অলস্পোর্ট ডেস্ক: হায়দরাবাদের গাচিবৌলি স্টেডিয়ামের লাল-নীল ফাঁকা গ্যালারির এক কোণা থেকে মাঝে মাঝেই হুঙ্কার উঠল “এইচএফস, এইচএফসি”। অতীতে ভারতীয় ফুটবলে হায়দরাবাদের একটা অবদান ছিল। তার পর তা কমতে কমতে শূন্য হয়ে যায় প্রায়। আইএসএল-এ হায়দরাবাদ এফসির হাত ধরে গত কয়েক বছরে আবার ফুটবলে ফিরছে এই শহর। স্থানীয় ফুটবলপ্রেমীরা অক্সিজেন খুঁজে পেয়েছেন। আর এখন তো বেশিরভাগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজক হায়দরাবাদ। এই মুহূর্তে সেখানে চলছে সন্তোষ ট্রফি। শনিবার আইএসএল ২০২৪-২৫-এ হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। এক কথায় জোড়া ফুটবলটেইনমেন্ট নবাবের শহর। ম্যাচও শেষ হল সমানে সমানে। ১-১ গোলে ড্র করেই ফিরতে হচ্ছে ইস্টবেঙ্গলকে। বছর শেষে এক পয়েন্টে খুশি হায়দরাবাদ।
যখন সাফল্যের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করল ইস্টবেঙ্গল তখনই ঘুরে ফিরে দলের গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারদের না থাকা বার বার বাধা হয়ে দাঁড়াল। সঙ্গে রেফারির আশীর্বাদ তো ছিলই। যা এই ম্যাচেও ফিরে এল। যেভাবে বক্সের মধ্যে ক্লেটনের গায়ে উঠে পড়ে তাঁকে আহত করলেন গোলকিপার অর্শদীপ সিং তাতে তাঁর লাল কার্ড হলেও কিছু বলার থাকত না, সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের প্রাপ্য ছিল ন্যায্য পেনাল্টি। কিন্তু কোনওটাই হল না। সৌভাগ্যবশত বড় চোটের হাত থেকে বাঁচলেন ক্লেটন। দিয়ামান্তকোসের মুখ কাটল সংঘর্ষে।
শনিবার অ্যাওয়ে ম্যাচে হায়দরাবাদ এফসির বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল অস্কার ব্রুজোঁর ছেলেরা। দুটো জয় ঝুলিতে থাকলেও, এখনও ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে জেতা হয়নি হায়দরাবাদের। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলের সামনে ছিল জয়ের হ্যাটট্রিকের লক্ষ্য। এর আগে জয়ের হ্যাটট্রিকের ম্যাচে হারতে হয়েছে। সেই হার পিছনে ফেলে আবার পর পর দুই ম্যাচ জিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দল। দুই দলই বছর শেষ করতে চেয়েছিল তিন পয়েন্টের সঙ্গেই। কিন্তু পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ থাকতে হল দুই দলকে।
ইস্টবেঙ্গলে অনেক না থাকার মধ্যে এই ম্যাচে কার্ডের জন্য ছিলেন না হেক্টর ইউয়েস্তে ও মহম্মদ রাকিপ। সঙ্গে চোটও রয়েছে রাকিপের। এই অবস্থায় দলের রক্ষণ সামলাতে কোচ ব্রুজোঁ নামিয়েছিলেন প্রভাত লাকরাকে।এছাড়া এদিন মাঝমাঠে মহেশকে বসিয়ে প্রথম দলে নিয়ে এসেছিলেন জিকসনকে। দল সাজাতে কোনও কারুকার্য করেননি ইস্টবেঙ্গল কোচ, চেনা ৪-৪-২-এ দল সাজিয়ে ছিলেন তিনি। প্রথমার্ধের ১৫ মিনিটের পর হায়দরাবাদ কিছুটা বেগ দেয় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে। ইসাকের পর পর চকিতে আক্রমণ শেষ পর্যন্ত সামলান আনোয়ার আলি বল বাইরে পাঠিয়ে। ইস্টবেঙ্গলকে প্রথমার্ধে তেমনভাবে আক্রমণে উঠতে দেখা গেল না। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য অনেকবেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে দেখা গেল তাদের। যার ফলে গোল করে এগিয়ে গেল ব্রুজোঁর দল।
ম্যাচের বয়স তখন ৬৪ মিনিট। বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পেয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কোচ হায়দরাবাদ উড়ে যাওয়ার আগের দিনই বলেছিলেন, যে ক্লেটন সিলভা এখন খেলছেন, সেটাই তাঁর সেরা ভার্সন। আর ক্লেটন কয়েক ম্যাচ আগে দাবি করেছিলেন, তাঁকে পুরো ৯০ মিনিট খেলতে দিলে তাঁর সেরাটা পাওয়া যাবে। সুযোগ পেয়ে সেই সেরাটাই এখন দিচ্ছেন তিন। এদিন এই গোলের কারিগর তিনিই। যদিও তাতে নাম লেখা থাকবে জিকসন সিংয়ের। ক্লেটনের ফ্রি কিক ক্রসবারে লেগে ফিরলে সেই বলেই লাফিয়ে জিকসন সিংয়ের অসাধারণ হেড চলে যায় গোলে। ২৬ মিনিট এই ব্যবধান ধরে রাখার পর শেষ মুহূর্তে তা হাতছাড়া করল ইস্টবেঙ্গল।
এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের সমস্যা আবারও সামনে চলে এল। হায়দরাবাদ সমতায় ফিরতে পারল ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের বদান্যতাতেই। যেভাবে ডানদিক থেকে গোলের বল তৈরি করতে করতে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে কাটিয়েই বাঁদিকে বল পেয়ে গেলেন মনোজ মহম্মদ, তার পর আর গোল করতে ভুল করেননি তিনি। আবারও জয়ের হ্যাটট্রিক করা হল না ইস্টবেঙ্গলের। ডার্বির আগে রক্ষণ নিয়ে চিন্তা বাড়ল ব্রুজোঁর। সঙ্গে গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারাও বড় সমস্যা হয়ে উঠে এল হায়দরাবাদ ম্যাচের পর। ১৩ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ১১ নম্বরেই থেকে গেল ইস্টবেঙ্গল। ১৩ নম্বরে হায়দরাবাদ।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন সিং গিল, প্রভাত লাকরা, আনোয়ার আলি, হিজাজি মেহের, লাল চুংনুঙ্গা, জিকসন সিং, সৌভিক চক্রবর্তী, নন্ধা কুমার, পিভি বিষ্ণু (নাওরেম মহেশ), ক্লেটন সিলভা, দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার