অলস্পোর্ট ডেস্ক: তাঁর রাজ্যের দুই তারকা ফুটবলার রমন বিজয়ন, কে কুলুথুঙ্গনকে একসময় লাল-হলুদ জার্সিতে খেলতে দেখেছেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁদের ফ্যান এডউইন ভন্সপল তাই যখন সেই লাল-হলুদ জার্সি গায়ে মাঠে নামার প্রস্তাব পান, কোনও দ্বিধা করেননি। নির্দ্বিধায় হ্যাঁ করে দেন।
৩০ বছর বয়সী তামিল রাইট ব্যাক এডউইন সিডনি ভন্সপলের সঙ্গে চেন্নাইন এফসি-র চার বছরের চুক্তি শেষ হওয়ার পরেই সম্প্রতি ইস্টবেঙ্গল এফসি নিয়ে এল তাঁকে। ২০১৮-১৯-এ চেন্নাইন এফসি-র হিরো আইএসএল খেতাব জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তিনি। ২০১৯-২০-তে চেন্নাইনের রানার্স আপ হওয়ার পেছনেও তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। হিরো আইএসএলে ৭১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। গত মরশুমে ক্লাবের হয়ে সব মিলিয়ে ২৬টি ম্যাচ খেলেন তিনি। তিনটি গোল করেছেন ও দুটি অ্যাসিস্টও করেন তিনি। তিনিও প্রথম কলকাতার ক্লাবে যোগ দিতে চলেছেন।
কলকাতার এই ক্লাবে যোগ দিয়ে কেরিয়ারের এক নতুন অধ্যায় শুরু করা নিয়ে ভন্সপল বলেছেন, “ইস্টবেঙ্গলের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের হয়ে খেলা আমার কাছে বিশাল ব্যাপার। এর আগে যতবার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলেছি, ওদের সমর্থকদের দেখে দারুন লেগেছে। এবার এই পরিবেশের মধ্যে আমিও থাকব ভেবেই দারুন লাগছে। কোচ কার্লসের তত্ত্বাবধানে খেলার এবং আমার ভাল বন্ধু নন্দকুমারের সঙ্গে মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছি”।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার একটা পরিবর্তন দরকার ছিল। একটা নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রয়োজন। ইস্টবেঙ্গল এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্লাবগুলির অন্যতম এবং বিশাল ঐতিহ্য তাদের। রমন বিজয়ন, প্রয়াত কে কুলথুঙ্গনদের মতো তামিল ফুটবল তারকাদের এই ক্লাবের জার্সিতে খেলতে দেখেছি। ওখানে খেলেই সুনাম অর্জন করেছেন ওঁরা। আমি ওঁদের খেলা দেখেই বড় হয়েছি। তাই এই ক্লাবের পক্ষ থেকে যখন সই করার প্রস্তাব পাই, তখন আমি গর্বিত অনুভব করি। আমার মনে এটা আমার পক্ষে একটা বড় পদক্ষেপ।”
তাঁর প্রাক্তন ক্লাব চেন্নাইন এফসি-র প্রাক্তন কোচ জন গ্রেগরির তত্ত্বাবধানে ২০১৯-২০ থেকে নিজেকে দ্রুত উন্নত করে তোলেন এডুইন। গ্রেগরিই হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে তাঁকে প্রথম খেলার সুযোগ দেন। এই ক্লাবকে দ্বিতীয়বার হিরো আইএসএল খেতাব এনে দিয়েছিলেন এই কোচই। কিন্তু পরের মরশুমেই গ্রেগরিকে বিদায় দিয়ে চেন্নাইন এফসি নিয়ে আসে আর এক সফল কোচ ওয়েন কোইলকে। তিনি দলকে প্রায় খাদের কিনারা থেকে টেনে নিয়ে এসে ফাইনালে তোলেন। কিন্তু সে বার ফাইনালে এটিকে এফসি-র কাছে হেরে যায় তারা। এই সব ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন এডউইন। ফলে অনেক চড়াই-উতরাই দেখার অভিজ্ঞতা তাঁর আছে।
ওয়েনের প্রশংসা করে এডউইন বলেন, “ওঁর কথাতেই আমরা সবাই তেতে উঠেছিলাম। আমি নিজেও এতটাই প্রভাবিত হই কোচের কথায় যে উজ্জীবিত ফুটবল খেলতে শুরু করি। কারও ভিতর থেকে কী ভাবে সেরাটা টেনে বের করে আনা যায়, তা উনি খুব ভাল জানেন”। এডুইনের কাছ থেকেও সেভাবেই সেরাটা বের করে এনেছিলেন তিনি।
আগে ফুল ব্যাকে খেলতেন। পরে দলের প্রয়োজনে মাঝমাঠে অনিরুদ্ধ থাপার সঙ্গে জুটি বাঁধেন। সেই থেকে মাঝমাঠেই স্বচ্ছন্দে খেলে যাচ্ছেন তিনি। “২০২০-র জানুয়ারিতে জারমানপ্রীত সিং সাসপেন্ড হয়ে যাওয়ায় কোচ ওয়েন আমাকে মাঝমাঠে খেলতে বলেন এবং আত্মবিশ্বাস জোগান যে, আমি পারব। আমি আই লিগে একটা সময় মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেছি। কিন্তু এই ঘটনার আগে টানা দু’বছর ফুল ব্যাক হিসেবেই খেলতাম। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে মাঝমাঠে থাপার সঙ্গে ভালই খেলেছিলাম। তাই উনি আমাকে ওই জায়গাতেই খেলা চালিয়ে যেতে বলেন। উনি আমাকে যে পজিশনে খেলাতে চাইতেন, আমি সেই পজিশনেই খেলেছি। তাতে আমার এবং দলের উপকার হয়েছে। তবে এর ফলে আমার পরিসংখ্যানে তেমন উন্নতি হয়নি। আমার মনে হয়, একজন ফুটবলার যদি নিজের আসল জায়গায় টিকে থেকে খেলতে পারে, তা হলেই তার পরিসংখ্যানে উন্নতির ছাপ লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন জায়গায় খেললে সেটা হয় না। ম্যাচ টাইমও কম পাওয়া যায়”।
তবে এডউইনের এই বিভিন্ন জায়গায় খেলতে পারাটা ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতের কাছে একটা প্লাস পয়েন্ট। তিনি বলেছেন, “ভন্সপল বিভিন্ন পজিশনে খেলতে পারে, এটাই ওর সবচেয়ে বড় সুবিধা। ফুটবল ওর আবেগ। যার ফলে মাঠে ও নিজেকে নিঙড়ে দেয়”।
চার বছর পরে নিজের রাজ্য ছেড়ে ভিনরাজ্যে খেলতে আসাটা তাঁর কাছে দুঃখের ঠিকই। কিন্তু পেশার খাতিরে সবার মতো তিনিও তা মেনে নিয়েছেন। বলেন, “এত বছর নিজের রাজ্যে খেলার পরে অন্য রাজ্যে এসে খেলতে হবে ভাবলে মন খারাপ হচ্ছে, আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি ঠিকই। আমি আসলে একটু আবেগপ্রবণই। কিন্তু পেশাদার হিসেবে আমাকে তো এগিয়ে যেতেই হবে। তাই এই সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম”।
(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার