অলস্পোর্ট ডেস্ক: কুয়েতের মাঠে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে কুয়েতকেই হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব অভিযান শুরু করল ভারত। বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপ ২০২৬ ও এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর বাছাই পর্বের শুরুতেই ১-০-য় জিতে প্রথম ম্যাচেই তিন পয়েন্ট অর্জন করল তারা। কুয়েত সিটির জাবের আল আহমাদ স্টেডিয়ামে এ দিন মনবীর সিংয়ের গোলে বহু প্রতীক্ষিত জয় পান সুনীল ছেত্রীরা। এর ফলে এশীয় অঞ্চলের বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার দৌড়ে কিছুটা এগিয়ে গেল ভারত।
এ দিন জাবের আল আহমাদ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ভারতীয় সমর্থকদের জমায়েত ছিল আশাতীত। যখনই ভারতীয় ফুটবলাররা আক্রমণে ওঠেন, তখনই সমর্থকদের গর্জনে কেঁপে ওঠে সারা স্টেডিয়াম। এমনিতেই এ দিন শুরু থেকেই উজ্জীবিত ফুটবল খেলে ভারত। তার ওপর সমর্থকদের এই গর্জন তাদের আরও তাতিয়ে তোলে এবং ৯৭ মিনিটের (স্টপেজ টাইম-সহ) বেশির ভাগ সময়ই দাপুটে ফুটবল খেলে তারা। সারা ম্যাচে একাধিক সুযোগ তৈরির পর ৭৫ মিনিটের মাথায় মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের তারকা মনবীর সিংয়ের অসাধারণ গোলে জয় পায় ভারত।
এ দিন শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার প্রবণতা দেখা যায় ভারতের পারফরম্যান্সে। ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে কুয়েতও আক্রমণাত্মক ফুটবলের প্রবণতা নিয়ে মাঠে নামে। ফলে দুই দলের ফুটবলের লড়াই শুরু থেকেই জমে ওঠে।
ভারত তাদের প্রথম ইতিবাচক সুযোগটি তৈরি করে নেয় ১৯ মিনিটের মাথায়, যখন ডানদিকের উইং দিয়ে ওঠা নিখিল পূজারির ক্রস থেকে বক্সের মাথা থেকে গোলের উদ্দেশ্যে শট নন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী, যা বারের সামান্য ওপর দিয়ে গিয়ে গোলের ছাদে পড়ে।
আক্রমণে সুনীলকে সামনে রেখে মনবীর ও মহেশকে তাঁর পিছনে রেখে খেলা শুরু করে ভারত। তাঁদের পিছনে ছিলেন সহাল, সুরেশ ও লালেঙমাউইয়া। রক্ষণে আকাশ ও সন্দেশের দু’পাশে ছিলেন নিখিল ও রাহুল। কার্যত ৪-৩-২-১ ছকে দল সাজান ভারতের কোচ ইগর স্টিমাচ।
শুরু থেকেই ভারত গতিময় ও উজ্জীবিত ফুটবল খেলায় কুয়েতের ফুটবলারদের কিছুটা হলেও দিশাহারা হয়ে উঠতে দেখা যায়। তাঁদের দুই ফরোয়ার্ড সাবেইব আলখলদি ও মহম্মদ আবদুল্লা প্রথম আধঘণ্টায় কার্যত কোনও শট গোলে রাখতে পারেননি। ভারতকে তাদের চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে দেখা যায় এই আধঘণ্টায়। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা শুরু করে কুয়েত। তবে নিজেদের গোল এরিয়ায় তাদের ঢুকতে দেয়নি ভারত।
বল দখলের লড়াইয়েও ভারত এগিয়ে ছিল এদিন। মাঝমাঠও নিয়ন্ত্রণ করেন মূলত সহালরাই। অনিরুদ্ধ থাপা, লিস্টন কোলাসো, উদান্ত সিংরা রিজার্ভ বেঞ্চে থাকলেও ভারতের মাঝমাঠ ও আক্রমণ ছিল যথেষ্ট সচল এবং রক্ষণও ছিল তৎপর।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কুয়েত তিন পরিবর্ত খেলোয়াড় নামায় নিজেদের আক্রমণের ধার বাড়ানোর জন্য। দ্বিতীয় মিনিটেই ফ্রি কিক থেকে গোলে হেড করেন ডিফেন্ডার ফাহাদ আলহাজেরি। কিন্তু সেই হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কুয়েতের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ভারতীয় রক্ষণ আরও তৎপর হয়ে ওঠে। এই সময়ে ভারতের প্রায় হাফ ডজন ফুটবলারকে নিজেদের গোলের সামনে দেখা যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা মিনিট দশেক গড়ানোর পর ফের ক্রমশ আক্রমণে ফেরা শুরু করে ভারত। ৫৭ মিনিটের মাথায় ডান দিক থেকে মনবীর গোলের সামনে ক্রস পাঠালেও তা নেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। ৬০ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের বক্সের বাঁ দিক থেকে মহেশের নেওয়া ফ্রি কিক সুনীলের পায়ে আসার আগেই ক্লিয়ার হয়ে যায়।
স্টিমাচ তাঁর প্রথম পরিবর্তনটি করেন ৬৩ মিনিটে, যখন মহেশের জায়গায় নামান লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতেকে। উইং দিয়ে আক্রমণের ধার বাড়ানোর জন্যই সম্ভবত তাঁকে নামানো হয়। কিন্তু কুয়েতের পরিকল্পনা ছিল অন্যরকম। তারা বল দখলে রেখে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের পায়ে রেখে হঠাৎ আক্রমণে ওঠার ছক কষে দ্বিতীয়ার্ধে নামেন। তবে ভারতীয় ফুটবলাররা তাদের সেই পরিকল্পনা কার্যত ভেস্তে দেন দ্রুত গতিতে আক্রমণ থেকে রক্ষণে ওঠা-নামা করে।
প্রতি আক্রমণের অপেক্ষায় থাকা ভারত ৭৫ মিনিটের মাথায় আকাঙ্খিত গোলটি পেয়ে যায় ছাঙতে ও মনবীরের যৌথ উদ্যোগে। বাঁ দিক দিয়ে দ্রুত গতিতে উঠে কুয়েতের বক্সে ঢুকে পড়েন ছাঙতে। গোলের সামনে থাকা মনবীরকে নিখুঁত ক্রস দেন তিনি, যা ফিনিশ করতে কোনও ভুল করেননি মনবীর (১-০)। দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি।
কিন্তু এই গোলের চার মিনিটের মধ্যেই তা শোধ করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান মহম্মদ আবদুল্লা। বাঁ দিক দিয়ে ভারতের বক্সে ঢুকে গোলে কোণাকুনি শট নিতে যাওয়ার আগেই তাঁকে বাধা দেন আকাশ মিশ্র এবং তার পরেই বলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন গুরপ্রীত। ৮২ মিনিটের মাথায় কোলাসো ও থাপা নামেন মনবীর ও সহালের জায়গায়। ব্যবধান বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেন স্টিমাচ।
ম্যাচের শেষ দশ মিনিটের আক্রমণের তীব্রতা বাড়ায় ভারত। কিন্তু ৮৭ মিনিটের মাথায় কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল শোধের সুযোগ পেয়ে যান মহম্মদ আবদুল্লা। কিন্তু গোলকিপার গুরপ্রীত ও ভারতীয় ডিফন্ডারদের তৎপরতায় তিনি ফের ব্যর্থ হন।
পিছিয়ে থাকা কুয়েতের আশা আরও শেষ হয়ে যায় ফয়জল আল হারবি পরপর দুটি হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায়। স্টপেজ টাইমে ছাঙতের বুকে পা দিয়ে আঘাত করার অপরাধে লাল কার্ড দেখেন আল হারবি। এই ঘটনার মিনিট পাঁচেক আগেই অনিরুদ্ধ থাপাকে অবৈধভাবে আঘাত করে প্রথম হলুদ কার্ড দেখেছিলেন তিনি। এর পরে ভারতের জয় ছিল শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিং সান্ধু (গোল), রাহুল ভেকে , সন্দেশ ঝিঙ্গন, আকাশ মিশ্র, নিখিল পূজারি, সুরেশ ওয়াংজাম (রোহিত কুমার), লালেঙমাউইয়া, সহাল আব্দুল সামাদ (অনিরুদ্ধ থাপা), মহেশ সিং নাওরেম (লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে), মনবীর সিং (লিস্টন কোলাসো), সুনীল ছেত্রী (অধি) (রাহুল কেপি)।
(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার