সুচরিতা সেন চৌধুরী: মাঝ মাঠ থেকে তখন সবে বল গড়িয়েছে। শুরুতেই কর্নার তুলে নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। আর তাতেই বাজিমাত। ম্যাচের বয়স তখন সবে ৪০ সেকেন্ড। কর্নার থেকে ছোট্ট করে বল ভাসিয়েছিলেন নাওরেম। সেই বল ধরে সেন্টার করেন বোরহা হেরেরা। সেই বল সিভেরিও থেকে পেয়ে জর্ডন যখন ফিনিশ করেন তখনও আড় ভাঙেনি গোকুলাম গোলকিপারের। তবুও যতটা সহজ হবে বলে মনে করা হয়েছিল ম্যাচটা ততটাও হল না।
ডুরান্ড কাপের প্রথম ম্যাচে তুলনামূলকভাবে দুর্বল দলের সঙ্গে ড্র দিয়েই শুরু করেছিল ইস্টবেঙ্গল। যে দলকে মোহনবাগান সহজেই হারিয়ে দিয়েছিল সেই দলের সঙ্গে ড্র কিছুটা ধাক্কা দিয়েছিল লাল-হলুদকে। কিন্তু ওই যে কথায় আছে ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ডার্বি’। আর সেই ডার্বি জিতেই আত্মবিশ্বাসটা যেন একধাক্কায় অনেকটা বাড়িয়ে নিয়েছিল কুয়াদ্রাতের ছেলেরা। তাই গ্রুপের শীর্ষে থেকেই কোয়ার্টার ফাইনালের দরজা খুলে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। প্রতিপক্ষ গোকুলাম কেরালা। তুলনামূলকভাবে সহজ প্রতিপক্ষ ভাবা হলেও ইস্টবেঙ্গলকে বেগ পেতে হল ভালই।
৪০ সেকেন্ডের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর পুরো প্রথমার্ধটা সেই ব্যবধান ধরে রাখতে সক্ষম হলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তা হাতছাড়া করে বসল ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ। গোলের নিচে দামী গোলকিপারেরও তখন কিছু করার ছিল না। তার পর ম্যাচে ফিরতে রীতিমতো বেগ পেতে হল ইস্টবেঙ্গলকে। গোলমুখি আক্রমণ হলেও গোল এল না। কিছুটা ফিজিক্যাল গেম খেলল গোকুলাম। তার মধ্যেই গোকুলামের বৌবা আমিনোর আত্মঘাতী গোলে ২-১ হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেল ইস্টবেঙ্গল। তবে তখনও হাতে ছিল ১৯ মিনিট। যদিও সেই ১৯ মিনিট আর সঙ্গে ছ’মিনিটের অতিরিক্ত সময়ে গোকুলাম আর কিছু করে উঠতে পারেনি।
এদিন প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শুরু হয়েছিল ডুরান্ড কাপ ২০২৩-এর কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। বৃষ্টি মাথায় করে দলে দলে সমর্থককে দেখা গেল লাল-হলুদ পতাকা ওড়াতে ওড়াতে স্টেডিয়ামে ঢুকতে। দলকে তাতাতে মাঝে মাঝেই গ্যালারি থেকে ইস্টবেঙ্গলের নামে স্লোগান উঠল। পুরো সময়টা দলকে তাতিয়ে গেলেন সমর্থকরা। খেলার গতিও বাড়ল সময়ের সঙ্গে। তার মধ্যেই ৩২ মিনিটে ক্রেসপোর নিশ্চিত গোলমুখি শট ক্রসবারে লেগে বেরিয়ে গেল। ৩৬ মিনিটে সৌভিকের সেন্টার থেকে সিভেরিওর হেড অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল। প্রতিপক্ষের লোপেজের শট দারুণ দক্ষতায় বাঁচালেন ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার প্রভসুখন গিল।
ছন্দ কাটল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে। ৫৬ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলের ব্যবধান ধরে রাখার পর গোকুলামকে সমতায় ফেরালেন বৌবা। যেখানে কিছুটা অসহায় দেখাল ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে। শেষ পর্যন্ত কিন্তু গোল এল না ইস্টবেঙ্গলের তরফে। আত্মঘাতী গোলের সৌজন্যে ৯০ মিনিটে জয় এল ইস্টবেঙ্গলের। সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড। ভুল-ভ্রান্তিগুলো শুধরে নিয়েই নামতে হবে ইস্টবেঙ্গল কোচকে।
ইস্টবেঙ্গল— প্রভসুখন গিল, লাল চুংলুঙ্গা, হরমনজ্যোত খাবরা, নিশু কুমার (মন্দার রাও দেশাই), জর্ডন এলসে, নন্ধ কুমার ( সুহের), সল ক্রেসপো, সৌভিক চক্রবর্তী (হোসে আন্তোনিও পার্দো), বোরহা হেরেরা, নাওরেম মহেশ, জ্যাভিয়ের সিভেরিও।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার