সুচরিতা সেন চৌধুরী: এই দেশ তাঁর নয়। তিনি পাঁচ বছর আগে নিজের দেশ ছেড়ে ভারতে পা রেখেছিলেন ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে। গত পাঁচ বছরে অনেক ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। দলের খারাপ পারফর্মেন্সের জন্য মুন্ডপাত করতে যেমন কেউ ছাড়েননি তেমনই ভাল ফলে প্রশংসাও পেয়েছেন। যার ফলে দীর্ঘায়িত হয়েছে তাঁর দায়িত্ব। দলের মধ্যে একাত্মতা এসেছে। প্রায় একই দল ধরে রেখেছেন দীর্ঘদিন। সেই ইগর স্টিমাচও ফিফা বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক ম্যাচে কলকাতার মাটিতে কুয়েতের বিরুদ্ধে নামার আগে সতর্ক। সঙ্গে আবেগান্বিতও। কারণ দলের সব থেকে সিনিয়র প্লেয়ারের বিদায়ী ম্যাচও এটিই। এই ম্যাচ জিতেই সুনীল ছেত্রীকে বিদায় জানানোর কথা প্রথমেই বলেছিলেন। কিন্তু এখন পুরো ফোকাস শুধুই ম্যাচে।
প্রি-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে ভর্তি কনফারেন্স রুম দেখে স্বাভাবিকভাবেই খুশি ইগর স্টিমাচ। বলছিলেন, ‘‘অনেক সাংবাদিককে দেখে খুব ভাল লাগছে। কলকাতায় খেলতে পারাটা সবসময়ই খুশির এবং ভারত অধিনায়কের এটাই শেষ ম্যাচ। আমরা সুনীলের শেষ খেলা উদযাপন করছি। কিন্তু এটা ভারতের ম্যাচ। আর তার জন্য আমরা প্রস্তুত।’’
কুয়েতের সঙ্গে ভারতের গত একবছরে তিনবার দেখা হয়েছে। সেখানে ভারতের ফল এই ম্যাচের আগে দলকে আত্মবিশ্বাসী করতে পারে। কিন্তু কোচ বলছেন, এই ম্যাচ সহজ হবে না। আগের কুয়েতের সঙ্গে এই কুয়েতের পার্থক্যও খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। তবে তাঁর দল যে তৈরি সেটাও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়ে দিলেন তিনি। স্টিমাচ বলেন, ‘‘আমরা সবকিছু করেছি। ফিটনেস, ধৈর্যের উপর অনেক কাজ করা হয়েছে যাতে শেষ বাঁশি পর্যন্ত এটা ধরে রাখতে পারে প্লেয়াররা। যার জন্য আমরা স্পোর্টস সাইকোলজিস্টের সাহায্যও নিচ্ছি। তবে আমাদের ১২তম খেলোয়াড় আপনারা (ভক্তদের উদ্দেশে)।’’
এদিকে সব সময় যেখানে বিদেশি দলের কাছে ভারত পিছিয়ে পড়ে সেটা হল শারীরিক উচ্চতা। তবে তাকে বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ ভারতীয় কোচ। তিনি বলেন, ‘‘এটি শুধুমাত্র উচ্চতা সম্পর্কে নয়। এটি ব্যক্তিগত মানের উপর নির্ভর করে। তাদের যেমন দলের গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাইকার খেলতে পারছে না তেমনই আমাদের সন্দেশ (ঝিঙ্গান) নেই।’’
তবে খেলার ৯০ মিনিট দলকে যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সেটাও মেনে নিচ্ছেন তিনি। তবে প্রথম ১১ বেছে নেওয়াটা কঠিন। তবে ছেলেদের তিনি বলেছেন, যাঁরা সুযোগ পাবে তাঁরা যেন নিজেদের উজার করে দেন। ঠিক যেভাবে সুনীল বলেছিলেন, নিজের খেলাটাই উপভোগ করে খেলতে বলেছেন তিনি, কোচও তেমনটাই চান। তিনি ভারতীয় ফুটবলের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু আগে একটি দুর্দান্ত ম্যাচের অপেক্ষায় তিনি।
তার আগে অবশ্য জানিয়ে গেলেন তিনি কতটা ভারতীয়। এই দেশকে ঘিরে তাঁর আবেগ ঠিক কতটা। বলছিলেন, ‘‘আমি বিদেশি, কিন্তু এখানে আসার পর থেকে নিজেকে ভারতীয় মনে হয়। কারণ আমার কাজ নিয়ে আমার চূড়ান্ত আবেগ রয়েছে। একজনকে আনন্দ দিতে পারলে যখন ভাল লাগে তখন আপনি যখন ১.৪ মিলিয়ন মানুষকে খুশি করার সুযোগ পান তখন তার থেকে ভাল অনুভূতি আর কিছু হতে পারে না। আমাদের আগামীর জন্য সবকিছু করতে হবে।’’
তবে যতই আবেগ থাক পেশাদারিত্বের ঊর্ধ্বে নন তিনিও। সুনীলের শেষ ম্যাচ ঘিরে যেমন আবেগ রয়েছে তেমনই তিনি এটাও জানেন তাঁর জায়গা নেওয়ার জন্য প্লেয়ার তৈরি রাখতে হবে। কারণ কুয়েত ম্যাচ জিতে গেলে এর পরের পর্ব অনেক কঠিন হতে চলেছে ভারতীয় ফুটবল দলের জন্য। সেটানে সুনীলের বিকল্প তাঁকে তো নিশ্চিত করতেই হবে। সেই প্রসঙ্গে অবশ্য তিনি আত্মবিশ্বাসী। বলছিলেন, ‘‘কে হবে সুনীলের পরিবর্ত সেটা আপনারা দেখতেই পারবেন। আপনি ইতিমধ্যে আগেই কুয়েত ম্যাচে একটি আভাস পেয়েছেন যেখানে সুনীল খেলেনি।’’
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার