সুচরিতা সেন চৌধুরী: মাত্র ৩৬ সেকেন্ডে ১১ জনের দল হয়ে গেল ৯ জনের। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচ ছিল ইস্টবেঙ্গলের জন্য কিন্তু সেখানে রেফারির বেশ কিছু অন্যায় সিদ্ধান্ত শুরুতেই বড় ধাক্কা দিল লাল-হলুদ ব্রিগেডকে। আইএসএল-এ টানা ছয় ম্যাচ হেরে এএফসি চ্যালেঞ্জারে খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। সেখানে জয় তাদের অনেকটাই আত্মবিশ্বাস দিয়েছে যা কাজে লাগিয়ে আইএসএল-এ পয়েন্টের লক্ষ্যে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল এফসি কিন্তু সব ভেস্তে দিলেন একা হাতে রেফারি। ম্যাচ শুরুর আধ ঘণ্টার মধ্যে একটি নিশ্চিত পেনাল্টি না দেওয়া থেকে শুরু করে নন্ধা কুমারকে সরাসরি লাল কার্ড আর নাওরেম মহেশকে জোড়া হলুদ কার্ড দেখিয়ে খেলাাটাই শেষ করে দিলেন হরিশ কুণ্ডু। বাকি ৬০ মিনিট ছিল অপেক্ষার। স্বাভাবিকভাবেই রেফারিংয়ের মান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠে গেল।
এদিন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা অনেকবেশি পরিমাণে গ্যালারিতে উপস্থিত থাকলেও মহমেডান গ্যালারি ছিল হাতে গোনা। অফিসিয়াল হিসেব বলছে প্রায় ২২ হাজার। এদিন শুরুতে ইস্টবেঙ্গলের সামনে বেশ কয়েকটি সুযোগ এসে গিয়েছিল, কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে তা গোলে রূপান্তরিত হয়নি। ১৪ মিনিটে ‘ডি’এর মধ্যে হ্যান্ডবল করে মহমেডানকে ভাল জায়গায় ফ্রিকিক পাইয়ে দিয়েছিলেন হিজাজি মেহের। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেনি সাদা-কালো ব্রিগেড। এর পর ২১ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলকে নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করা হয়। বক্সের মধ্যে দিয়ামান্তাকসকে নিশ্চিত ফাউল করেন লালরেমসাঙ্গা কিন্তু রেফারি ফ্রিকিক দেন।
এই পর্যন্তও সব ঠিক ছিল। খেলার স্পিরিটটাই নষ্ট করে দিল কিছু সিদ্ধান্ত। ৩৬ সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটো লাল কার্ড এক নজিরবিহীন ঘটনা। ২৮ মিনিটে বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ইস্টবেঙ্গলের নন্ধা কুমারকে জামা টেনে আটকানোর চেষ্টা করেন অমরজিত সিং। সেই সময় নিজেকে ছাড়াতে অমরজিতের মুখে আঘাত করেন নন্ধা। অমরজিতকে হলুদ কার্ড দেখানোর পাশাপাশি নন্ধাকে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে দেন রেফারি। এটা হলুদ কার্ডও হতে পারত।
এই লাল কার্ডে স্বাভাবকিভাবেই উত্তেজনা ছড়ায় মাঠের মধ্যে। নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রেফারির সামনেই জলের বোতলে লাথি মেরে বসেন নাওরেম। আগেই হলুদ কার্ড দেখেছিলেন তিনি, দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকেও। পর পর লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন নন্ধা ও নাওরেম। গ্যালারিতেও সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায় কিন্তু তা নিজেরাই বাড়তে দেননি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। পুরো ম্যাচটাই তারা দলের হয়ে গলা ফাঁটিয়ে যান। এই ম্যাচে ফুটবলকে ছাঁপিয়ে গেল একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত। তবে ইস্টবেঙ্গল দলের লড়াইয়ের কথা বলতেই হবে।
দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা ফুটবল হল ঠিকই তবে ১১-এর বিরুদ্ধে ন’য়ের লড়াইও চলল সমানে সমানে। এর মধ্যেই ইস্টবেঙ্গল আক্রমণও করল আবার মহমেডানের আক্রমণকে আটকে দিল দারুণ দক্ষতায়। এদিন ইস্টবেঙ্গল গোলের নিচে অসাধারণ ছিলেন প্রভসুখন গিল। তাঁর হাতে একাধিক সুযোগ আটকে গেল মহমেডানের। কিন্তু ন’জনের ইস্টবেঙ্গলকে পেয়েও কাজের কাজ কিছু করতে পারল না মহমেডান। সঙ্গে মিলল ১০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ও। কিন্তু ম্যাচের ফল গোলশূন্য। এক কথায় এটিকে ইস্টবেঙ্গলের নৈতিক জয় বলা যেতেই পারে। আইএসএল ২০২৪-২৫-এ প্রথম পয়েন্ট এই ম্যাচ থেকেই পেল ইস্টবেঙ্গল। সাত ম্যাচে এক পয়েন্ট ইস্টবেঙ্গলের। অন্যদিকে সাত ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট হল মহমেডানের। বিতর্কীত এই ম্যাচ থেকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করল লাল-হলুদ ব্রিগেড। অন্যদিকে আরও হতাশায় ডুবে যাওয়ার জন্য এই ম্যাচই যথেষ্ট মহমেডানের।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন সিং গিল, মহম্মদ রাকিপ, আনোয়ার আলি, হিজাজি মেহের, লাল চুংনুঙ্গা, নাওরেম মহেশ, মাদিহ তালাল (ক্লেটন সিলভা), সৌভিক চক্রবর্তী (জিকসন সিং), নন্ধা কুমার, সল ক্রেসপো, দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস (ডেভিড)
মহমেডান: ভাস্কর রায়, গৌরব বোরা, জোডিংলিয়ানা, ভানলালজুডিকা, ফ্লোরেন্ত ওজির, মিরজালোল কাসিমোভ, অমরজিত সিং (লালরিনফেলা/মহম্মদ ইরশাদ), অ্যালেক্সিস গোমেজ (মানজুক), বিকাশ সিং, লালরেমসাঙ্গা (মাকা ছোটে), কার্লোস এনরিক ফ্রাঙ্কা
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার