমস্যা কাটিয়ে যারা লড়াই জারি রেখেছে তাদের সাধুবাদ তো দিতেই হবে।
এবার আসি আসল কথায়। লিগ টেবল বলছে ২১ ম্যাচে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে মোহনবাগান। আর তিন পয়েন্ট এলেই একটা ট্রফি চলে আসবে ক্লাব তাঁবুতে। যেমন লিগ টেবলের শীর্ষে রয়েছে মোহনবাগান, তেমনই এই মরসুমে হলুদ কার্ড দেখার ক্ষেত্রেও শীর্ষেই রয়েছে সবজু-মেরুন ব্রিগেড। ২১ ম্য়াচে মোহনবাগানের হলুদ কার্ডের সংখ্যা ৫৬। যা সর্বোচ্চ। তার পরেই রয়েছে মহমেডান। যাদের ২০ ম্যাচে হলুদ কার্ডের সংখ্যা ৫৪। আর তিন নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। যারা এখনও পর্যন্ত হলুদ কার্ড দেখেছে ৫৩টি। চারে রয়েছে পঞ্জাব আর পাঁচে জামশেদপুর। আইএসএল-এর সেরা পাঁচ হলুদ কার্ড দেখা দলের তালিকায় সেরা তিনে কলকাতার তিন দল।
আর এই হলুদ কার্ড দেখা প্লেয়ারদের তালিকা করতে বসলে দেখা যাচ্ছে শীর্ষে রয়েছেন মহমেডানের মিরজালোল কাসিমোভ। ১৬ ম্যাচ আটটি হলুদ কার্ড দেখেছেন তিনি। তার পরেই রয়েছে মোহনবাগানের আপুইয়া। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে সাতটি হলুদ কার্ড। মোহনবাগানের শুভাশিস বোস, অ্যালবার্তো রডরিগেজ ও ইস্টবেঙ্গল মিডিও নন্ধা কুমারের রয়েছে পাঁচটি করে হলুদ কার্ড। ইস্টবেঙ্গলের হেক্টর ইউয়েস্তে ও সৌভিক চক্রবর্তীর ঝুলিতেও রয়েছে চারটি করে কার্ড। সর্বোচ্চ লাল কার্ডের তালিকায় যৌথভাবে জায়গা করে নিয়েছেন ওড়িশা এফসির আহমেদ জহু ও ইস্টবেঙ্গলের লালচুংনুঙ্গা। দু’জনেই তিনটি করে লাল কার্ড দেখেছেন। একটি করে লাল কার্ডের তালিকায় অবশ্য রাজত্ব করছেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। সেখানে রয়েছেন সৌভিক চক্রবর্তী, নন্ধা কুমার, জিকসন সিং, প্রভাত লাকরা, নাওরেম মহেশ। সব মিলে সব থেকে বেশি লাল কার্ড দেখেছে ইস্টবেঙ্গল। যা সব কোচের জন্যই বড় মাথা ব্যথার কারণ।
তবে হ্যাঁ, আরও বেশ কিছু জায়গায় শীর্ষে রয়েছে মোহনবাগান। তার মধ্যে অন্যতম গোল সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত মোহনবাগান মোট ৪২টি গোল করেছে। এক গোল পিছনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওড়িশা এফসি। তিনে ৩৯ গোল করে রয়েছে নর্থইস্ট। এর পর যেখানে শীর্ষে মোলিনার দল, সেটা হল ক্লিন শিট। মোট ১৩টি ম্যাচে ক্লিন শিট রাখতে সক্ষম হয়েছে মোহনবাগান তথা দলের গোলকিপার বিশাল কাইথ। তার পুরস্কারও পেয়েছেন বিশাল। দ্বিতীয় স্থানে আটটি ক্লিন শিট নিয়ে রয়েছে মুম্বই সিটি। আর সবার শেষে যেটা এবার দলকে চ্যাম্পিয়নশিপের এত কাছে পৌঁছে দিয়েছে সেটা হল, জয়ের সংখ্যা। ২১টির মধ্যে ১৫টি ম্যাচেই জয় তুলে নেওয়া। এটাও এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। আর এই রেকর্ডে কলকাতার বাকি দুই দল ধারে কাছেও নেই।
তবে নর্থইস্টের আলাদিন আজারের সঙ্গে টক্করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেনি টেবল টপাররা। ২১ ম্যাচ ২০ গোল করা আজারে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে। যেখানে মোহনবাগানের জেমি ম্যাকলারেন রয়েছেন পাঁচ নম্বরে ১০ গোল করে। মোহনবাগানের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় ম্যাকলারেন থাকলে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা কিন্তু দলের রক্ষণের অন্যতম ভরসা শুভাশিস বোস। ছয় গোল রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। তবে হ্যাঁ, এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই, যে এই মোহনবাগান দলে সবাই গোল করতে পারে। তাই সর্বোচ্চ স্কোরারের তালিকায় মোহনবাগানের কোনও প্লেয়ার না থাকলেও সর্বোচ্চ গোল করা দল এখনও তারাই।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার