অলস্পোর্ট ডেস্ক: ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ ২০২৩ ফাইনালে কলিঙ্গ নগরী ভুবনেশ্বর মাতিয়ে দিল ভারতীয় ফুটবল দল। গত এক মাস ধরে তারা এই শহরের অতিথি। এতদিন ধরে যে আতিথেয়তা পেয়েছেন সুনীল ছেত্রীরা, রবিবার সন্ধ্যায় তার প্রতিদান হিসেবে শহরবাসীকে এক যথার্থ উপহার দিল তারা। ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের চেয়ে ভাল উপহার আর কী হতে পারে?
ফিফা ক্রমতালিকায় তাদের চেয়ে দু’ধাপ এগিয়ে থাকা লেবাননকে ফাইনালে ২-০ গোলে হারিয়ে চতুর্দেশীয় টুর্নামেন্টের খেতাব জিতে নিল ভারত। ৪৬ বছর পরে লেবাননকে ফুটবলের লড়াইয়ে হারাল ভারত। রবিবার সন্ধ্যায় প্রতিপক্ষকে কার্যত ছাড়খাড় করে দিয়ে কাপ জিতে নিল ভারত। দ্বিতীয়ার্ধে সুনীল ছেত্রী ও লালিয়ানজুয়ালা ছাংতের গোলে ভারত এই খেতাব অর্জন করল।
এই নিয়ে টানা ছয় ম্যাচে কোনও গোল খেল না তারা। যে নজির ভারতীয় ফুটবল দল শেষবার গড়েছিল গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে। সেই নজির ফের গড়ল সুনীলের দল। এই অসাধারণ কৃতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পুরস্কার হিসেবে টুর্নামেন্টের ‘হিরো’-র সন্মান দেওয়া হয় দলের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গনকে।
অনিরুদ্ধ থাপা, সহাল আব্দুল সামাদ, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, সুনীল ছেত্রী, আশিক কুরুনিয়ান, নাওরেম মহেশ সিং-রা এক দলে থাকলে কতটা আগ্রাসী ফুটবল খেলতে পারে ভারতীয় দল, সেটাই এ দিন বুঝে নিলেন সারা দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। বিশেষ করে প্রথমার্ধে আক্রমণে তেমন সাফল্য না পাওয়া সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধে যে ভাবে তারা লড়াইয়ে ফিরে আসে, তার কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।
প্রথমার্ধে যেখানে একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি ভারত, সেখানে এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে চার-চারটি শট গোলের লক্ষ্যে ছিল ভারতের এবং তার মধ্যে দু’টিতে গোল হয়। ৪৬ মিনিটে প্রথম গোল করেন সুনীল ও ৬৬ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করেন ছাঙতে। নিজেদের দক্ষতায় লেবাননের মতো প্রতিপক্ষ, যারা শারীরিক ভাবে এগিয়ে, তাদেরও পিছনে ফেলে দেয় ভারত। প্রথম গোলে অ্যাসিস্ট করে ও দ্বিতীয় গোলটি করে ম্যাচের ‘হিরো’-র খেতাব জিতে নেন লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, যিনি এ দিন প্রতিপক্ষের কাছে রীতিমতো ত্রাস হয়ে ওঠেন।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হল ভারত। প্রথম বার, ২০১৮-য় চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। পরের বছর এই ট্রফি নিয়ে যায় উত্তর কোরিয়া। এদিন ফাইনালে গত ম্যাচের দলে একটি পরিবর্তন করেন তিনি। উদান্ত সিংয়ের জায়গায় ফিরে আসেন সুনীল ছেত্রী। ৪-৩-৩ ছকে সুনীলের সঙ্গে শুরু করেন লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে ও আশিক কুরুনিয়ান।
ছ’মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢোকার সময় আশিক কুরুনিয়ানকে পিছন থেকে বাধা দেন ফারান এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আশিক। ভারতীয়রা পেনাল্টির জোরালো আবেদন করেন। এমনকী কোচ স্টিমাচও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু তাদের আবেদন সরাসরি নাকচ করে দেন রেফারি। যদিও রিপ্লে-তে দেখা যায়, বক্সে ঢোকার ঠিক আগে বাধা দেওয়া হয় আশিককে।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের প্রথম গোলমুখী শটেই প্রতিপক্ষের জালে বড় জড়িয়ে দেয় ভারত, সেই সুনীল ছেত্রীর গোলে। দেশের হয়ে সুনীলের ৮৭ নম্বর গোলটি যতটা দর্শনীয়, ততটাই দর্শনীয় ছিল গোলটি যে ভাবে তৈরি করেন লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে। ডানদিকের উইং দিয়ে ওঠা ছাঙতেকে ব্যাক হিল করে যে বল দেন নিখিল পূজারি, সেই বল ধরে বক্সে ঢুকে গোলের সামনে সুনীলকে ক্রস দেন ছাঙতে। তিন ডিফেন্ডার তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারেননি। তীব্র গতিতে ছুটে এসে গোলে ছাঙতের দেওয়া বল গোলে ঠেলতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি ভারত অধিনায়ক (১-০)।
সুনীল ছেত্রী গোল করায় যতটা ক্ষিপ্র, গোল তৈরিতেও ততটাই তৎপর। ৬৬ মিনিটের মাথায় সেটাই প্রমাণ করেন তিনি। প্রতিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের সামনে থেকে বাঁ দিকে মহেশকে বল পাঠান তিনি। বক্সের বাঁ দিক থেকেই গোলে জোরালো, কোণাকুনি শট নেন ইস্টবেঙ্গল তারকা। যা গোলকিপার সাবে আটকালেও তাঁর হাত থেকে বল ছিটকে বেরিয়ে আসে এবং ছ’গজের বক্সের সামনে থেকে ওই বলই মুহূর্তের মধ্যে জালে জড়িয়ে দেন ছাঙতে (২-০)। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ২৪ মিনিট আগে দ্বিতীয় গোল খাওয়াটা বড় ধাক্কা ছিল লেবাননের কাছে।
ম্যাচের সেরা ফুটবলার ছাঙতে বলেন, “দারুন লাগছে দলকে ট্রফি জেতাতে পেরে। দলের সতীর্থরা অসাধারণ। ওদের জন্যই যথেষ্ট স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে পেরেছি। আমরা আজ যথেষ্ট শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলেছি। বিরতিতে কোচ আমাদের বলে দেন, যে রকম খেলছ, সে রকমই খেলে যাও। আমরা আমাদের স্বাভাবিক ছন্দেই দ্বিতীয়ার্ধে খেলেছি এবং সাফল্য পেলাম”।
অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী বলেন, “গত ম্যাচেই আমরা কোচের কাছ থেকে ঘুম ভাঙানোর বার্তা পেয়েছিলাম। সেই থেকেই আমরা নিজেদের তৈরি করা শুরু করি। আমাদের কোচিং স্টাফ প্রত্যেককেই বলে দিয়েছেন প্রত্যেককে উন্নতি করতে হবে। আমরা করছি। এই জয়ই তার প্রমাণ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এতগুলো ম্যাচে ক্লিন শিট রাখা। আমরা যে কতটা পরিশ্রম করছি, এ তারই প্রমাণ”।
ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিং সান্ধু (গোল), আনোয়ার আলি, সন্দেশ ঝিঙ্গন, আকাশ মিশ্র, নিখিল পূজারি, অনিরুদ্ধ থাপা, জিকসন সিং (রোহিত কুমার), সহাল আব্দুল সামাদ (রহিম আলি), লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে (নন্দকুমার শেখর), সুনীল ছেত্রী (শুভাশিস বোস), আশিক কুরুনিয়ান (নাওরেম মহেশ সিং)।
(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার