অলস্পোর্ট ডেস্ক: ফিফা বিশ্বকাপ ও এএফসি কোয়ালিফাইংয়ে কাতার বনাম ভারত ম্যাচ লেখা থাকবে বিশ্ব ফুটবলের লজ্জার ইতিহাসে। লজ্জা রেফারিংয়ের, লজ্জা কাতারেরও। স্পোর্টসম্যান স্পিরিটকে মাটিতে মিশিয়ে গোলের উৎসবে মাতা কাতার ফুটবলারদের জন্য ধিক্কার ছাড়া আর কিছুই থাকতে পারে না। ৭০ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকা ভারতীয় ফুটবল দলকে যেভাবে আটকানো হল তাতে ফুটবলের স্পিরিট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দুরন্ত খেলা একটা দলকে এভাবে দমিয়ে দেওয়ার কোনও ক্ষমা হতে পারে না।
ভারতের জন্য এই ম্যাচ ছিল মাস্ট উইন। ঘরের মাঠে সুনীল ছেত্রীর বিদায়ী ম্যাচে কুয়েতের বিরুদ্ধে জিতলেই এশিয়ান কাপ নিশ্চিত হয়ে যেত ভারতের এবং বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বের তৃতীয় ধাপেও পৌঁছে যেতে পারত। কিন্তু সেদিন সহজ ম্যাচ কঠিন করে ড্র করেছিল ভারত। আর মঙ্গলবার কঠিন ম্যাচকে নিজেদের দখলে নিয়েও রেফারির ভয়ঙ্কর ভুলে ম্যাচ হারতে হল। আত্মবিশ্বাসটাই হারিয়ে ফেলল ৩-এর বিরুদ্ধে ১২১ নম্বরে থাকা দল।
সুনীল ছেত্রী পরবর্তী সময়ে ভারতীয় ফুটবল দলকে খেলতে দেখলে আশ্বস্ত হবেন অতি বড় সমালোচকও। যাঁরা সুনীল ছেত্রী অবসর নেওয়ায় গেল গেল রব তুলেছিলেন তাঁদের জন্য এটা যেন জবাব। তাও আবার কাতারের বিরুদ্ধে, কাতারের মাটিতে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে লড়াই দিল ইগর স্টিমাচের ছেলেরা তাতে ঘরের মাঠে কুয়েতের বিরুদ্ধে গোল শূন্য ড্র ম্যাচের পর যতটা ক্ষুব্ধ ছিলেন কোচ তার অনেকটাই হয়তো ভুলে যাবেন। এদিন কোনও একজনকে কৃতিত্ব দেওয়া যাবে না, কেউ বেশি কেউ কম, নিজেদের উজার করে দিলেন ভারতের ছেলেরা। গোলের নিচে অধিনায়কত্বের ব্যান্ড পরে আরও যেন দায়িত্বশীল হয়ে উঠলেন গুরপ্রীত সিং সান্ধু।
কুয়েত ম্যাচে ভারতীয় গোলের নিচে দাঁড়িয়ে তিনিই বাঁচিয়েছিলেন। এদিনও শুরু থেকে কাতারের পর পর আক্রমণ বাঁচিয়ে গেলেন। আর যেটা তিনি পারলেন না তাঁর জায়গায যেন গোল সামলালেন মেহতাব সিং। এদিন ভারতীয় রক্ষণের ত্রাতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। একাধিক নিশ্চিত গোল বাঁচালেন। গোললাইন সেভ করলেন। আক্রমণে পিছন থেকে নেতৃত্বও দিলেন। কখনও ব্রেন্ডন তো কখনও রহিম আলি, কখনও ছাংতে তো কখনও জয় মনভীর সিং। দাপটের সঙ্গে , কাতারের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে গেলেন। কিন্তু দুরন্ত খেলেও হতাশায় ডুবে যেতে হল ভারতীয় ফুটবলকে।
লড়াই পাল্টা লড়াইয়ে শুরু থেকে জমে ওঠা একটা ম্যাচে যেভাবে ৭০ মিনিট পর্যন্ত দৃষ্টিন্দন ফুটবলের নজির রেখেছিল তা এক ধাক্কায় নষ্ট হয়ে গেল। প্রথমার্ধের সমানে সমানে লড়াইয়ের শেষটা লেখা হয়েছিল ভারতেরই নামে। প্রথমার্ধ শষের ঠিক আগে যখন ব্রেন্ডনের মাপা পাস থেকে কাতার গোলে বল পাঠালেন ছাংতে। ঠিক এক মিনিট আগেই এমন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু তা অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়। তার আগেও সুযোগ এসেছিল ভারতের সামনে। দ্বিতীয়ার্ধ ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই মাঠে নেমেছিল আত্মবিশ্বাসী ভারতীয় ফুটবল দল।
যেখানে প্রথমার্ধ শেষ করেছিল সেখান থেকেই দ্বিতীয়ার্ধের হাল ধরেন মেনস ইন ব্লুরা। কিন্তু অঘটন তো অদৃশ্য। লিখে রেখেছিল ভারতের কপালে। যা বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে লেখা থাকবে কালো অক্ষরে। যেভাবে কাতারের ইউসেফ আইমেন লাইনের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বল এনে ভারতের গোলে ঢোকালেন এবং রেফারি গোল দিলেন তাতে রেফারির মান নিয়েও প্রশ্ন উঠবে বৈকি। প্রশ্ন উঠবে। বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক ম্যাচে কেন ‘ভার’ নেই? এর পর গুরপ্রীত, সাহলরা রেফারি, লাইন্স ম্যানকে শত চেষ্টা করেও বোঝাতে পারেননি। আর সেখানেই হেরে গেল ভারত। ভারত হারল অন্যের ভুলের কাছে। অন্যের ভুলের খেসারত দিয়ে সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল ভারতীয় ফুটবল দলের। শেষ বেলায় আহমেদ আল-রউইয়ের গোলে ম্যাচ জিতে নিল কাতার।
ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিং সান্ধু, রাহুল ভেকে, আনোয়ার আলি, মেহেতাব সিং, জয় গুপ্তা, সুরেশ সিং, মনভীর সিং (বিক্রমপ্রতাপ সিং), ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ (সাহাল আব্দুল সামাদ), রহিম আলি (লিস্টন কোলাসো), জিকসন সিং, লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার