সুচরিতা সেন চৌধুরী: ১৯টা বছর নেহাৎই কম নয়। শিলটন পাল অবশ্য বলেন, ১৯ নয় ৩৪ বছর আমি ফুটবলকে দিয়েছি। সেই ছোট্টবেলা থেকেই ফুটবলের সঙ্গে সম্পর্কটা তৈরি করে দিয়েছিলেন বাবা। তার পর থেকে শুধুই ফুটবল। পিটার শিটনের ভক্ত বাবা ছেলে জন্ম হতেই পুরোটা যে পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন তাার প্রমাণ পাওয়া শিলটনের নামেই। বাবার ইচ্ছে মতই শিলটন পাল গোলকিপার হয়েছেন, দাপটের সঙ্গে খেলছেন ভারতীয় ফুটবলে, ছোট্ট শিলটন একদিন তারকাও হয়ে উঠেছেন। তার পর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ সময়। বুটজোড়া তুলে রেখেছেন এক সপ্তাহ আগেই। নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই, বরং বলছেন, “এটাই সঠিক সময় ছিল আমার বিশ্বাস। অনেকেই বলেছিলেন, আরও কয়েকবছর খেলা যেতে পারে। কিন্তু সিদ্ধান্তটা নিতেই হত।”
সোমবার ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে শিলটন পালের ভারতীয় ফুটবলের এই দীর্ঘ জার্নিকেই সেলিব্রেট করা হল একঝাঁক কচিকাঁচা ভবিষ্যতের মহিলা ফুটবলারদের সঙ্গ। বিটিএ সিএসজেসি ফুটবল স্কুলের বাচ্চাদের হাতে জার্সি, প্যান্ট তুলে দিলেন শিলটন। সঙ্গে ক্লাবের যে কোনও ভাল উদ্যোগে পাশে থাকার বার্তাও দিয়ে গেলেন তিনি। তবে তাঁর ফুটবল থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া হয়তো শুরু হয়ে গেল। মেনে নিলেন, আপাতত সত্যিই তিনি ফুটবল থেকে দূরে থাকতে চান। মন দিতে চান ব্যবসায়।
পাশে বসা শিলটনের স্ত্রী বলছিলেন, “যেভাবে ফুটবল খেলার সময় একশো শতাংশ তাতে ডুবে থাকত, ব্যবসার ক্ষেত্রেও তাই। বদল তেমন কিছু হয়নি, শুধু ফুটবল খেলাটা থাকবে না। যেটাকে আমি মিস করব। আমি এখনও ওর এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে এক মত নই।” তবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন মোহনবাগানের একসময়ের ঘরের ছেলে। এখনও আবেগান্বিত হয়ে পড়েন মোহনবাগানের কথা এলে। কিন্তু অবসরটা এতটাই সাদামাটা হল কেন? আসলে শিলটনই চাননি কোনও জাঁকজমক।
বলছিলেন, “আমি চাইলে আগেই জানাতে পারতাম। অনেকেই যারা আমাকে ভালবাসে, আমার ফ্যানরা আমাকে বলছিল, আগে জানতে তারা মাঠে আসত। কিন্তু আমি চাইনি। আমি ম্যাচের দিন সকালে জানিয়েছিলাম।” এর সঙ্গেই তিনি জুড়ে দেন, ”আমি কখনও খুব আশা করি না। কারণ তাতে হতাশাই বেশি জোটে। তার থেকে কিছু আসা না করাই ভাল।” চাপা অভিনটা কথার মাঝে মাঝে বার বার উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল। বলছিলেন, “আমি যতক্ষণ একশো শতাংশ দিতে পারি ততক্ষণই তার মধ্যে থাকি। একটি ক্লাব আমাকে তাদের দায়িত্ব নিতে বলেছিল। কিন্তু আমি সেটায় রাজি হইনি।”
বাংলার ফুটবল থেকে জাতীয় দলের জার্সি, বাঙালি গোলকিপার থেকে ফুটবলের আবেগ, এদিন যেন সব নিয়েই অকপট শিলটন পাল। বলছিলেন, “শুধু গোলকিপার কেন, সব পজিশনেই একই অবস্থা। কোথায় আছে বাঙালি প্লেয়ার। হাতে গোণা কয়েকজন। তাহলে কীভাবে উঠে আসবে তারা? প্রীতম কোটালকে যখন ছেড়ে দেওয়া হল তখন ও ভাল ফর্মে ছিল। যত বাংলার প্লেয়ার বাইরের রাজ্যে খেলছে তাদের কলকাতায় ফেরানো উচিত।” আর এখানেই কোথাও আবেগের অভাব দেখছেন শিলটন। তাঁর মতে, তাঁর সময়ের মোহনবাগান আর এখনকার মোহনবাগানের মধ্যে এটাই বড় পার্থক্য।
তাঁর বড় ফুটবলার হয়ে ওঠার পিছনের সব কৃতিত্বই তিনি দিচ্ছেন তাঁর বাবা-মাকে। বলছেন, “বাবা-মার জন্যই আমি এখানে পৌঁছতে পেরেছি। সব কৃতিত্ব তাদের। তার পর স্ত্রী সব পরিস্থিতিতেই সঙ্গে থেকেছে। আমি চাই সারাজীবন ও যেন এভাবেই আমার পাশে থাকে।” তবে জাতীয় সিনিয়র দলের জার্সি না পরতে পারার পিছনেও নাম না করেই ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন। বলছিলেন, “সেটি বব হাউটনের সময় ছিল। আমি ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলাম। তার আগে মোহনবাগানের হয়ে প্রায় সব ম্যাচ খেলেছিলাম, ম্যাচের সেরাও হয়েছিলাম। কিন্তু মূল দলে রাখা হল না। অন্য কেউ সুযোগ পেল। এরকম দু’বার হয়েছে। তবে বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের হয়ে আমি অনেক ম্যাচ খেলেছি।”
যেতে যেতে অবশ্য আশার কথা শুনিয়ে গিয়েছেন তিনি। বলছিলেন, “কারও কাছে গিয়ে কোনও দিন কিছু চাইনি, পারবও না কোনও দিন। তাই যা করব নিজের উদ্যোগেই। নিজের একটা দল আছে আপাতত সেটা নিয়েই কাজ করব। ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে কলকাতা লিগে দল কেনার।”
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার