সুচরিতা সেন চৌধুরী: এর আগে ভারতীয় ফুটবলে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে কোচ ও ফেডারেশনের সম্পর্ক নিয়ে কিন্তু এভাবে সর্ব সমক্ষে একে অপরকে আক্রমণ হয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। সম্প্রতি সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন ভারতীয় সিনিয়র পুরুষ ফুটবল দলের কোচ ইগর স্টিমাচকে এক কথায় বরখাস্ত করেছে। যা কোনওভাবেই হজম করতে পারছেন না স্টিমাচ। প্রাথমিকভাবে চুক্তির মাঝ পথে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বড় অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন। পাশাপাশি শুক্রবার অনলাইন সাংবাদিক সম্মেলন করে ফেডারেশনকে তুলোধনা করেছেন তিনি। ফেডারেশনও জানিয়েছে দ্রুত তার জবাব তারা দেবে। এই নিয়ে কী ভাবছেন ভারতের প্রাক্তন ফুটবলাররা?
শনিবার স্পোর্টস জার্নালিস্ট ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন ভারতের দুই প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস ও অ্যালভিটো ডি’কুনহা। সেখানেই উঠে এল ইগর স্টিমাচ ইস্যু। দুই ফুটবলারই এই ইস্যুতে এক মেরুতে দাঁড়িয়ে। কেউ মেনে নিতে পারছেন না, ইগর স্টিমাচের ব্যবহার। দীপেন্দু বিশ্বাসের প্রশ্ন, ‘‘পাঁচ বছরে কী করেছে এই কোচ?’’ অ্যালভিটো প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘এতদিন তাহলে চুপ করে কেন ছিলেন?’’
দীপেন্দু বিশ্বাস বলছেন, ‘‘যদি পিছন ফিরে তাকাই তাহলে দেখা যাবে আমাদের দেশের ফুটবলে অনেকবেশি সফল ভারতীয় কোচরাই। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল দত্ত, নঈমউদ্দিন। এমন কী রহিম সাহেব। নঈম স্যারের পরে ভারতীয় ফুটবল দলে সাফল্য কোথায়? মাঝে যদি বিদেশি কোচের সাফল্য ধরা যায় তাহলে মিলোভান আর আক্রমভের কথা বলতে হয়। এছাড়া কে সাফল্য দিয়েছে?’’ এক কথায় দেশীয় কোচের পক্ষে সওয়াল করছেন দীপেন্দু।
তিনি বলছিলেন, ‘‘আমাদের দেশে এখন অনেক লাইসেন্স কোচ রয়েছে। অবশ্যই ভারতীয় কোচের কথা ভাবা উচিত। তাদের ব্যবহার করা উচিত। মহেশ গাউলি তো দলের সঙ্গে রয়েছেই সহকারি কোচ হিসেবে। ক্লাইমেক্স, শঙ্করলালেরও প্রো-লাইসেন্স রয়েছে। তাহলে ওরা কেন ভারতীয় ফুচবল দলের কোচিং করাতে পারবে না? ওদের কথা ভাবা উচিত।’’
এখানে অবশ্য দীপেন্দু বিশ্বাসের সঙ্গে একমত নন অ্যালভিটো ডি’কুনহা। তিনি বলছেন, ‘‘ভারতীয় কোচ হলে তো ভাল তবে সেক্ষেত্রে একটা সমস্যা দেখা দেবে। ভারতীয় ক্লাবগুলো ভারতীয় কোচদের উপর চাপ তৈরি করবে। প্লেয়ার ছাড়া নিয়ে নানারকম বায়না করবে। ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে কিছু বলবে। তবে বিদেশি কোচের ক্ষেত্রে তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ সাদা চামড়া দেখলে আমরা বিশেষ কিছু করতে পারি না।’’
তবে ইগর স্টিমাচের ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন তুলছেন অ্যালভিটো। তিনি বলছেন, ‘‘এতদিন ধরে যখন এত সমস্যা হচ্ছিল তখন কেন তিনি মুখ খোলেননি। আজকে ছাঁটাই হওয়ার পর সব কিছু কেন মনে পড়ছে? এছাড়া ফেডারেশন যখন তাকে কোনও সাপোর্টই করেনি তাহলে আগেই কেন ছেড়ে চলে যাননি? বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে না উঠতে পারলে নিজেই সরে যাওয়ার কথা বলার পরও কেন সরে যাননি। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তাহলে কি তিনি জানতেন এই চাকরি চলে গেলে আর কোথাও কাজ পাবেন না।?’
দীপেন্দু বিশ্বাস বলছিলেন, ‘‘ইগর স্টিমাচ যখন ভারতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব নিয়েছিল তখন দলের র্যাঙ্কিং ৯৫-৯৬ ছিল। আর এখন দল দাঁড়িয়ে ১২৪-এ। অবনতি ছাড়া তো কিছুই আর হয়নি দেখছি। তাহলে তাঁকে কেন বয়ে বেড়াবে ফেডারেশন?’’
এখন ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার দৌঁড়ে অনেক নামই ঘুরছে। অনেকেই আবেদন জানিয়েছে, এই পদের জন্য। সেই তালিকায় যেমন রয়েছেন প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। কোনও ভারতীয় আবেদন জানিয়েছেন কিনা তা এখনও জানা যায়নি। তবে নতুন কোচের খোঁজ শুরু হয়ে গিয়েছে। হয়তো দ্রুত নিশ্চিত হয়ে যাবে নতুন কোচের নাম। প্রশ্ন একটা থাকছেই, যেই কোচ আসুন না কেন, এই ভারতীয় দলকে ঠিক কতটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবেন তিনি? ইগর স্টিমাচরা আসবেন, যাবেন। কেউ অভিযোগ তুলবেন, কেউ পাশে থাকবেন। কোচ আসবে, কোচ যাবে কিন্তু ভারতীয় ফুটবল কি বিশ্ব ফুটবল মঞ্চের ধারে কাছে পৌঁছতে পারবে? পারলে কবে পারবে?
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার