সুচরিতা সেন চৌধুরী: ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতে তখন আর বাকি দুই থেকে আড়াই মিনিট। অতিরিক্ত সময়ের খেলা চলছে। ততক্ষণে যদিও ইস্টবেঙ্গলের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, তবে সেটা আত্মঘাতি গোলে। দলের অন্দরে একটা খচখচানি মনে হয় ছিলই। শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতি গোলে জয়ের হ্যাটট্রিক! এটা কীভাবে হতে দেওয়া যেতে পারে? চকিতে এল সেই মুহূর্ত। নিজের বক্স থেকে উড়ে আসা গোল কিক এসে পড়ল ইস্টবেঙ্গলের মেসির পায়ে। তখন তিনি মাঝমাঠে নিজেদের দিকের ‘ডি’এর মধ্যেই দাঁড়িয়ে। সেখান থেকেই বল পায়ে শুরু দৌঁড়। বাড়ল গতি, একের পর এক ছিটকে যেতে থাকল হায়দরাবাদের ফুটবলাররা। শেষ পর্যন্ত পিঠে লেগে থাকলেন একজন কিন্তু পুরো শরীর দিয়ে বলকে আগলে রাখলেন মেসি। এর পর আর বেশি ঝুঁকি নেননি। পা বদলাতে বদলাতে বক্সের বাইরে থেকেই নিলেন শট। তাঁর বাঁয়ের শট এবার ছিটকে দিল গোলকিপারকেও। বলে তো গোলের ঠিকানা লেখাই ছিল। শেষ পর্যন্ত জয়ের ন্যায্য হ্যাটট্রিক সম্পন্ন হল ইস্টবেঙ্গলের।
মঙ্গলবারই চেন্নাইয়ন এফসি বেঙ্গালুরুর কাছে হেরে যাওয়ায় লিগ টেবলে নয় নম্বর থেকে আট নম্বরে উঠে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। এই জয়ে অবশ্য লিগ টেবলের কোনও পরিবর্তন হল না। ২২ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে আটেই থেকে গেল ইস্টবেঙ্গল। যদিও এদিন ৮৬ মিনিট পর্যন্ত একবারও মনে হয়নি ইস্টবেঙ্গল জিততে পারে। ঠিক যতটা ভাল ফুটবল খেলেছিল পঞ্জাব এফসির বিরুদ্ধে ততটাই খারাপ ফুটবলের নজির রাখল দল। সঙ্গে দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোসের অসংখ্য গোল নষ্টের খেসারত দিতে হত যদি না শেষবেলা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের জালেই বল পাঠিয়ে দিতেন মনোজ মহম্মদ।
সেলিসের কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড করার জন্য লাফিয়েছিলেন পরিবর্ত হিসেবে নামা ডেভিড। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল ডেভিডের হেডেই হয়েছে গোল। ডেভিডের উচ্ছ্বাস দেখেও তেমনটাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু অ্যাকশন রিপ্লেতে দেখা গেল আসলে বল ডেভিডের মাথার নাগাল টপকে মনোজ মহম্মদের মাথা ছুঁয়ে ঢুকে গিয়েছে হায়দরাবাদ গোলে। তার আগে পর্যন্ত যতগুলো গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেছে ইস্টবেঙ্গল তা থেকে পাঁচ গোল হতেই পারত। দিয়ামান্তাকোস একাই নিশ্চিত তিনটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন।
বুধবার ঘরের মাঠে শেষ পাঁচ ম্যাচের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। হাতে রয়েছে আর দুই ম্যাচ। খাতায় কলমে শেষ ছ’য়ের স্বপ্ন বেঁচে গেল শেষ নয় মিনিটের খেলায়। শেষ দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষ কঠিন হলেও দলের কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই তো বটেই। কোচ কি পারবেন দিয়ামান্তাকোসকে বেঞ্চে রেখে প্রথম থেকে ডেভিডকে খেলাতে? তা সময়ই বলবে, তবে শেষ দুই ম্যাচে দলের সেরা অস্ত্রদেরই শান দিয়ে নামিয়ে দেওয়া উচিত তাঁর। সেটা যদি দামী বিদেশিকে বসিয়ে কমদামী দেশী ফুটবলার হয়, তাও। সঙ্গে ডেভিডকে আরও কিছুটা বেশি ম্যাচ টাইম দেওয়াও প্রয়োজন, বিশেষ করে সুপার কাপের কথা মাথায় রেখে।
এদিন দিয়ামান্তাকোস প্রথম নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন ১৬ মিনিটে। ক্রেসপোর পাস বক্সের মধ্যে প্রতিপক্ষের ফুটবলারের পায়ে লেগে একদম ফাঁকায় পেয়ে গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের দিমি। কিন্তু সেই বল ধরে, পা বদলে, ঘুরে শট নিতে যে সময় লাগালেন তা থেকে আর যাই হোক, গোল হয় না। এরকম একই দৃশ্য এদিন দেখা গেল একাধিকবার। সুযোগ পেল হায়দরাবাদও। ২০ মিনিটের মাথায় প্রথমে এডমিলসন ও পরে অ্যালান ডি’সুজার শট পর পর বাঁচালেন প্রভসুখন সিং গিল। না হলে বিপদে পড়তে হত ইস্টবেঙ্গলকে। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে এই এডমিলসনেরই ফ্রিকিক পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। পোস্ট বাঁধা হয়ে ওঠে ইস্টবেঙ্গলেরও। ৫৩ মিনিটে মেসির শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। ৬২ মিনিটে এবার বক্সের মধ্যে সেলিসের থেকে বল পেয়েও গোলে রাখতে ব্যর্থ হন মহেশ। সব মিলে মিসের যা বহর এদিন দেখা গেল তাতে, এএফসি ও সুপার কাপের আগে নতুন করে ভাবতে হবে ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোঁকে।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন সিং গিল, মহম্মদ রাকিপ, হেক্টর ইউয়েস্তে (রিচার্ড সেলিস), আনোয়ার আলি, লাল চুংনুঙ্গা, মহেশ সিং (জেসিন টিকে), সৌভিক চক্রবর্তী (জিকসন সিং), সল ক্রেসপো, নিশুকুমার (প্রভাত লাকরা), দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস (ডেভিড), মেসি বৌলি
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার