অলস্পোর্ট ডেস্ক: আইএসএল ২০২৪-২৫-এর শেষ প্রান্তে এসে জ্বলে উঠেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। বিরাট কিছু হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মরসুম শেষ করতে চেয়েছিলেন কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। যার ফল অতি প্রতিক্ষিত জয়ের হ্যাটট্রিক শেষ পর্যন্ত হয়েছে তাদের। সঙ্গে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল দল। শেষ পাঁচ ম্যাচের চতুর্থ ম্যাচে রবিবার ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ ছিল সেরা ছয়ে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি। লিগ টেবল দেখলে এক কথায় অসম লড়াই। আটের সঙ্গে চারের লড়াইয়ে এদিন অন্য গল্প লেখার কথাই ছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অসাধারণ লড়াই করে ১-১ গোলে শেষ হল ম্যাচ। ৯০ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলের ব্যবধান ধরে রাখার পর জয় হাতছাড়া হওয়াটা হতাশার তো বটেই। সঙ্গে প্লে-অফের দৌঁড় থেকে অফিশিয়ালি ছিটকে যাওয়া। তবে শেষ বেলায় ইস্টবেঙ্গলের দুরন্ত কামব্যাক সুপার কাপ ও এএফসিতে দলকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে নিশ্চিত।
যেখানে হ্যাটট্রিকের ম্যাচ শেষ করেছিল ইস্টবেঙ্গল সেখান থেকেই যেন খেলা শুরু করেছিল এদিন। যদিও সেদিন প্রতিপক্ষ ছিল হায়দরাবাদ আর এদিন বেঙ্গালুরু। যে দলে রয়েছে সুনীল ছেত্রীর মতো তারকা ফরোয়ার্ড। সঙ্গে ১০ পয়েন্টের পার্থক্য। এদিনের দলে অস্কার ব্রুজোঁ ফেরান পিভি বিষ্ণুকে, বাইরে বসতে হয় নিশু কুমারকে। এদিন দলে একাধিক পরিবর্তন করলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। নুঙ্গার জায়গায় দলে আনলেন প্রভাত লাকরাকে।
প্রথম থেকেই এদিন আক্রমণাত্মক ফুটবল দিয়েই শুরু করেছিল ইস্টবেঙ্গল। যার ফল ১১ মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল হোম টিম সেই মেসি বৌলির গোলে। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে তাঁর অসাধারণ গোল কোচকে যে ভরসা দিয়েছিল সেটা তিনি সেদিনই ম্যাচের পর বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এদিন তাই প্রথম থেকেই গোলের জন্য ভরসা রাখা হয়েছিল মেসির উপরই। সল ক্রেসপোর সঙ্গে টাচ খেলে উঠে গিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু ততক্ষণে ক্রেসপোকে গিরে ধরেছে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা। সেখান থেকেই বল বের করে এগিয়ে দিয়েছিলেন ক্রেসপো। সেই বল দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে জালে জড়ান মেসি। গোলের নিচে কিছু করার ছিল না গুরপ্রীতেরও। এই গোল যতটা মেসির ততটাই ক্রেসপোর।
গোল হজম করেই সমতায় ফেরার চেষ্টা শুরু করে বেঙ্গালুরু। ১৩ মিনিটেই সুনীল ছেত্রীর প্রচেষ্টা অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেন গিল। ২৫ মিনিটে মহেশের শট দিয়ামান্তাকোসের পায়ে লেগে গোলে চলে গেলেও অফসাইডের জন্য তা বাতিল হয়। এটা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু তার এক মিনিটের মধ্যে ছয় গজ বক্সের ভিতর থেকে যে বল বাইরে পাঠালেন বিষ্ণু তা এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বড় ভুল ছাড়া আর কিছুই নয়। তার মধ্যেই বড় ধাক্কা দিল আনোয়ারের চোট। ৩২ মিনিটেই তাঁকে তুলে জিকসন সিংকে নামাতে বাধ্য হলেন অস্কার। এখানেই শেষ নয়, ইস্টবেঙ্গল সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেল প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে দিয়ামান্তাকোসের লাল কার্ডে। প্রতিপক্ষ প্লেয়ারকে মাথা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হল তাঁকে। যার ফলে পরের ৪৫ মিনিট ১০ জনে খেলতে হল ইস্টবেঙ্গলকে।
সঙ্গে এক গোলের ব্যবধান নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমেছিল ১০ জনের ইস্টবেঙ্গল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লাকরাকে তুলে নিশুকে নামিয়ে দিয়েছিলেন কোচ। ৭০ মিনিটে জোড়া পরির্তন করলেন, মেসি ও বিষ্ণুর জায়গায় সেলিস ও ডেভিডকে নামিয়ে। ১০ জনের ইস্টবেঙ্গল রক্ষম্নাত্মক না খেলে বরং আরও আক্রমণাত্মক ফুটবলকেই বেছে নিল। শনিবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের বিক্রম প্রতাপ সিং লাল কার্ড দেখার পর। দ্বিতীয় গোল করেছিল মুম্বই এবং ম্যাচ ড্র রাখতে সক্ষম হয়েছিল। সেটা ইস্টবেঙ্গলের জন্য প্রেরণা হতে পারত এদিন।
৭৬ মিনিটে যখন কাউন্টার অ্যাটাকে মহেশের পাস একদম বক্সের মধ্যে পেয়ে গিয়েছিলেন ডেভিড এবং গোল করা ছিল সময়ে অপেক্ষা। এগিয়ে এসে শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর দূর্গ রক্ষা করলেন গুরপ্রিত। তার আগে ও পড়ে বেঙ্গালুরু যে নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করল তাতে ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্য ভাল ছিল বলা যেতেই পারে। কিন্তু শেষ মিনিটে বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল করে বেঙ্গালুরুকে পেনাল্টি পাইয়ে দিলেন নিশু কুমার। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করলেন না সুনীল ছেত্রী। অতিরিক্ত সময়ে সমতায় ফিরল বেঙ্গালুরু। তার পরও সুযোগ এসে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে তবে ভাগ্য এতটাও প্রসন্ন ছিল না। তাই ম্যাচ ড্র রেখেই থামতে হল অস্কার ব্রুজোঁর দলকে।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন সিং গিল, মহম্মদ রাকিপ, হেক্টর ইউয়েস্তে, আনোয়ার আলি (জিকসন সিং), প্রভাত লাকরা (নিশু কুমার), সৌভিক চক্রবর্তী, সল ক্রেসপো, মহেশ সিং, পিভি বিষ্ণু (ডেভিড)), দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস, মেসি বৌলি (রিচার্ড সেলিস)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার